শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আইনি জটিলতায় এনবিআরের অর্থ পাচার মামলা

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়ের করা মামলাগুলো আইনি জটিলতায় থমকে আছে।

সংশোধিত মানি লন্ডারিং আইনে এনবিআর মামলা তদন্ত করার ক্ষমতা লাভ করলেও আদালতে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দায়ের করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।কারণ, আইনে তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হলেও চার্জশিট দাখিলে ‘কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে’ অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণে এখনো শেষ হয়নি বিধি প্রণয়নের কাজ।

সংশোধিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৫ এর ১২ ধারায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপরিহার্যতার কথা বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলতে কোন সংস্থার অনুমোদন নিতে হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

এ আইনের ১২ (১) উপধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, [সরকার কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের] অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারার্থ আমলে গ্রহণ করিবে না।

উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধের তদন্ত সমাপ্ত হইবার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিবার পূর্বে ১২ [উপ-ধারা (১) এর অধীন নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের] পূর্বানুমোদন গ্রহণ করিবেন এবং প্রদত্ত অনুমোদনপত্রের একটি কপি প্রতিবেদনের সহিত আদালতে দাখিল করিবেন।

যদিও আইনে সরকারকে বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আইন সংশোধনের এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বিধি প্রণয়ন হয়নি। এর ফলে মানি লন্ডারিং আইনে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার তদন্তকাজ শেষ হলেও চার্জশিট দিতে পারছে না শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এ জন্য শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের  বিএফআইইউ ( বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) বরাবর চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

বিধি দ্বারা যথাযথ ‘কর্তৃপক্ষ’ নির্ধারিত না হওয়ার চার্জশিট দাখিলে সৃষ্ট জটিলতা অবহিত করা প্রসঙ্গে দেওয়া চিঠিতে বিধি প্রণয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রস্তুতকৃত চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

গত ২ ফে্ব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর ডেপুটি গভর্নর বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই ভারত হতে আগত যাত্রী মো. ফরিদ হোসেনের কাছ থেকে ৯৪ হাজার ৬৪৯ মার্কিন ডলার, ৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার, ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০ ভারতীয় রুপি ও ২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত উদ্ধার করা হয়্। উদ্ধারকৃত বৈদেশিক মুদ্রাগুলোর জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাষ্ট্রীয় গুদামে জমা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে ওই বছরের ২২ আগস্ট শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল, বেনাপোলের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা উম্মে ছালমা সুলতানা বাদী হয়ে একটি মামলা (মামলা নং ৪২) দায়ের করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে উম্মে ছালমা সুলতানা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দয়াল মণ্ডল মামলাটি তদন্ত করেন।

ইতিমধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত সম্পন্ন করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছেন। তবে চার্জশিট দাখিলের পূর্বে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারা-১২ অনুযায়ী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর বিধি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন থাকায় এখনো উক্ত ‘কর্তৃপক্ষ’ নির্ধারণ হয়নি। ফলে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত চার্জশিট আদালতে দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া এ রকম আরো কয়েকটি মামলার তদন্ত চলমান আছে। যার চার্জশিট দাখিল করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

তাই ওই মামলাগুলো চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিলের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ ও সংশোধনী আইন-২০১৫ অনুযায়ী বিধি প্রণয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে প্রস্তুতকৃত চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, ‘আমাদের অধীন বেশ কিছু মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষ হলেও আদালতে দাখিল করতে পারছি না। কারণ, আইনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি আইনে। এ জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, এ বিষয়টি দ্রুত সুরাহা হোক।’

২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট সংশোধিত মানি লন্ডারিং আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। এরপর ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি সংশোধন হয়। যা পরবর্তী সময়ে সংসদে পাস করা হয়। এ আইনে দুদকের পাশাপাশি বেশ কিছু সংস্থাকে মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

সুত্র, রাইজিংবিডিক