শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

জঙ্গিবাদের প্রচার চালাতেন জঙ্গি কাদেরীর ছেলে

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানের আশকোনার বাড়িটিতে থেকে জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলে ওই এলাকায় কিশোরদের মধ‌্যে জঙ্গিবাদের প্রচার চালাতেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সূর্যভিলা নামে ওই বাড়িতে শনিবার পুলিশের অভিযান চলার মধ‌্যে এক কিশোর জানায়, কাদেরীর ওই ছেলে নিজের নাম বলতেন শহীদ কাদেরী, বলতেন জিহাদের কথা।

রাত থেকে অভিযান শুরুর পর বিকালে কাদেরীর ওই ছেলে নিজের ঘটানো গ্রেনেডের বিস্ফোরণে নিহত হন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান।

বছরের মাঝামাঝিতে গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ‌্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানের সময় টিকতে না পেরে তানভীর কাদেরী আত্মহত‌্যা করেন বলে পুলিশ জানায়।

কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা এবং তার জমজ ছেলেদের একজন আজিমপুরের ওই অভিযানের সময় আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন।

তখন অন‌্য ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার সাড়ে তিন মাস পর আশকোনার বাড়িটিতে কাদেরীর আরেক ছেলের খোঁজ পেয়ে অভিযানের কথা জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

সূর্যভিলার কাছের একটি বাড়ির বাসিন্দা ওই কিশোর  বলে, “আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম; ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট…সে (কাদেরীর ছেলে) প্রায়ই আমাকে তার বাসায় ডেকে নিত।

“অনেক সময় আমি যেতে না পারলে পরদিন আমার বাসায় চলে আসত। আমাকে ধর্মীয় গান শোনাত, জিহাদের কথা বলত। রাতে প্রায়ই আমাকে তার বাসায় থাকতে বলত। বলত- ধর্ম নিয়ে কথা আছে।”

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাসায় ডেকে নিয়ে জিহাদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল বলে জানায় এই কিশোর।

“ওইদিন বিকালে তার বাসায় নাশতা করতে করতে সে বলে- ইসলামের পথে আসতে হবে, বন্দুক হাতে নিতে হবে, জিহাদ করতে হবে।”

ওই বাড়িতে দুজন নারী এবং ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষকে দেখার কথা জানিয়েছেন এই কিশোর। তবে তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি।

“তাদের বাসায় নিয়মিত প্রাইভেটকারে, মাইক্রোবাসে করে লোকজন আসা যাওয়া করত।”

অভিযানের সময় বাড়িটিতে সাতজন ছিলেন, যার মধ‌্যে কাদেরীর কিশোর ছেলে ছাড়া তিনটি শিশু ছিল।

এর মধ‌্যে মিরপুরের রূপনগরে অভিযানে নিহত জঙ্গিনেতা জাহিদুলের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা মেয়েকেসহ আত্মসমর্পণ করেন। তার সঙ্গে ধরা দেন পলাতক জঙ্গিনেতা মুসার স্ত্রী ও মেয়েও।

জঙ্গি সুমনের স্ত্রী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। তার সঙ্গে আহত হয় অন‌্য শিশুটি, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

ভেতরে থাকা কাদেরীর কিশোর ছেলেটি বেরিয়ে আসছিল না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, “ছেলেটি কিছুতেই আত্মসমর্পণ করছিল না। তখন আমাদের পুলিশ গ‌্যাস নিক্ষেপ করে। সে গুলি চালানো শুরু করে। তখন ভেতরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে আমাদের পুলিশ দেখে সেখানে সে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।”

গোয়েন্দারা বলছেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব‌্য জেএমবির সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছিলেন কাদেরী। ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে সংগঠনে পরিচিত ছিলেন তিনি। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিকে গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাটিকামারি গ্রামের কাদেরী লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দুটি বেসরকারি কোম্পানি ঘুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখায় উচ্চ পদে যোগ দিয়েছিলেন।

আবেদাতুল ফাতেমা খাদিজাসহ আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক তিনজন রোববার ঢাকার আদালতে

২০০১ সালে তিনি বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’ এ চাকরিরত ফাতেমাকে।

২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর কাদেরী। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তানভীরের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতা ধরা পড়ে আত্মীয়দের চোখে। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন বলে স্বজনরা জানান।

হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ডাচ-বাংলার চাকরি ছেড়ে ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন কাদেরী।

এর মধ‌্যেই তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে পুলিশের ভাষ‌্য। তার স্ত্রী আদালতে নিজের কর্মকাণ্ডের জন‌্য ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, স্বামীর কারণেই নাশকতার এই পথে নেমেছিলেন তিনি।