শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

ধূমপান ছাড়ার ১০ কার্যকর উপায়

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
news-image

 নিয়মিত ধূমপানের ফলে ধূমপায়ীদের ফুসফুসের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। একসময় তা কালচে রং ধারণ করে। আর অধূমপায়ীর ফুসফুসের রং থাকে স্বাভাবিক।

সিগারেটের প্যাকেটেও এখন এ ধরনের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত ধূমপানের ফলে ফুসফুসের চেহারাটাই বদলে যাচ্ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ফুসফুসে জটিলতা, কাশি, বুকে ব্যথা, স্ট্রোক কিংবা ফুসফুসে ক্যানসারের আশংকাও বেড়ে যায়।

যে কারণে ধূমপান ছাড়বেন
ধূমপায়ীরা নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। একটি অতি পরিচিত সমস্যা হচ্ছে বুকে ব্যথা। এছাড়াও ধূমপায়ীদের শ্বাসকষ্ট, কাশি, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপসহ যৌন সমস্যা দেখা যায়। ধূমপায়ী নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌণ সক্ষমতা হ্রাস পায়। এমনকি তা গর্ভস্থ শিশুরও ক্ষতি করতে পারে। এদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধূমপানের কারণে দাম্পত্য সমস্যাও দেখা যায়।

নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা গেলে বাহ্যিক অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। শুরু হয় সাফল্যের জয়যাত্রা। বদঅভ্যাসের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির মাধ্যমে আপনি ক্রমাগত সাফল্যের পথে অগ্রসর হবেন। বদলে যাবেন আপনি। ইতিবাচকভাবে বদলাতে থাকবে আপনার চারপাশ।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগে কিছু কার্যকর উপায।

১. লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন
প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকে। কিছু লক্ষ্য থাকে স্বল্প মেয়াদী আবার কিছু লক্ষ্য থাকে দীর্ঘমেয়াদী। আপনি যদি আমৃত্যু সুস্থ থেকে নাতি পুতি দেখে যেতে চান তবে ধূমপান ছেড়ে দিন। আগামী কত দিনের মধ্যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিতে চান তা ঠিক করুন। এবার সে তারিখটি ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে নিন।

২. একটার বেশি সিগারেট কিনবেন না
ধূমপায়ীদের অনেকেই বেতন পেলে সিগারেটের কার্টুন নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এ অভ্যাসটি বদলাতে পারলে আপনার ধূমপানের অভ্যাস অর্ধেক কমে যাবে। একসঙ্গে একটির বেশি সিগারেট কিনবেন না। কারো সঙ্গে সিগারেট শেয়ার করা থেকেও বিরত থাকুন।

৩. দিয়াশলাই কিংবা লাইটার ফেলে দিন
আপনার কাছে দিয়াশলাই কিংবা লাইটার থাকলে তা ফেলে দিন। পছন্দের লাইটারটি ফেলতে খুব মায়া লাগবে।

৪. আপনার ইচ্ছার কথা অন্যদের জানান
আপনার বন্ধু কিংবা সহকর্মীরা ধূমপানের জন্য ডাকলে আপনার ইচ্ছার কথা তাদেরকে জানান। বলুন, আমি ধূমপান ছাড়তে চাইছি এ কারণে এখন আর সিগারেট হাতে নিতে চাচ্ছি না। এতে করে কেউ আর আপনাকে ধূমপানে আমন্ত্রণ জানাবে না।

৫. যোগ, ধ্যানে নেশা কাটে
যখনই সিগারেট টানতে ইচ্ছে করবে গভীরভাবে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। আপনি মনে করছেন সিগারেট আপনার স্ট্রেস দূর করতে পারবে? এটা ভুল ধারণা। ধ্যান করুন। মনের সব স্ট্রেস মুহূর্তেই দূর হয়ে যাবে। হারিয়ে যান কল্পনায়। অনুভব করুন সুখের স্মৃতিগুলো, যা আপনাকে এখনো মনে প্রাণে সজীব করে তোলে। তা হতে পারে সমুদ্র স্নান, পর্বোতারোহন কিংবা অন্যকোনো প্র্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ানোর দৃশ্য। এতে কর্মস্পৃহার পাশাপাশি বাড়বে আপনার মনোবল। মন তখন আলফা লেভেলে অবস্থান করবে। মনের এ অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো বাস্তবসম্মত চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তর করতে পারেন।

মেডিটেশনের সময় কল্পনা করুন কেউ আপনাকে সিগারেট দিচ্ছে আর আপনি বিনয় ও দৃঢ়তার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছেন। কল্পনায় কয়েকবার চর্চা করলে বাস্তবেও তা করা আপনার জন্যে সহজ হবে।

৬. নি:শ্বাসের ব্যায়াম করুন
যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন আপনাকে সব ধরনের নেশার আশক্তি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে। মনের অস্থিরতা দূর হবে, লাভ করবেন অনাবিল প্রশান্তি। প্রাণায়ামের মাধ্যমে আপনি শ্বাসপ্রশ্বাসের বিভিন্ন ধরনের কৌশল রপ্ত করতে শিখবেন। এতে করে ধূমপানের প্রতি আপনার অনাশক্তি তৈরি হবে।

৭. ই-সিগারেটকেও না বলুন
অনেকে ধূমপায়ীদের ইলেক্ট্রনিক সিগারেটে উদ্বুদ্ধ করেন। অধিকাংশ সময়ই তা কাজে লাগে না। যে কোনো নেতিবাচক অভ্যাস দূর করার জন্য মনোবলই যথেষ্ট। আপনার হাতের নাগালেই সিগারেট আছে। অথচ আপনি সিগারেট হাতে নিচ্ছেন না। এটাই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। তার মানে এই নয় যে আপনি সিগারেট ছাড়ার জন্য অন্য কোনো উপায়ে আশক্তি ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। আর তা্ই ইলেক্ট্রনিক সিগারেটকেও না বলুন।

ঘরে বাইরে তৈরি করুন ‘নো স্মোকিং জোন’
আপনার ব্যক্তিগত যানবাহন, অফিস কিংবা বাসা যেখানেই ধূমপান করেন সেখানে তৈরি করুন ‘নো স্মোকিং জোন’। ঘরের বারান্দায় একটি ছোট বাগান করতে পারেন। শহুরে জীবনে টবে গাছ লাগানো ছাড়া উপায় নেই। আপনার ঘরের বারান্দা বা ছাদে যদি কিছু সুগন্ধি ফুলের গাছ লাগান ফুলের সুবাশে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।ফুলের সুবাসে রয়েছে মন ভালো করে তোলার শক্তি।

অনুভব করুন দমের গুরুত্ব
অনুভব করুন এই দম আছে তো আপনি আছেন। প্রকৃতি থেকে দমের মাধ্যমে আপনি অক্সিজেন গ্রহণ করছেন আর ত্যাগ করছেন কার্বন ডাই অক্সাইড। বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের সময় আপনার সিগারেটের মাধ্যমে যে ধোঁয়া ফুসফুসে প্রবেশ করছে এতে করে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান
ধরুন আপনি একজন অধূমপায়ী। কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন। যাত্রাপথে আপনার সঙ্গে একটি শিশুও আছে। শিশুটির পাশে কেউ একজন ধূমপান করছে। বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া ভেসে আসায় আপনার শিশুটির নি:শ্বাস গ্রহণে কষ্ট হচ্ছে। এ সময়ে আপনি পাশে থাকা ধূমপায়ী লোকটিকে কি বলবেন? ধূমপায়ীরা মনের অগোচরে এভাবেই অধূমপায়ীদের বিরক্তির কারণ হচ্ছেন। চোখ বন্ধ করে বিষয়টি ভাবুন। এতে করে প্রকাশ্যে ধূমপানের প্রতি আপনার আগ্রহ কমে যাবে।

লেখক: সাইকিক কনসালটেন্ট
ইয়োগা ও বজ্রপ্রাণ প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ ব্যুত্থান ফেডারেশন