বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

নৌকা ‘ডোবানোর’ আহ্বানের জবাবে আইভী বললেন ‘দেখা যাবে’

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
news-image

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রার্থীর এক পথসভায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দলীয় প্রতীক নৌকা ‘ডুবিয়ে’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান; এর জবাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, কী হয় তা ২২ তারিখেই দেখা যাবে।
মঙ্গলবার বিকালে শীতলক্ষ্যার ওপারে বন্দর থানা এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির জোটসঙ্গী জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রধান।

তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জবাসীকে আহ্বান জানাব, নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন এবং নৌকাকে হারিয়ে ১০ হাত পানির নিচে ডুবিয়ে দেবেন।”

তার এই বক্তব‌্যের পর একই থানার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, “নৌকা ভাসবে না ডুববে সেটা ২২ তারিখের নির্বাচনে দেখা যাবে।”

ওই দিন প্রার্থীর ভাবমূর্তি, উন্নয়ন এবং দলীয় প্রতীক সব কিছু মিলে নৌকার পক্ষে নারায়ণগঞ্জের মানুষের রায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিকালে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাঙ্গলকান্দা, সোমবাড়িয়া বাজার, দেউলি চৌরা পাড়া, দাসেরগাঁও প্রভৃতি এলাকায় প্রচার চালান সদ্য বিদায়ী এ মেয়র।

তার সঙ্গে থাকা বিপুল সংখ‌্যক নেতাকর্মীকে দেখিয়ে আইভি বলেন, “আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। আমাকে নদীর এপারের লোকজন প্রচণ্ড রকম ভালোবাসে। এখানে গণমানুষের জোয়ার এসেছে। আশা করি, ২২ ডিসেম্বর নৌকা বিজয়ী হবে।”

উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করার জন্য ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “আমি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করেছি। একটা নতুন সিটি করপোরেশন, যেটা গঠিত হয়েছে ২০১১ সালে, সেটার সঙ্গে দুটি ভগ্ন পৌরসভা যুক্ত হয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করা চাট্টিখানি কথা নয়।”

সোমবাড়িয়া বাজার এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তা দেখিয়ে আইভী বলেন, “আমরা যে রাস্তাটার উপর দাঁড়িয়ে আছি, এখানে কিন্তু কাজ হয় নাই। এটা মেরামত করা হয়েছে।

“এটা আমার জাইকার প্রজেক্টে দেওয়া আছে, অনেকগুলি অলিগলিসহ প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাজ হবে।”

“মানুষ যে কেবল কাজের জন্য পাগল হয়েছে বা নৌকার জন্য পাগল হয়েছে তা বলব না। সব কিছু মিলে সম্মিলিতভাবে মানুষ আমাকে ভোট দিবে,” বলেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে আইভী বলেন, “আওয়ামী লীগের বড় নেতারা প্রত্যেকে এমপি-মন্ত্রী, আচরণবিধির কারণে তারা আসতে পারছেন না। তবে এখানে কোন বড় নেতা আসল, না আসল সেটা বড় কথা নয়। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন- সেটা আমাদের বুঝতে হবে, এখানে মানুষ আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের নেতারা বিকালে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ধানের শীষের জন‌্য ভোট চান।

সেখানকার দড়ি সোনাকান্দা এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে মিছিল বের করেন। এরপর বন্দর খানবাড়ি এলাকায় তাদের পথসভা হয়।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, “এ নির্বাচন কেবল একজন মেয়র নির্বাচিত করার নির্বাচন নয়; এই নির্বাচন গণতন্ত্রকে যেভাবে লুট করা হয়েছে, বুটের তলায় পিষিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার নির্বাচন।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকামী ও গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন‌্য, অভাব, বঞ্চনা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার যে সংগ্রাম তার ‘সিপাহসালার’ সাখাওয়াত হোসেন খান।”

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় নিহতদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে আলোচনায় আসা সাখাওয়াতকে ‘সাহসী মানুষ’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, “তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ন্যায় ও সত্য-সুন্দরের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন।

“আজ তিনি সারা দেশে সাহসের প্রতীক, ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক।”

ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জের মানুষ অতীতে যেভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সব সময় ছিল, এবারও সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পক্ষে এবং সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দেবে।”

আওয়ামী লীগ মানুষের ‘সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর লাশ পাওয়া যায়। এই শীতলক্ষ্যাতে আমরা সাতজন নেতাকর্মীর লাশ ভেসে উঠতে দেখেছি।”

পথসভায় সাখাওয়াত বলেন, “এই নির্বাচন মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার নির্বাচন। যে অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা ফিরে পেতে মানুষ ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।”

আইভীর বিরুদ্ধে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ‘করের বোঝা চাপানোর’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তের বছরে যে উন্নয়ন তিনি করতে পারেননি পরবর্তী সময়ে কখনও সেটা তিনি পারবেন না। কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান তার আমলে হয়নি।”

নগরীকে ‘আধুনিক ও ডিজিটাল’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাখাওয়াত বলেন, “নির্বাচিত হলে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু করে দুই পারের বৈষম্য দূর করব। ফুট ওভারব্রিজ, আধুনিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলব।”

সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার বক্তব্য দেন।

এর আগে দুপুরে নগরীর চাষাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করে।

সকালে নগরীর মঙ্গলপাড়া, জিমখানা সড়ক, নিতাইগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় গণসংযোগ করেন ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত।