বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

চুলার আগুনে নিঃশেষ একটি পরিবার

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬

নিউজ ডেস্ক: বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল প্রকৌশলী শাহনেওয়াজের (৪৫) জীবন। তিন ছেলে আর স্ত্রীকে ঘিরেই তার গোছানো সংসার। ছোট ছেলে জারানের বয়স মাত্র ১৪ মাস। তার আধো আধো বোলে অফিস শেষে কেটে যেতো যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি।

তিন ছেলেই এক সময় পরিবারের না পাওয়াগুলো পূর্ণতায় ভরে দেবে এমন স্বপ্নই হয়তো বুনেছিলেন শাহনেওয়াজ দম্পতি। তবে চুলার গ্যাসের লেলিহান শিখা সেই স্বপ্নগুলো মুহূর্তে নিঃশেষ করে দিয়েছে।download download (1) download (2)

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর বাড়ির ভাড়া করা নতুন ফ্ল্যাটে উঠেন মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ। শুক্রবার ভোরে ওঠেন তিনি। ছোট ছেলে জারানকে কোলে নিয়ে খাবার ঘরে পায়চারী করছিলেন। দুই কক্ষের ফ্ল্যাটটির একটিতে বড় দুই ছেলে- সারলিন (১৫) আর জারিফ (৯) তখনও গভীর ঘুমে।

স্ত্রী সুমাইয়া (৩৫) প্রতিদিনের মতো রান্নাঘরে যান খাবার তৈরির জন্য। আর রান্নাঘরের চুলায় আগুন জ্বালাতে গিয়েই ঘটে যায় দুঃস্বপ্নের ঘটনাটি। গ্যাসের লাইনের বিস্ফোরণে সৃষ্ট লেলিহান শিখায় ছেয়ে যায় ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি। দগ্ধ হন তিন সন্তানসহ বাবা-মা। মুহূর্তেই ভস্মীভূত শাহজাহানের সব স্বপ্ন আর আনন্দে ভরা সংসার।

আগুনে শাহনেওয়াজের শরীরের ৯৫ শতাংশ, স্ত্রী সুমাইয়া বেগমের ৯০ শতাংশ, ছেলে সারলিনের ৮৮ শতাংশ, জারিফের দুই হাত ও দুই পা এবং জারানের ৭৪ শতাংশ পুড়ে যায়।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুনে পোড়ার কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে শাহনেওয়াজের দুই ছেলে- সারলিন ও জারান। শাহনেওয়াজ আর সুমাইয়ারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

শাহনেওয়াজের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, ভোরে একটি বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। দরজা খুলে দেখা যায়, পাশের ফ্ল্যাটে আগুন ধরেছে। শরীরে আগুন নিয়ে ছটফট করতে করতে বের হয়ে আসছে পরিবারের সদস্যরা।

প্রথমে তাদের উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিলে তারা দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় শাহনেওয়াজের স্বজন ও পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বাড়িওয়ালাকে দায়ী করেছেন। তারা জানান, বাড়ির গ্যাস লাইনে সমস্যা ছিল। এ বিষয়ে বাড়িওয়ালাকে বলেও সুরাহা হয়নি। আর এই কারণেই দুর্ঘটনায় নিঃশেষ একটি পরিবার।

বার্ন ইউনিটে কান্না জড়ানো কণ্ঠে শাহনেওয়াজের ফুপাতো বোন আরমিন নিশাত বলেন, ‘হাসপাতালে ছটফট করার সময়ও আমার ভাই বলছিল- আপা আমাকে আগুন ধাক্কা দিয়েছে। বাড়িওয়ালাকে গ্যাস লিক হওয়ার কথা বলেছিলাম।’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতিকুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, গ্যাসের পাইপে লিক ছিল। এ কারণে চুলা ধরাতে গিয়ে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে।

উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।