শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আরো আকর্ষণীয় হচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলা

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:  অমর একুশে গ্রন্থ মেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এক মিলনমেলা।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা একাডেমিতে সর্বস্তরের মানুষের আনাগোনায় আর আলোকসজ্জায় লোকালোকিত হয়ে থাকে বইমেলা। এবার এই মেলা আরো আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

নিরাপত্তা জোরদার, অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা বসানো, অননুমোদিত বই না রাখা, খাবারের দাম কম রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলা একাডেমি এবার দেশবাসীকে এমন একটি বইমেলা উপহার দিতে যাচ্ছে, যেটি হবে ‘সব মানুষের বইমেলা’। সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে।

বাংলা একাডেমির পরিচালক এবং বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘শুধু নীতিমালাবহির্ভূত এবং ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু স্থান পাবে না বইমেলায়। এ ছাড়া নিয়ম মোতাবেক সব বিষয়ের পাশাপাশি এবার আরো কিছু বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’

এরই মধ্যে বইমেলাকেন্দ্রিক কিছু পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাংলা একাডেমির অনুমতি ছাড়া একটি বইও অমর একুশে বইমেলার কোনো স্টলে স্থান পাবে না। একইসঙ্গে যেসব বই বাংলা একাডেমি অনুমতি দেবার পর স্টলে নেওয়া যাবে, সেসব বইয়ের কমপক্ষে একটি কপি বাংলা একাডেমির কাছে সংরক্ষিত রাখা হবে। পাশাপাশি ইতিপূর্বে বিতর্ক সৃষ্টিকারী প্রকাশনীদের মেলা থেকে দূরে রাখা হবে এবার।

খাবারের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে মেলায় আগত সব শ্রেণির মানুষ তা ক্রয় করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পূর্বের সময়গুলোর মতো পর্যটন করপোরেশন মানের মূল্য না রাখার একটি প্রস্তাবও একাডেমির কাছে এসেছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া প্রকাশনীদের পেশাদারিত্ব এবং নৈতিকতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে লেখকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ‘রয়্যালটি চুক্তি’র বিষয়টিও মেলায় স্টল পাওয়ার জন্য আবেদনের সঙ্গে চাওয়া হতে পারে। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে একাডেমির পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নেওয়া হবে বলে একাডেমি সূত্র জানিয়েছে।

এসব বিষয়ে জালাল আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েকদিন একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৩৯তম বার্ষিক সভার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আমরা। বার্ষিক সভা শেষ হলেই বইমেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হবে।’

প্রসঙ্গত, আজ শনিবার একাডেমির সাধারণ পরিষদের এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিভিন্ন পরিকল্পনাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব একাডেমি কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে বলে বাংলা একাডেমি সূত্র জানিয়েছে। গত বছর বইমেলায় পুলিশ যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছিল, এবার তার চেয়ে উন্নতমানের সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর চিন্তাভাবনা করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে এবার গতবারের চেয়ে বেশিসংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা জঙ্গিবাদ এবং মুক্তমনাদের ওপর হামলার ঘটনা এড়ানোর জন্যই এবার দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ডিএমপির আরো কিছু কৌশলের কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ডিএমপির প্রস্তাবেও একাডেমির অনুমতি ছাড়া কোনো বই বইমেলার স্টলে না ওঠানোর কথা বলা হয়েছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক  বলেন, ‘সুপারিশমালা নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত করা হবে। এসব সুপারিশের কারণ একটাই, যেন এমন কোনো প্রকাশনা স্টলে না উঠে, যাকে কেন্দ্র করে কোনো অশান্তি বা গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যেমনটি হয়েছিল গত বছর।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর পাশাপাশি যেসব প্রকাশনীর বই নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছিল, সেসব প্রকাশনীকেও মেলা থেকে একদম দূরে রাখা হবে। তারা যেন স্টল করার অনুমতি না পান, সে জন্য বাংলা একাডেমির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’

তিনি জানান, বাংলা একাডেমি পুলিশের সঙ্গে একমত পোষণ করে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। পরবর্তী সময়ে সুপারিশমালা আরো সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।

বর্তমানে ২০১৭ সালের বইমেলায় অংশগ্রহণ জন্য আবেদনপত্র বিতরণ চলছে। এর ওপর ভিত্তি করে জানুয়ারি মাসে প্রকাশনীদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে মাসব্যাপী এই বইমেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বইমেলার উদ্বোধন করবেন। আবারও ‘সংস্কৃতি অঙ্গন’ নামে পরিচিত বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখরিত হবে কবি, সাহিত্যিকদের পদচারণায়।

বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব জানান, এবারো বইমেলার নতুন বইয়ের তালিকা ও অন্যান্য তথ্য প্রতিদিন ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে এবং প্রতিদিন বইমেলার ওপর দুটি সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ করা হবে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে প্রতিদিন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

একাডেমি সূত্র জানায়, বাংলা একাডেমি ১৯৭৮ সালে মেলা চালু করে এবং ১৯৮৪ সালে এই মেলার নাম ‘অমর একুশে গ্রন্থ মেলা’ দেওয়া হয়। অমর একুশে গ্রন্থ মেলা ‘একুশে বইমেলা’ হিসেবে জনপ্রিয়। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হয় এই মেলা।