শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টগ্রামে ইঁদুর-বিড়ালের মলমুত্র মিশ্রিত খোলাপণ্য বিক্রী, ছড়াচ্ছে রোগ

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
news-image

চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন হাটবাজার ও অলি-গলির মুদির দোকানগুলোতে ইঁদুর-বিড়ালে খাওয়া নিত্য প্রয়োজনীয় খোলা পণ্য বিক্রী হচ্ছে অবাধে। খোলা পণ্যে ইঁদুর-বিড়ালের থাবার বিষয়টি ক্রেতাদের অজানা। বিক্রেতারা জানা সত্তে¡ও এ পণ্য নিরাপদে রাখার কথা বলে গছিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের।

সচেতন মহলের মতে, নিত্য প্রয়োজনীয় খোলা পণ্য এমনিতেই যে কোন প্যাকেটজাত পণ্যের চেয়ে নিম্মমানের ও অস্বাস্থ্যকর। তম্মধ্যে এসব খোলা পণ্য প্রতিরাতে যে ইঁদুর-বিড়ালের থাবা বসে তাতে মারাতœক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এসব পণ্য খেয়ে ক্রেতারা অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে ছুটে বেড়ালেও ক্রেতাদের তেমন নজরে আসে না বিষক্রিয়ার বিষয়টি।

আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দার হাটে এমন কয়েকটি মুদির ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। এরমধ্যে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বহদ্দারহাটের সবচেয়ে বড় মুদির এক দোকানি জানান, দোকানে এক কোটি টাকারও বেশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রীর জন্য মজুদ রয়েছে।

বিশেষ করে তেল, ঘি, মাখন, ডাল, মরিচ, হলুদ, মসলা, চা-পাতা, আটা, ময়দা, চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য রয়েছে; যেগুলো পাইকারী বস্তা বা প্যাকেটজাতের পাশাপাশি খোলাও বিক্রী করা হয়। এরমধ্যে কত প্যাকেটজাত পণ্যও রাতের আঁধারে খেয়ে ফেলে ইঁদুর-বিড়াল। আর খোলা পণ্যে তো রাতে হাড়–-ড়– খেলে ইঁদুর-বিড়ালরা। পায়খানা-প্রসাব করে। কিন্তু এগুলো বিক্রী না করে কি কেউ ফেলে দেয়। বরং ইঁদুর-বিড়ালের খাওয়া প্যাকেটজাত পণ্যগুলোও খোলা পণ্যের সাথে মিশিয়ে বিক্রী করে দেওয়া হয়।

ইঁদুর-বিড়াল থেকে মারাতœক প্রাণঘাতি জীবাণু এসব পণ্যে মিশে স্বাস্থ্যহানী ঘটতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরাও জানি। কিন্তু বাঙালীর পেটে সব জারে (হজম)। তিনি বলেন, এসব নতুন বিক্রী করছি না। দোকান খোলার পর থেকে গত ২৮ বছর ধরে বিক্রী করছি। আর এসব পণ্য প্যাকেটজাত পণ্যের চেয়ে দামে একটু কম হওয়ায় নিম্মবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতারা কিনে খাচ্ছে বলে জানান তিনি।

একইভাবে নগরীর খুলশী ঝাউতলা বাজারের মুদির ব্যবসায়ী এরশাদুল্লাহ বলেন, খোলা পণ্য শুধু কি আমি একা বিক্রী করছি। এমন কোন দোকান আছে যেখানে খোলা পণ্য নেই। ইঁদুর বিড়ালে এসব পণ্য খাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাই, তবে আমি অনেক সেইফে রাখি। আর যেগুলো খাই সেগুলো কি করে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, সব দোকানে খাচ্ছে, বিক্রীও হচ্ছে। সস্তায় পায় বলেই তো মানুষ জেনেশুনে ইঁদুর-বিড়ালে খাওয়া এসব পণ্য কিনে খাচ্ছে।

এ সময় ওই দোকান থেকে খোলা সয়াবিন আর চাল কিনেন নারী ক্রেতা মাবিয়া খাতুন(৪২)। চালে ইঁদুরের পায়খানা থাকার কথা তিনি দোকানদারকে জানান। দোকানদার বলেন, বেশি নেই। ওগুলো শুকণো। বেছে ফেলে দিয়েন। এতে নিরবে প্রস্থান করেন তিনি। কিন্তু অল্প দূরে যাওয়ার পর কথা হয় তার সাথে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইঁদুর-বিড়ালে খাইলে কি হয়? এভাবে তো খাচ্ছি। পরিবারের লোকজনের অসুখ-বিসুখ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেটে ব্যাথা, মাঝে-মধ্যে ডায়রিয়া হয়। এছাড়া স্বামী জন্ডিস রোগে ভুগছে। ছেলে-মেয়েগুলোও রোগা, জ্বও, সর্দি, কাশি লেগেই আছে। বাবা শান্তি নাই ঘরে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ সেলিম সরোয়ার এ প্রসঙ্গে সিটিজি টাইমস ডটকমকে বলেন, ইঁদুর ও বিড়াল মানুষে খাওয়া বিভিন্ন খাবারের পাশাপশি মানুষে খায় না এমন বর্জ্যও গ্রহণ করে। এ থেকে কি সহজেয় অনুমেয় হয় না। ইঁদুর বিড়ালের মাধ্যমে মারাতœক বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে।

তিনি বলেন, ইদুর-বিড়ালের মধ্যে প্রাণঘাতি ব্যাকটেরিয়া জীবাণু রয়েছে। ইদুর থেকে ছড়ানো বিভিন্ন মারাতœক রোগে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইঁদুরের মূত্র থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ানক রোগ লেপ্টে¯পাইরা।এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি ৭০ ভাগ। সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, জন্ডিস ও গায়ে লালচে র‌্যাশ ওঠা এ রোগের উপসর্গ হলেও রোগ স¤র্পকে ধারনা না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগটি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন চিকিৎসকরা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের এমন কোন দোকান নেই, যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় খোলা পণ্য বিক্রী হয় না। আর খোলা পণ্য মানে ইঁদুর, বিড়াল, তেলাপোকা, টিকটিকিসহ নানা পোকা-মাকড়ের মলমুত্র খাওয়া। এ ব্যাপারে ক্রেতাদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি খোলা পণ্য বিক্রেতা ও দোকানদারদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মমিনুর রশিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, খোলা বা যে কোন ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানে দোকানের খোলা পণ্যের প্রতি এবার বিশেষভাবে নজর রাখা হবে। যা অতীব প্রয়োজনীয়।