শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

জিকা ভাইরাসমুক্ত বাংলাদেশ !

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬

zika virus
জিকা ভাইরাস নিয়ে দিনে-দিনে আতঙ্ক বেড়ে চললেও বাংলাদেশ জিকা ভাইরাসমুক্ত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরও জিকা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে জিকা ভাইরাস সংক্রমণকারী এডিস মশার নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকার পর সর্বশেষ ইউরোপে এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চল জিকার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ভারতের কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু ও পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় শহরগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিস্থিতি এখনও আমাদের অনুকূলে রয়েছে। রোগ ছড়ানোর মৌসুম এটি নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, যদি বাংলাদেশ থেকে ওখানে কেউ যান এবং গর্ভবতী হয়ে ফিরে আসেন, তাহলেই কেবল ভয়ের কারণ থাকতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য-বিধিমালা ২০০৫ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি কমিটির বর্ধিত এক বৈঠকে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে নৌ, বিমান ও স্থলবন্দরগুলোয় নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

zika

জিকা ভাইরাস

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন সংস্থাসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইওএম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক আবুল খায়ের মো. শামসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা ২০০৫ অনুয়ায়ী যখন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যখন কোনও নতুন রোগ নিয়ে জরুরি সতর্কতা জারি করে, তখন সেই রোগ নিয়ে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেই মোতাবেক আমরা কাজ করি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে। সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর জরুরি ইমেইল করে প্রতিটি জেলা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে। তারা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন যত সীমান্ত বন্দরে সতর্কতা জারি রয়েছে, সেগুলোকে আরও জোরদার করে। যেন কোনও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালা ২০০৫ সম্পর্কিত জাতীয় কারিগরি কমিটি জিকার সংক্রমণ রোধ করতে নীতিমালা ও নির্দেশিকা তৈরির কাজও দ্রুত শুরু করবে। যেহেতু এটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরুরি অবস্থা সেজন্য আমাদের কাজ করতে হলে কিছু ফান্ডামেন্টাল ডকুমেন্টস প্রয়োজন। যেমন জিকা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ করতে জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম শুরু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মুখপাত্র ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে এমন কথা না বলা, যেন জিকা নিয়ে অহেতুক কোনও রকম বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আবুল খায়ের মো. শামসুজ্জামান আরও বলেন, বাংলাদেশে এডিস মশা রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যেদিন জিকা নিয়ে জরুরি সতর্ককবার্তা ঘোষণা করে, সেদিনই আমাদের কীট কৌশলীদলকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার নমুনা সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছি। তারা এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সে সব এডিস মশার ভেতরে জিকা ভাইরাস রয়েছে কি না, সেটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে শনাক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে জনগণকে জানাতে পারব। তবে, এখন পর্যন্ত আমাদের রেকর্ডে জিকা ভাইরাসে শনাক্তকৃত কোনও রোগী নেই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিকা ভাইরাস ডেঙ্গুর মতো এক ধরনের জ্বর। লক্ষণ হিসেবে শরীরে জ্বর থাকে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে। বিশেষ করে হাত ওপায়ের জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় এবং গায়ে ফুসকুড়ি থাকে।

উল্লেখ্য, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর চিকিৎসা না পাওয়া যায় না। কারণ, জিকা ভাইরাসের এখনও কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। গবেষকরা বলছেন, ব্যবহার উপযোগী জিকার প্রতিষেধক তৈরি করে সেটি বাজারে ছাড়তে এখনও দশ বছর সময় লাগতে পারে।ৎ
উৎস: বাংলা ট্রিবিউন