বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার মূল কারণ!

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ২৪, ২০১৭
news-image

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ট্রাম্পের বিজয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে নানান কথা চলছে। কীভাবে এই ধরনের একজন ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন! যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছিলেন, তখন মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই হেসেছিল। বলেছিল, দলের নমিনেশনই পাবেন না। যখন নমিনেশন পেলেন, তখন নিজ দলের মানুষ পর্যন্ত বিরোধিতা করেছিলেন।
এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বিশ্বকে বোকা ও অবাক করে দিলেন ট্রাম্প নামের এক জাদুকর। সবাই তাঁকে বর্ণবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হিলারি ক্লিনটন এফবিআইকে দোষারোপ করছেন। সমালোচকেরা ই-মেইলের দোষ দিচ্ছেন। কিন্তু আসল ঘটনার ভেতরে কেউ ঢুকছে না।
কেন এবং কীভাবে ট্রাম্প বাজিমাত করলেন!
ট্রাম্প জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন।
এই জনগণ কোনো ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, তা কি কেউ বুঝতে পেরেছেন?

সবাই বলছেন, মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এতই ঘৃণা বোধ?
৫৩ শতাংশ নারী কেন তাঁকে ভোট দিয়েছেন? কালো, হিস্পানিকও তাঁকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু কেন?

মিডিয়া ও অভিবাসী মানুষ জন্মগত মার্কিনদের মনের ভাব বা গতি বোঝার চেষ্টা করেনি। নির্বাচনের সাত দিন আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে উইসকনসিনের একজন নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা কেন ট্রাম্পকে সমর্থন করো? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বর্ণবাদিতা হিসেবে তোমরা যা মনে করছ, আসলে তা নয়, গভীরের কথা হলো চাকরির ইস্যুই মূল, যা ব্যবসায়িক ট্রাম্প ভালো করে জানতেন। তাই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধরন ও নির্বাচনী প্রচারণার ধারা ছিল গতানুগতিক ধারার বাইরে।

ট্রাম্প বুঝেছিলেন আমেরিকার মানুষের মূল সমস্যা। তা হলো চাকরির অভাব। ২০ বছর আগে বিল ক্লিনটন নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করেছিলেন। ফলে তিন মিলিয়ন আমেরিকান চাকরি হারায়। গাড়ির ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়। মেক্সিকোতে চলে যায় ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের কারণে। চাকরি দেশটির মানুষের প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। যা রাজনীতিবিদেরা পূরণ করতে ব্যর্থ হন, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই ট্রাম্প কার্ড নিয়ে ৭০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। এটিকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প চমক সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হলে দেশের কাজ দেশে ফিরিয়ে আনবেন। তাই স্লোগান ছিল ‘মেক আমেরিকান গ্রেট অ্যাগেইন’।

ট্রাম্প বলেছেন, ফ্রি ট্রেডের কাজ দেশে আনলে ৩৫ শতাংশ কর দিতে হবে। অর্থাৎ, দেশের বাইরে থেকে বেশি দামে মালামাল আনার চেয়ে দেশেই করা ভালো। দেশের কাজ মেক্সিকোতে চলে যাওয়ায় তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের ক্ষোভ রয়েছে। এই ক্ষোভকে ট্রাম্প পুঁজি করে বললেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল দেবেন। মেক্সিকানদের নামে বাজে কথাবার্তা বললেন। তাতে ট্রাম্প ইস্যুতে ‘সাউথ আমেরিকান’রা খুশি ছিলেন এবং তাই তাঁকে ভোটও দিয়েছেন।

ট্রাম্পের সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ ছিল মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। তিনি বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিলারির বিরুদ্ধে নয়, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি ক্রুক মিডিয়ার বিরুদ্ধে এবং তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন ইন্টারেস্ট গ্রুপের কথা। ইন্টারেস্ট গ্রুপ হলো ধনবান জায়োনিস্ট গ্রুপ। এদের পরিকল্পনায় ও মদদে রাজনীতিবিদও নাচেন। তবে এদের কেউ ট্রাম্পকে নাচাতে পারেনি। কারণ, ট্রাম্প তাঁর নিজের ডলারেই নির্বাচন করেছেন। ডলারের জন্য সে কারও মুখাপেক্ষী ছিলেন না। এই ইন্টারেস্ট গ্রুপের গুমর উন্মোচন করে নির্বাচনী ফয়দা নেন ট্রাম্প। কীভাবে এই সকল ইন্টারেস্ট গ্রুপ আমেরিকাকে ধ্বংসের চক্রে লেগেছে তা প্রকাশ করতে থাকেন। সেই সঙ্গে তার নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে উঠে আসে র‍্যাডিক্যাল মুসলিমবিরোধী আন্দোলনের দাবি।

ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট হলে দেশে মুসলিমদের তালিকা প্রণয়ন করবেন এবং আমেরিকায় মুসলিমদের আসা বন্ধ করবেন এবং বহিষ্কার করবেন। তাতে শ্বেতাঙ্গদের সমর্থন আরও জোরদার হয়।

প্রচারে মার্কিন বিলিনিয়র জায়োনিস্ট জর্জ সরত্তর কার্যক্রম ফাঁস করে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, জর্জ সরত্ত একজন ইভল জায়োনিস্ট পাপেট মাস্টার। অতীতের প্রেসিডেন্টদের দিয়ে যেসব কর্মকাণ্ড করে এ দেশকে অরাজকতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এবার হিলারিকে দিয়েও তা-ই করছেন। সিরিয়ার মুসলিমদের দেশের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে আইএসদের দ্বারা দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। আইসিস এদেরই সৃষ্ট দল, যাদের দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে অশান্ত করে ইসরায়েলের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তাই ট্রাম্প এদের ইন্টারেস্ট গ্রুপ বলে আখ্যায়িত করেন। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার করেন। ট্রাম্পের টার্গেট ছিল ৭০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গের ভোট এবং তিনি এদেরকেই শুধু ফোকাস করেছেন। কালো, ম্যাক্সিকান বা অভিবাসী তাঁর টার্গেট ছিল বলেই এদের উদ্দেশ্য করেই শ্বেতাঙ্গদের ভোটকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তিনি সফল হয়েছেন। মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণ ভারতীয়দের ভোট পেয়েছেন, মেক্সিকানদের ভর্ৎসনা করে হিস্পানিকদের ভোট পেয়েছেন। চাকরির নিশ্চয়তা বিধানের প্রতিশ্রুতিতে নারী ও কালোদেরও ভোট তিনি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি যা যা বলেছেন, তা পূরণ করবেন। কারণ, তিনি নির্বাচনে জেতার জন্যই দাবিগুলো তুলে ভোট আদায় করেছেন তা নয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন এবং এগুলো তাঁর মনের কথাও।

আরও একটি কারণ ট্রাম্পকে এগিয়ে যেতে ত্বরান্বিত করেছে। তা হলো একদল শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান ধর্মীয়ভাবে বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তারা বলেছে, এটা কোনো নির্বাচন নয়, আমেরিকানদের জন্য বিপ্লব (রেভল্যুশন)। এই দল আমেরিকার অশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে ট্রাম্প লড প্রদত্ত বিপ্লবী, যাঁকে লড পাঠিয়েছেন আমেরিকাকে রক্ষার জন্য দেয়াল সৃষ্টি করতে। বহু উগ্র ধর্মীয় মানুষ এই বিশ্বাসে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে।

ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জায়োনিস্ট ইসরায়েল, সৌদি রাজতন্ত্র ও আইএস। কারণ জায়োনিস্টের ইন্টারেস্ট গ্রুপই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি করেছে, যা ট্রাম্প নস্যাৎ করে দেবে। ‘সৌদি আরবকে তাদের নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে ডলার ব্যয় করতে হবে।