বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

একসময়ে এই মেয়েই সইফকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানান, আজ তিনি সেফের সন্তানের মা!

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
news-image

অনলাইন ডেস্ক: ১৯৯১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ। বলিউডে প্রবল হইচই। কারণ, নায়িকা অমৃতা সিংহ বিয়ে করেছেন। মিঠুন থেকে অমিতাভ, অনিল কপূর, সঞ্জয় দত্তের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করা অমৃতা তখন খ্যাতির শীর্ষে। এই বিবাহের কিছুদিন আগেই রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্কে ছেদ টেনেছেন অমৃতা। এই সম্পর্কে বিচ্ছেদের দিন কয়েকের মাথাতেই রবি শাস্ত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। মনমরা অমৃতার জীবনে তখন শূন্যতা। নব্য কিশোর সইফ আলি খান তখন ঘুরঘুর করছেন বলিউডে।

শর্মিলা ঠাকুর এবং মনসুর আলি খান পতৌদির ছেলে সইফ তখন বছর কুড়ি বয়সের। এরকমই সময়ে একদিন ফিল্মের সেটে পরিচয় অমৃতার সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই অমৃতার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন সইফ আলি। একদিন আচমকাই অমৃতার বাড়িতে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিন্তু করেও অমৃতা তাঁর থেকে ১২ বছরের ছোট সইফের প্রেমের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। কিন্তু, অমৃতার শর্ত ছিল বিয়ে করতে হবে। সইফ মেনে নিয়েছিলেন সেই শর্ত। বাড়ির হাজারো অমত সত্ত্বেও সইফ বিয়ে করেছিলেন অমৃতাকে।

১৯৯১ সালেই মুম্বইয়ের বুকে অমৃতা-সইফের বিয়ের রিসেপশন হয় যেখানে অনুপস্থিত ছিলেন শর্মিলা। তাঁর সঙ্গে রাজ কপূরের পরিবারের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তাই অমৃতা সিংহের বিয়ের রিসেপশনে উপস্থিত থাকাটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা বুঝতে পারছিলেন না রাজ কপূরের বড় ছেলে রণধীর কপূর। কিন্তু, রণধীরের স্ত্রী ববিতা তার অনেক দিন আগে থেকেই আলাদা থাকতেন। তাই শর্মিলার মানসিক অবস্থাকে গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না। তিনি দুই মেয়ে করিশ্মা কপূর এবং করিনা কপূরের হাত ধরে হাজির হয়ে যান অমৃতা-সইফের বিয়ের রিসেপশনে। করিশ্মা কপূর তখন ১৬ বছরে পা দিয়েছেন। বলিউডে তাঁর অভিষেকের আয়োজন চলছে। বলতে গেলে কপূর খানদানের নিয়ম-নীতিকে উড়িয়েই মেয়ে করিশ্মাকে তখন সিনেমায় নামাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রণধীরেরর স্ত্রী ববিতা। সেসময় করিনা কপূরের বয়স সবে ১০।

বিয়েকে ঘিরে এমন পার্টির মেজাজ করিনার মতো মেয়ের কাছে নতুন কিছু নয়। খালি সে অবাক হয়ে দেখছিল সামনে দাঁড়ানো স্যুট-কোর্ট-টাই পরা সেফকে, আর নববধূর সাজে সজ্জিতা অমৃতাকে। সেফ ও অমৃতাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল যে ১০ বছরের করিনা কপূরও চোখ ফেরাতে পারছিলেন না। কপূর খানদানের চল অনুযায়ী বয়সে খানিকটা বড়দের আঙ্কল-আন্টি বলার চল। করিনা একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে সেফ ও অমৃতার হাতে দিয়ে আসেন এবং ‘হ্যাপি ম্যারেড লাইফ আঙ্কল অ্যান্ড আন্টি’ বলে অভিনন্দনও জানিয়ে আসেন। প্রত্যুত্তরে সইফ করিনাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ বেটা’ বলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন।

১৯৯১ সালের এই ঘটনার পরে অনেকটা সময়ই পার হয়ে গিয়েছিল। সইফ আলি খান তখন বলিউডের শীর্ষ নায়কের মধ্যে একজন। ছোকরা মার্কা চেহারায় সইফ আলি বলিউডে দাগই কাটতে পারেননি। ২০০১ সালে ফারহান আখতার ‘দিল চাহতা হ্যায়’ থেকে সেফ আলি খানের ফিল্মি কেরিয়ারকে এক নয়া দিশা দেখিয়েছিলেন। বদলে যাওয়া সইফের ইমেজ তখন মারকাটারি। করিনা কপূরের সঙ্গে ‘তশন’ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। করিনা তখন পাগলের মতো ছবি হিট করাতে চাইছেন। কারণ, শাহিদ কপূরের সঙ্গে তাঁর একটার পর একটা ছবি ফ্লপ করছিল। এর জেরে শাহিদ-করিনার প্রেমের সম্পর্কও ভেঙে যায়। আর এই সময়ই ‘তশন’-এর সেটে সইফের সঙ্গে মোলাকাত করিনার।

১৯৯১ সালে যে ১০ বছরের মেয়ে ২০ বছরের সইফ আলি খানকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, ২০০৮ সালে তখন দু’জনেই যৌবনে। করিনা তখন যৌবনদীপ্ত এক যুবতী। আর সেফ দুই সন্তানের পিতা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। সেফেরও এই ছবির কিছুদিন আগে অমৃতার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ‘তশন’-এর সেটে জিরো ফিগারের করিনা এবং সইফের প্রেমের ডানা মেলেছিল দুরন্ত গতিতে। যার পরিণতিতে আজ সইফ-করিনার সন্তান তৈমুরের জন্ম। ছোট্টবেলার এক মুগ্ধতা আজ পূর্ণতা পেয়েছে এক অসামান্য প্রেমের সম্পর্কে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, এককালে যে ১০ বছরের মেয়েটা সইফ-অমৃতাকে ‘হ্যালো আঙ্কল-আন্টি’ বলে গোলাপ উপহার দিয়েছিলেন আজ তিনি-ই সইফের সন্তানের মা।