শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

আবারো ১৩৩ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে নারী!

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১৩৩ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে আবারো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এক নারী। তার নাম পারুল আক্তার (২২)। শুক্রবার বিকেল ৩টায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার ডেমরা ও সদর দফতরের দুইটি ইউনিটের কর্মীরা সোয়া দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) দিয়ে পারুলকে টাওয়ার থেকে অচেতন অবস্থায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ টু মানিকনগর দুই লাখ ৩০ হাজার (২৩০ কেভি) ভোল্টের সঞ্চালনের একটি সাইট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে।
ওই নারীকে টাওয়ার থেকে নিচে কয়েক হাজার উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। উৎসুক জনতার অভিযোগ, বৈদ্যুতিক টাওয়ারের নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় দ্বিতীয় বারের মতো কোনো নারী আবারো টাওয়ারে উঠে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে বাধ্য হয়।
প্রতক্ষ্যদশী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে পারুল আক্তার নামে এক নারী ও সিদ্ধিরগঞ্জ টু মানিকনগর দুই লাখ ৩০ হাজার (২৩০ কেভি) ভোল্টের সঞ্চালন লাইনের সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইলের ৮নং টাওয়ারে আশপাশে ঘুরতে থাকে। সুযোগ বুঝে পারুল বিকেল ৩টার সময় উঠে পড়ে ১৩৩ ফুট উঁচু টাওয়ারে।

187695_1
স্থানীয় লোকজন প্রাথমিকভাবে পারুলকে নামাতে চেষ্টা করলে তিনি আরো দ্রুত টাওয়ারের উপরে উঠতে থাকে। শুরু হয় হৈ চৈ। লোকজন হতভম্ব হয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আশপাশ থেকে হাজার হাজার উৎসুক জনতা টাওয়ারের আশপাশে ভিড় করে। প্রথমে ছুটে আসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার টহল পুলিশ। টহল পুলিশের এসআই শামীম হোসেন জানায়, বিকেলে পৌনে ৪টায় এসে দেখি এক নারী বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে হাঁটাহাঁটি করছে। পরে আমি প্রথমে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসেকে ঘটনাটি অবহিত করি। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডেমরা স্টেশনের কর্মকর্তা সোহেলের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে একটি ইউনিট ছুটে আসে।

বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর থেকে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। এরপর শুরু হয় পারুলকে টাওয়ার থেকে নামানোর নানা কৌশল। এ সময় টাওয়ারের নিচে হাজার হাজার জনতা ওই নারীকে নিচে নামানোর অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকে। সদর দফতরের স্টেশনের অফিসার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে পারুলকে অচেতন অবস্থায় মাটিতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। পরে দ্রুত পারুলকে শিমরাইলের সুগন্ধা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে সুগন্ধা হাসপাতালের ডাক্তার নিলুফা ইয়াসমিন জানায়, টাওয়ারে উঠা ওই নারীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। এখন তিনি সুস্থ আছেন। টাওয়ারে উঠা পারুলের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর পুটিয়া থানার কুটিয়ার পাড়ার বাসের ছড়ায়। তার স্বামী ইয়াদ উল্ল্যাহ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো রোড একটি পোশাক শ্রমিক। পারুলের শ্বাশুড়ি সাজেদা বেগম জানায়, পারুলের মাথায় সমস্যা রয়েছে। দেড় মাস আগে তার ছেলে ইয়াদ উল্ল্যা তার স্ত্রী পারুল, তার একমাত্র ছেলে আজিজুল (৩) ও আমাকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুরের আব্দুর রব মিয়ার বাড়িতে আসে। পারুলের মাথায় সমস্যার কারণে বাড়িওয়ালা তার বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন। এরপর পুরো পরিবার রাজশাহী যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে আসাছিল।

পথিমধ্যে পারুল একটি পুকুরে নেমে পড়ে। সেখানে থেকে তাকে বুঝিয়ে পানিতে তুলে শিমরাইল মোড়ে নিয়ে আসা হয়। এক পর্যায়ে পারুল উচু টাওয়ার উঠে পড়ে। এতো ঘটনায় তারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তার ছেলে ইয়াদ উল্ল্যা পালিয়ে যায়। পিজিসিবি সিদ্ধিরগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর দুই লাখ ৩০ হাজার (২৩০ কেভি) ভোল্টের সঞ্চালন লাইনটির বৈদ্যুতিক টাওয়ারটি ৩৫ মিটার উঁচু (১৩৩ ফুট)। এ সঞ্চালন লাইনের মানিকনগর থেকে বঙ্গভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আমরা মেয়েটির টাওয়ারের খবরটি বিকেলে ৪টার সময় পেয়েছি। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে এসে তিনজন বিদ্যুৎ কর্মীকে টাওয়ারে উঠিয়ে মেয়েটিকে কিছুটা বিপদমুক্ত করে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আয়েশা আক্তার তমা নামে এক তরুণী সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী নাভা-ভুঁইয়া এলাকার আরেকটি সঞ্চালন লাইনের ১২০ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাকেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টিটিএল দিয়ে সোয়া পাঁচ ঘণ্টা পর তাকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়।উৎসঃ জাগো নিউজ