শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদে মুনিরার মুখ

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ২৫, ২০১৭
news-image

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মুনিরা আহমেদ। ৩২ বছর বয়সী এই তরুণী থাকেন নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায়। সাত বছর আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাকে হিজাব বানিয়ে নিজের একটি ছবি তুলেছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে এখন পোস্টার আকারে মুনিরার সেই ছবি। ওই ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুত্ববাদই উঠে এসেছে বলে মনে করছেন মুনিরা। তাঁকে নিয়ে গত সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা।
মুনিরার ছবির পোস্টার মার্কিনদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলার পর থেকে অনেকেই তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন, হিজাব পরা কবে ছেড়ে দিলেন? তাঁর উত্তর, ‘একদল তরুণী আমাকে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি তাদের বলেছি, আমি কখনোই এটি পরতাম না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি জানান, মুনিরা নিউইয়র্কের সুপরিচিত দম্পতি নার্গিস আহমেদ ও মুশতাক আহমেদের মেয়ে। মুশতাকের বাড়ি বাংলাদেশের পাবনায় এবং নার্গিসের কুমিল্লায়। মুনিরা ফ্রিল্যান্স ইভেন্টস প্ল্যানার হিসেবে কাজ করছেন। ফটোগ্রাফিতেও তাঁর প্রবল আগ্রহ।
মুনিরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওই ছবিটি সাত বছর আগে তোলা। কল্পনায়ও ছিল না যে ওই ছবি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠবে। ওয়াশিংটনে পথযাত্রায় এসে অসংখ্য নারীর হাতে সেই ছবি দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলেছি, তাঁদের হাতে আমার ছবির পোস্টার। কেউ বুঝতেও পারেনি ছবিটা আমার। পরে যখন জানিয়েছি, সবাই বিস্মিত হয়েছে, আমাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেছে।’

১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান মুনিরার মা-বাবা। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা—সবই কুইন্সের জ্যামাইকা এলাকায়। নাইন-ইলেভেনের হামলাস্থল গ্রাউন্ড জিরোর সামনে সাত বছর আগে মুনিরার ওই ছবিটি তুলেছিলেন তাঁর বন্ধু রিদওয়ান আদহামি।

ওই ছবি তোলার উদ্দেশ্য ছিল, সবার কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মুনিরার ভাষায়, ‘এটি কোনো কিছুরই বিরোধী নয়। এটি বলছে, আমি তোমাদের মতোই একজন আমেরিকান। আমি একজন আমেরিকান ও একজন মুসলিম—এই দুই পরিচয়েই আমি গর্ববোধ করি।’

শুধু মুনিরার ছবি নয়, তিনি নিজেও প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। গত শনিবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। মুনিরার মতে, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী হওয়াটা হতাশার। এটি দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এখানে এখনো এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন আমেরিকায় ভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষকে পৃথক করতে হবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, আমেরিকার মূল্যবোধ এটি নয়। মুসলিমদের নিষিদ্ধ করার ধারণাটি পুরোপুরি অযৌক্তিক। বহুত্ববাদই এ দেশকে বিশ্বের মধ্যে বিশেষ করে তুলেছে। আমাদের বৈচিত্র্যই পুরো পৃথিবীর ঈর্ষার কারণ।’

মুনিরার ছবি থেকে পোস্টারটি তৈরি করেছেন শিল্পী শেপার্ড ফেইরে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিকৃতি এঁকে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। মুনিরার ছবিসংবলিত পোস্টারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘উই দ্য পিপল’। এ ছাড়া এক কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে ও লাতিন নারীর ছবি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরও দুটি পোস্টার। তবে মুনিরার ছবি থেকে তৈরি পোস্টারটিই যে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা হচ্ছে, মুনিরার ছবি থেকে তৈরি এই পোস্টারটির সাংস্কৃতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

গত শনিবার ট্রাম্পবিরোধী যে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, সেটি মুনিরাকে আশার আলোও দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি সবার ভালোবাসা অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমি আর বাইরের কেউ নই। সবার মাঝেই আছি আমি। এটা ছিল অনেকটা ধুলোর ঝড় শেষ হয়ে যাওয়ার পর শান্ত, নিরুপদ্রব এক অনুভূতি।