মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সঙ্গীত শিল্পী থেকে সাংবাদিক আলমগীর হোসেন

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ২১, ২০১৭
news-image

সোনালী সময় প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার (আরডিজেএ-ঢাকা) সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সিনিয়র রিপোর্টার মো. আলমগীর হোসেন। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন একজন প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী হবেন। তাঁর জীবনের প্রথম আয় হয়েছিল মঞ্চে গান করে। তবে সময়ের বিবর্তনে তিনি হয়েছেন একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলার ঢাকাস্থ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে তৈরি রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতির মূল উদ্যোক্তাদের একজন তিনি। নিজের জীবনের নানান গল্প বলেছেন।

সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গীত শিল্পী থেকে সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার বিষয়ে বলেছেন, ‘প্রথম দিকে গানই ছিল নেশা ও পেশা। তবে পরবর্তীতে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি। একসময় রাজশাহীতে গান করার পাশাপাশি স্থানীয় দৈনিক উপচার পত্রিকায় (২০০০-২০০৩ সাল) রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করি। এরপর রাজশাহীর দৈনিক সানশাইন পত্রিকায় (২০০৩) কয়েক মাস কাজ করেছি। এরপরই দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় রাজশাহী ব্যুরো আওতায় কাজ শুরু করি। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেছি। এরপর সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ ও দায়িত্বশীলতা বাড়তে থাকে পক্ষান্তরে গানের প্রতি মনোযোগ কমতে থাকে। কিন্তু মফস্বলের সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নানাভাবে সেখানকার (রাজশাহী) কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিকের হিংসাত্মক আচরণের শিকার হয়েছি। এছাড়া ২০০৪ সালে বাগমারায় আত্মপ্রকাশ করা জঙ্গি সংগঠন জেএমবির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করে একাধিকবার বিপদের সম্মুখীন হই। জঙ্গি ও সর্বহারা উভয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আমাকে হত্যার পরিকল্পনা ও ঘোষণা দিয়েছিল। সবকিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকায় আসার ব্যাপারে।’

‘আমি রাজশাহীর বিশিষ্ট ও গুণী সঙ্গীতগুরু কাজী জানে আলম, শেখ বদিউজ্জামান ও কাজী মণ্টুর কাছে উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সঙ্গীতের উপর কয়েক বছর তালিম নিয়েছিলাম। আমার সেই জানা বা বোঝা থেকে ঢাকায় আসি মূলত গানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। সাংবাদিকতা দ্বিতীয় প্রাধান্য বিষয় ছিল। কিন্তু পেটে ভাত না থাকলে তো গান মুখ থেকে বের হবে না। তাই চিন্তা করলাম, আগে কোন পত্রিকায় ঢুকতে হবে। সে লক্ষ্যে পরিচিত সাংবাদিক বড় ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলাম। কেউ কেবল মন রক্ষার আশ্বাস দিতেন, কেউবা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতেন। আবার এমন কেউ ছিলেন যিনি সত্যিইকার অর্থেই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি হলেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম জুয়েল ভাই। আমরা রাজশাহীতে একসঙ্গে (তিনি আমার সিনিয়র) কাজ করেছি। ঢাকায় ওই সময়ে তিনি দৈনিক আমাদের সময়ের প্রভাবশালী রিপোর্টার ছিলেন। দৈনিক কালেরকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার, বর্তমানের চিফ রিপোর্টারের দায়িত্বে ছিলেন।

অনেক চেষ্টার পর ঢাকায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় কাজ শুরু করি। অফিস তখন বাংলামোটরে ছিল। এরপর বছর খানেক পর দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেই। এ পত্রিকার মাধ্যমে আমি প্রথম ওয়েজবোর্ড অনুসারে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এখানে স্বাস্থ্য বিট, ক্রাইম ও সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতাম। এরপর ২০১০ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক পথিক সাহা ও ভোরের ডাকের তৎকালীন সিটি এডিটর মাহমুদ হাসানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমিসহ একসঙ্গে বেশকিছু সাংবাদিক (ভোরের ডাক) যোগদান করি বসুন্ধরা গ্রুপের ‘দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকায়। এখানে আমার বিট ছিল ক্রাইম। এ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে আমরা গণমাধ্যমটিকে আকাশচুম্বী অবস্থানে নিয়ে যায়। সাড়ে ৩ বছর একটানা কাজ করার পর ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল সিনিয়র রিপোর্টার (ক্রাইম চিফ) হিসেবে যোগদান করি ‘দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ’ পত্রিকায়। অদ্যাবধি একই পদে একই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

মৃত্যুর মুখোমুখি একদিন

নিজের সম্পর্কে অজানা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের দিকের ঘটনা। সামাজিক একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য কাজ করায় এক রাতে চরমপন্থি সর্বহারার একটি গ্রুপ আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে চূড়ান্ত অবস্থান নিয়েছিল। রাত ১১টায় তারা আমাকে বাসার বাইরে বের করে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ওই গ্রুপে ছিল ১৯ জন। আল্লাহর ইচ্ছায় সৌভাগ্যবশত ওই গ্রুপেরই একজন আগেই রাত ৮টায় আমাকে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে যায়। সে বলেছিল, বাসার বাইরে বের হলেই তোমাকে হত্যা করা হবে। যেই রাতে ডাকুক বাসার বাইরে কোনোভাবেই বের হওয়া যাবে না। ওই গ্রুপটি ঠিকই রাত ১১টায় এসে আমার বাসার বাইরে থেকে আমাকে বের হওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেছিল। তারা দেড়-দুই ঘণ্টা আমার বাসার সামনে অবস্থান করে। তখন বাস্তবতা এমন ছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মত অবস্থা আমার বা সেখানকার কারোই ছিল না।’

জীবনে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি

‘অপ্রাপ্তি সে অর্থে কিছু নেই। কারণ আমি তৃণমূল থেকে সাংবাদিকতা করে আজ ঢাকায় সাংবাদিকতায় মোটামুটি একটা অবস্থান গড়েছি। একটি বিভাগীয় সাংবাদিক সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ হয়েছে। সবমিলে আল্লাহর রহমত ও বাবা-মার দোয়া এবং আমার স্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতা-অনুপ্রেরণায় আমার জীবন আজ পরিপূর্ণ।’ এখন নিজের ব্যস্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ব্যস্ততা রিপোর্টিং ও রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার (আরডিজেএডি) কর্মকান্ড নিয়ে। যেহেতু আমি রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি, ফলে এ সংগঠনটি যেন মর্যাদাপূর্ণ হয় এবং পেশাগত সেক্টরে যাতে সংগঠনটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান পায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

‘অসহায় মানুষদের জন্য কল্যাণকর কিছু করা। গানের একটি অ্যালবাম বের করা।’