শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বুধবার ছাত্রলীগের ৬৯ বছর

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ৩, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে যে ছাত্রসংগঠনটির জন্ম, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বুধবার ঊনসত্তর বছর পূর্ণ করছে সেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।

ছয় দশকে সংগঠনটি পেরিয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ঝঞ্ঝামুখর সময়।

ছাত্রস্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের অনেক সংকটকালীন সময়ে ছাত্রলীগ ছিল আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায়। দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর প্রাণ।

প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তবে ঐতিহ‌্যবাহী এ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মত ঘটনায় জড়িয়ে সমালোচনায় ফেলেছেন দলকে। ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব‌্যবহৃত হচ্ছে- এমন অভিযোগও উঠেছে। গতবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে মারামারিতে জড়াতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের।

বুধবার ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি উৎসবমুখর করতে এবার নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।

এসব ছবিতে ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে। আছে বই উৎসবের চিত্র, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

রোকেয়া হল সংলগ্ন দেয়ালে আঁকা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি।

অন্য ছবিগুলোতে আছে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা; ‍মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আর ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা।

সংগঠনের কর্মীরাই রঙ তুলি দিয়ে দেয়ালগুলো ‘ইতিহাসে মুড়িয়ে দিচ্ছেন’ বলে জানান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আরিফুল রহমান লিমন।

তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবার দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ছাত্রলীগের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।”

দেয়ালচিত্রের বাইরেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ধরে চার দিনের কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী এ ছাত্র সংগঠন।

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হবে ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা।

সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কাটা হবে কেক, পরে সকাল ১০টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে হবে রক্তদান কর্মসূচি। আর ৬ জানুয়ারি বিকালে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ ও পরে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে ছাত্রলীগ।

এছাড়া ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ জন্য সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

জাকির বলেন, প্রতিবছরের মত এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলা থেকে শাহবাগ হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেষ হবে।

“এতে সাময়িক যানজট হতে পারে। সেজন্য রাজধানীবাসীর কাছে আগেই দুঃখ প্রকাশ করছি।”

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন সফল করতে মোট নয়টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। সেসব কমিটি প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ। এর ১৭ হাজার নেতাকর্মী কেবল মুক্তিযুদ্ধেই আত্মাহুতি দিয়েছেন। ছাত্রলীগ সবসময় অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

“এ সংগঠন শুধুমাত্র ছাত্রসমাজের নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় সংগঠন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সঙ্গে দেশের সকল মানুষকে যুক্ত করে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই।”