শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

গ্যাং যুদ্ধে আদনানই প্রথম শিকার

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০০১ সালে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে একটি গ্যাং দিয়ে যাত্রা শুরু।

এরপর গত ১৫ বছরে উত্তরায় তৈরি হয়েছে ৩০টির বেশি গ্যাং, যার সদস্য প্রায় শতাধিক। এই সময়ের ভিতর গ্যাংদের মধ্যে আঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে হত্যার ঘটনা না ঘটলেও গত ৬ জানুয়ারি স্কুলছাত্র আদনান কবির হত্যার শিকার হয়।

বুধবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে আদনান হত্যার অভিযোগে ডিসকো বয়েস গ্যাং ও বিগ বস গ্যাংয়ের দলনেতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহম্মেদ সেতু ওরফে ডিসকো সেতু (২২), মো. আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), মো. শাহীনুর রহমান (১৭), মো. রমজান মোবারক (১৭), মো. সেলিম খান (২৩), মো. ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২), জাহিদুল ইসলাম জুইস (২১)।

এদের মধ্যে শহরিয়ার ডিসকো বয়েস গ্যাং এবং ছোটন বিগ বস গ্যাংয়ের দলনেতা। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু, দুটি চাপাতি, দুটি রড, তিনটি চেইন, তিনটি স্প্রে কালার বোতল, দুটি স্কুলব্যাগ, চার পুরিয়া গাঁজা ও ১৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদনান হত্যায় তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উত্তরায় ৩০টির মতো গ্যাং গ্রুপ আছে। এর প্রথমটি ২০০১ সালে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ওই এলাকায় কাকরা, জি ইফনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, ডিসকো বয়েস, নাইন স্টার, নাইন এম এম বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন, আলতাফ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, গ্যাং গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। শুরুর দিকে তৈরি হওয়া এসব গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘাত-প্রতিঘাত হতো। তবে ৬ জানুয়ারি আদনার হত্যার মধ্য দিয়ে গ্যাংদের মধ্যে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে।’

যারা গ্যাং করে তাদের বেশির ভাগই  উত্তরা এলাকার নামিদামি স্কুলের শিক্ষার্থী জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘তবে এদের মধ্যে ছাত্র নয় এমন সদস্যও রয়েছে। তাদের মূল কাজ হলো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র‌্যাগিং, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দ করে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করা, ছিনতাই, অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করাসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাংভিত্তিক এদের নিজস্ব লোগো রয়েছে,  যা তারা ফেসবুক ও বিভিন্ন দেয়ালে গ্যাংয়ের প্রচারে ব্যবহার করে। ফেসবুকে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া এবং একে অন্যের আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করত।’

জিজ্ঞাসাবাদে আদনানকে হত্যার কারণ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, গত ৩ জানুয়ারি ডিসকো বয়েস ও বিগ বস গ্যাংয়ের সদস্যরা নাইন স্টার গ্যাংয়ের লিডার রাজুকে ১৩ নম্বর সেক্টরের ব্রিজে মারধর করে। জবাবে ৫ জনুয়ারি আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগ বসের গ্যাং লিডার ছোটনকে আক্রমণ করে। পরে ৬ জানুয়ারি ডিসকো বয়েস গ্যাং ও বিগ বসের সদস্যরা আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে। পরে তার মৃত্যু হয়। তবে ওই দিন তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইন স্টার গ্রুপের রাজুর ওপর হামলা করা।

প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে আদনান কবিরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবির হোসেন উওরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৭) দায়ের করেন।