শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আমি বেঁচে আছি এটাই আমার জীবনের স্বরণীয় ঘটনা : শফি মন্ডল

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: লালন সাঁই তার জীবনে প্রকৃতির খুব কাছে থেকে মানুষ,মাটি ও প্রকৃতির স্বাদ ও গন্ধ নিয়েছেন। পেয়েছেন অনেক তিক্ত ও মধুর অভিঙ্গতা। আর তার প্রত্যেকটি গান আমাদের বাস্তব জীবনের সেই সব কথাই বলে। তার গানে আমরা খুঁজে পাই বাউলের আত্মাকে খুঁজে পাই মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির বাস্তব চিত্রকে। আজ লালন নেই কিন্তু তার রেখে যাওয়া সেই বাস্তবতা গুলি আজও বেঁচে আছে তার গানের মধ্য দিয়ে আমাদেরই মাঝে। তার অনুসারীদের মধ্য একজন হলেন বর্তমান বাউল জগতের এক অনন্য নক্ষত্র শফি মন্ডল। যিনি আজ দেশে বিদেশে অর্জন করেছেন ব্যাপক খ্যাতি, সম্মান, পেয়েছেন নানা পুরষ্কার। ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার প্রতান্ত অঞ্চল দৌলতপুর থানার ঝিলিকনগর গ্রামে, মৌলভী মোহাম্মদ আহাদ আলী ও গৌরভী মন্ডলের ঘর আলো করে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। আমরা এখন কথা বলছি তার সাথে………
সোনালী সময়: আপনি কেমন আছেন ?
শিল্পী : জী আলহামদুল্লিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি।
সোনালী সময়: দিনগুলো কেমন যাচ্ছে ?
শিল্পী : আমরা চলি তার ইশারায়,তাই সে যেমন চালাচ্ছে।
সোনালী সময়: গানের জগতে আপনার প্রবেশ কি ভাবে?
শিল্পী : আসলে আমার আজকের এই জগতের সাথে আমার শুরুর জগত ছিল সম্পুর্ণ প্রতিকুলে । কারণ আমার পরিবারে কেউ গানের অনুসারী ছিলনা। কিন্তু আমাকে গানের জগত যেন  টানতো। আমার হৃদয় গানের জন্য ব্যাকুল ছিল। তখন আমি নিজে নিজে গান করতাম। এরপর আমার গ্রামে একজন মাটির গান করতো । তিনি ছিলেন সাত্তার হোসেন। আমি তখন তার কাছে গান শিখতাম। তিনি আমার প্রথম গানের শিক্ষক। আজ তিনি নেই, ঐ পারে আছেন।  তার সাথে আমার আবার দেখা হবে, আমি ঐ পারে গেলে। তিনি যখন চলে গেলেন তার পর আমি আস্তে আস্তে লালনের গান শুরু করি। আর এব্যাপারে আমার বাবা ও আমার সহধর্মিনী আমাকে খুব সহযোগিতা করেছে। এভাবেই আজ আমি বাউল শফি মন্ডল ।
সোনালী সময়: বাউল শিল্পী হলেন কেন, বিশেষ করে লালনের গান করেন কেন?
শিল্পী : আমি সুফি থেকে বাউল। লালনের গানে মানুষের কথা বলে। ভাগ্যদেবে বলা হয়েছে”মানুষ অমৃত পুত্র”,বাইবেলে বলা হয়েছে “মানুষ ঈশ্বরের সন্তান”,ত্রিপিটকে বলছে”মানুষ সর্ব যুগের সর্ব শ্রেষ্ঠ দেবতা”এবং কোরআনে বলা হয়েছে “মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এই সত্য বাণী গুলি বাউল গানের মধ্য বেশি বলা হয় ।আর বাউলরাই মানুষের মধ্য প্রভুকে প্রতিষ্ঠা করে।আর লালনের গানে সেই বাণী ফুঁটে  উঠেছে । তাই আমি লালনের গান গায় ও আমি একজন বাউল । বাউলরা অনেক ধনী। কারণ বাউলদের চাহিদা খুব কম। আমি অতটা ধনী এখনও হতে পারিনি। কারণ রুটি রুজির রোজগারের জন্য। আমি একেবারে সংসার বিয়োগী হতে পারিনিতো তাই।
সোনালী সময়: লালনের জগতে কিভাবে আসলেন?
শিল্পী : আমার বয়স তখন ৩৩ হবে এবং  ১৯৮৫ সালে দিকে আমি লালন সাঁইজীর অনুসারী হই। একটি দেশের যেমন বিভিন্ন শহর উপশহর থাকে,তেমনি গানের ও বিভিন্ন শহর উপশহর থাকে। আমি পথ চলতে চলতে হঠাৎ একদিন এই জগতে ঢুকে পড়ি আর তখন এই লালনের শহর আমাকে এমন ভাবে আকড়ে ধরে যে আমি আর এখান থেকে বের হতে পারিনি। আমার সত্তা এখানে বসত জুড়ে বসলো। এই ভাবেই আমার এই জগতে আসা। আমি বহু দিন ধরে বিভিন্ন আশ্রমে আশ্রমে ঘুরে বেড়িয়েছি। বাউলের আত্মাকে খুঁজেছি।
সোনালী সময়: আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
শিল্পী : বর্তমানে আমার পরিবারে আমি আমার সহধর্মিনী,দুই মেয়ে ও এক ছেলে। আর আমার বড় মেয়ে একজন কলেজের শিক্ষিকা, ছেলে একজন ব্যাংকার ও ছোট মেয়ে গৃহিনী তার স্বামী একজন সরকারী চাকুরীজীবি।
সোনালী সময়: আপনার  সবথেকে বড় পাওয়া বা অর্জন কি?
শিল্পী : আমার বড় পাওয়া আজ সারাবিশ্বে শফি মন্ডলের একটা ঘাড়ানা তৈরি হয়েছে। আমি সবসময় বাণীর পিছনে ছুটেছি। আমি লালনের গান গুলিও আমার মতো করে গেয়েছি। আর এটাই আমার নিজস্ব  ঢং । আমি আমার সেই ঢং সবার মাঝে বিলায়। আর তাই সবাই গ্রহণ করে আজ আমাকে বাউল শফি মন্ডল বানিয়েছে এটাই আমার বড় পাওয়া।


সোনালী সময়: আপনার স্বরণীয় ঘটনা কি ?
শিল্পী : আমার জীবনের স্বরণীয় ঘটনা হল আমি বেঁচে আছি এটাই।
সোনালী সময়: আপনার সব চেয়ে প্রিয় বা পছন্দের কোনটি?
শিল্পী : সুর, আমি সুর করতে ভালোবাসি।
সোনালী সময়: আপনি বতর্মানে কোন এ্যালবাম করছেন কি ?
শিল্পী : সামনে আসবে আমার ভক্তদের জন্য করবো আশা রাখছি।
সোনালী সময়: বর্তমান সময় শিল্পীদের জন্য কতটা সহায়ক?
শিল্পী : আমার মনে হয়,শিল্পীদের জন্য সব সময়ই ভালো। আলাদা কোন ভালো সময় নেই। কারণ লালনের সময়ও লালন সাঁই নানা সংকট ও সু সময়ের মধ্যদিয়ে গান করেছেন। গান থাকে মনে আর তাই সব সময়ই গানের জন্য যদি কিনা মন চায়।
সোনালী সময়: আপনার ভক্তদের আপনার কিছু বলার আছে কি?
শিল্পী : আমি আমার সকল ভক্ত বৃন্দের কাছে বলতে চায়, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আপনাদের মাঝে আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো। আমাদের সবার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
শিল্পী : আপনি ও আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।