বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

পরীক্ষার দেড় ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্রের ছবি মেসেঞ্জারে!

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্রের ছবি পাওয়া যায়, যা হুবহু মিলে গেছে পরীক্ষার্থীদের হলে সরবরাহ করা প্রশ্নের সঙ্গে। কিছু শিক্ষার্থী জানায়, তারা আগের পরীক্ষায়ও এভাবে প্রশ্ন পেয়েছিল।031414Pic-16

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রশ্ন আদান-প্রদানের তথ্য সংগ্রহ করেছে কালের কণ্ঠ। এতে দেখা যায়, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের ছবিটি এসেছে গতকাল সকাল ৮টা ৩৬ মিনিটে। সেটির ‘স্ক্রিনশট’ কালের কণ্ঠের কাছে সংরক্ষিত আছে। স্ক্রিনশটে ছবিটি পাঠানোর সময় কখন তা দেখা যায়, কারণ মেসেঞ্জারে একটি বার্তা কখন পাঠানো হয় তা পাশেই উল্লেখ থাকে। দুপুরে পরীক্ষার্থীরা বের হওয়ার পর যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়, তার ছবিও কালের কণ্ঠ সংরক্ষণ করে।

এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে কিছু শিক্ষার্থী। তারা জানিয়েছে, একটি স্কুলে একজন বা দুজন প্রথম প্রশ্ন পাচ্ছে। এরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরাও প্রশ্ন এনে দিচ্ছেন তাঁদের সন্তানদের।

কালের কণ্ঠ ফেসবুক মেসেঞ্জারে যে প্রশ্নটি পেয়েছে, তা ‘খ’ সেটের এবং হলে সরবরাহ করা প্রশ্নটিও ‘খ’ সেটের। উভয় প্রশ্নপত্রের প্রথম প্রশ্নটি থেকে শুরু করে ১৫ নম্বর প্রশ্ন পর্যন্ত হুবহু এক। এমনকি প্রশ্নের ছাপানোর ধরনও পুরোপুরি মিলে যায়। আসল প্রশ্নে যেভাবে বিষয় কোড, সেট, পরীক্ষার নাম, বিষয়ের নাম, নম্বর বণ্টন ইত্যাদি লেখা ছিল, ঠিক সেভাবেই লেখা ছিল মেসেঞ্জারে পাওয়া প্রশ্নটিতে। মূলত পরীক্ষার হলে সরবরাহ করা প্রশ্নের ছবিই পরীক্ষা শুরুর আগে সকালে পাওয়া গিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপনার কাছেই এ বিষয়টি প্রথম শুনলাম। আমি অনেক সাংবাদিকের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁরা বলেছেন এখন পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের মতো খারাপ সংবাদ তাঁরা শোনেননি। আমাদের দেখতে হবে আসলেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি না।’ তিনি বলেন, ‘আপনার দাবির সত্য-মিথ্যা আমি কিছুই বলছি না। তবে তথ্য পেলে আমরা খতিয়ে দেখব। আগামী পরীক্ষাগুলোতে সন্দেহজনক কেন্দ্রে অভিযান চালাব।’

এবার প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। পরীক্ষার প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগে শুধু একবারই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ মেনে সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা নেই। এখন অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রশ্ন ছাপা হয়। খুব বেশি লোকের এ প্রশ্ন দেখার সুযোগ থাকে না। আর দেখলেও তারা এত কম সময় পায় যে একটি প্রশ্ন মুখস্থ করারও সুযোগ থাকে না। বিজি প্রেস থেকে সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্র জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, প্রশ্নপত্র এখন আর রাতে ফাঁস হচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে সকালে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগে। কিছু শিক্ষার্থীর কাছে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রশ্ন চলে আসে। এরপর ঘণ্টাখানেক সেই প্রশ্নের সমাধান করে তারা পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে হলে প্রবেশ করে। প্রশ্নপত্র সমাধান করার জন্য তারা বই ও অন্যান্য গাইড বই নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পরীক্ষার হলের আশপাশে অবস্থান নেয়।
উৎস: কালেরকন্ঠ