শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুফল পেতে চাই ব্যবসার উন্নত পরিবেশ’

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:  দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো (এসইজেড) থেকে বাস্তব ফল পেতে যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন ও ব্যবসার স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

এসইজেডগুলোকে সফল করতে ও বড় বিদেশি বিনিয়োগ টানতে করণীয় নিয়ে শনিবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সামনে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

ঢাকাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. রায়হান বলেন, দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদেরকে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আকৃষ্ট করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত, বন্দরগুলোকে আরও সক্রিয় করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধাপে ধাপে ১০০টি এসইজেড স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) গঠনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি এসইজেড কাজ শুরু হয়েছে।

অর্থনীতির গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে নতুন এসব অঞ্চলের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভারত, চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক।

অধ্যাপক সেলিম বলেন, দুর্বল অবকাঠামো এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ দেশ-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। এসব বাধা দূর করতে বেজাকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

এই বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসা পরিবেশ সূচক-২০১৭ প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সম্পত্তি নিবন্ধীকরণে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি।

ভূমির স্বল্পতা এবং ক্রমবর্ধমান ভূমি বিষয়ক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে চীন ও ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে বলেন রায়হান।

ইপিডেজ বা অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর তুলনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার উপর জোর দেন অধ্যাপক সেলিম।

অর্থনীতির এই গবেষক বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সাফল্য পেতে সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলোর দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব ও বন্দরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কগুলোকে যথেষ্ট উন্নত করতে হবে।

“চীন তার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে দক্ষ বন্দরের কাছাকাছি স্থাপন করে এগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী অধিকতর উন্নত সড়ক নির্মাণ করতে পেরেছিল বলে সফল হয়েছিল।”

বাংলাদেশে এসইজেড স্থাপনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক করিডরের বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত বলে তার মত।

অধ্যাপক সেলিমের মতে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সেই খাতগুলোই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, যেগুলোর অর্থনৈতিক এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

এক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও সফটওয়্যার শিল্পের দিকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের নজর দিতে বলেন তিনি।

“এছাড়া কৃষিভিত্তিক নতুন নতুন পণ্যও প্রস্তুতের দিকেও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে নজর দিতে হবে। কারণ এগুলো বাংলাদেশের পেক্ষাপটে উচ্চমূল্যমানের।”

একটি দেশে পণ্যের বড় বাজার, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, দক্ষ জনবল থাকলেই কেবল সেখানে বাইরের আরেকটি দেশ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় বলে মনে করেন ড. সেলিম।

তিনি বলেন, স্বল্প বা অপরিবর্তনশীল দেশীয় বিনিয়োগ দেশের বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক আস্থার অভাবের ইঙ্গিত বহন করে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে নেতিবাচক বার্তা দেয়।

“তাই সরকারের উচিত নীতিমালা এবং অন্যান্য যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নত করা, ব্যবসা পরিচালনার খরচ হ্রাস করা এবং দেশীয় বিনিয়োগের প্রক্রিয়াকে সহজতর করা।”

সর্বোপরি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধনের জন্য দেশে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা প্রয়োজন বলে মত দেন অধ্যাপক সেলিম।

“এক্ষেত্রে শুধু সংহিসতা বন্ধ হওয়াটা যথেষ্ট নয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ আরেক সরকার যাতে বন্ধ করে না দেন সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।