শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

মুশফিকদের আরেকটি হতাশার দিন

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
news-image

ক্রীড়া ডেস্ক:

দিনের খেলা ৩ ওভার বাকি, এমন সময়ে উমেশ যাদবের ১৪২ কিলোমিটার গতির একটি বল। অফ স্টাম্পে পড়ে বলটি সুইং করে ভেতরে ঢোকার মুখে ব্যাট চালালেন সৌম্য সরকার। ব্যাট ও প্যাডের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া বলটি ডাইভ দিয়ে গ্লাভসে জমা করলেন ঋদ্ধিমান সাহা। উইকেটকিপার বল ধরে নির্বিকার থাকলেও চেতেশ্বর পূজারা, মুরালি বিজয়, বিরাট কোহলিরা সমস্বরে ক্যাচের আবেদন করলেন।

সেই আবেদনে আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস সাড়া না দিলে রিভিউ চাইলেন অধিনায়ক কোহলি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল, বল সৌম্যর ব্যাটের কানা ছুঁয়েছিল। পাল্টাল আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ হায়দরাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করল শেষ বিকেলে সৌম্যকে হারানোর আক্ষেপ দিয়ে। যদিও দিনের শেষটা পুরো দিনেরই প্রতীক হয়ে রইল। দিনের বাকি সময়টাও যে হতাশাতেই গেছে মুশফিক-সাকিব-মিরাজদের।

প্রথম দিন বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসারত দিয়েছিল বাংলাদেশ। মুরালি বিজয় ও বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ভারত দিন শেষ করেছিল ৩ উইকেটে ৩৫৬ রানে। গত বছর চারটি সেঞ্চুরি করে তিনটিকেই ডাবলে রূপ দিয়েছিলেন। এ বছরের প্রথম সেঞ্চুরিটিকেও আজ ডাবল রূপান্তর করলেন কোহলি। টানা চার সিরিজের চারটিতেই ডাবল সেঞ্চুরি, টেস্ট ইতিহাসেই নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের! স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ও রাহুল দ্রাবিড়ের আছে টানা তিন সিরিজে। যদিও ডাবলের আগেই ফিরতে পারতেন ভারতীয় অধিনায়ক।

কোহলি তখন ১৮০ রানে ব্যাট করছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়াও দিয়েছিলেন। কিন্তু  রিভিউ নেন কোহলি। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ব্যাটে লাগেনি, ইম্প্যাক্টও ভেতরেই ছিল। কিন্তু অফ স্পিনারের বল লেগ স্টাম্প মিস করত বলে বেঁচে যান কোহলি। এরপর ভারতীয় অধিনায়ক যখন তাইজুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২০৪ রান। ২৪৬ বলে সাজানো ইনিংসে চার ২৪টি।

কোহলির আগে অজিঙ্কা রাহানেকেও ফিরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে সফল বোলার তাইজুল। রাহানেকে ফেরাতে বড় অবদান ছিল অবশ্য মিরাজের। তাইজুলের খানিকটা টার্ন ও বাউন্স থাকা বল শর্ট কাভারে খেলেছিলেন রাহানে। ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মিরাজ। কোহলির সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ২২২ রানের বড় জুটি গড়া রাহানে ফেরেন ব্যক্তিগত ৮২ রানে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও বাদ পড়া করুন নায়ারের জায়গায় দলে এসে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদানটা বেশ ভালোই দিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশকে দিনের ‘সবচেয়ে বড় হতাশাটা’ উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। রাহানের বিদায়ের পর উইকেটে আসা ঋদ্ধিমান সাহা তখন ৪ রানে ব্যাট করছিলেন। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান তাইজুলের একটি বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ, সেই সহজ সুযোগটাই হাতছাড়া করেন মুশফিক। বাংলাদেশের উইকেটকিপার প্রথম প্রচেষ্টায় বল স্টাম্পেই লাগাতে পারেননি। পরের চেষ্টায় যখন বেল ফেললেন, ততক্ষণে নিরাপদে ফিরে এসেছেন ঋদ্ধিমান।

৪ রানে জীবন পাওয়া সেই ঋদ্ধিমানই তুলেন নিলেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। বর্তমানে ভারতের সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির পথে ষষ্ঠ উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে ৭৪ ও সপ্তম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে গড়েন ১১৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ঋদ্ধিমানের সেঞ্চুরির একটু পরেই ইনিংস ঘোষণা করেন ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি। ততক্ষণে ভারত উঠে গেছে রানের পাহাড়ে, ৬ উইকেটে ৬৮৭ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ভারতের পঞ্চম সর্বোচ্চ। ঋদ্ধিমান ১৫৫ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তামিমের হাতে একবার জীবন পাওয়া জাদেজা ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন। মিরাজের শিকার হওয়া অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান।

ভারতের হয়ে একজন ডাবল আর দুজন সেঞ্চুরি করলেও বাংলাদেশের পক্ষে ‘সেঞ্চুরি’ করেছেন পাঁচজন! মিরাজ ৪২ ওভারে দিয়েছেন ১৬৫ রান, তাইজুল ৪৭ ওভারে ১৫৬, তাসকিন ২৫ ওভারে ১২৭, সাকিব ২৪ ওভারে ১০৪, রাব্বি ১৯ ওভারে ঠিক ১০০ রান। এর মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে সফল বোলার তাইজুল। মিরাজ ২টি আর তাসকিন ম্যাচের প্রথম ওভারে নিয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের উইকেট।

রানের পাহাড় মাথায় নিয়ে শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন তামিম ও সৌম্য। দুজন ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৭ রান যোগ করেন। কিন্তু দিনের খেলা ৩ ওভার বাকি থাকতে সৌম্যর সেই আক্ষেপ নিয়ে বিদায়। নইলে বাংলাদেশ দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই কাল তৃতীয় দিন শুরু করতে পারতো! তামিম-মুমিনুলদের এখন কঠিন পথই পাড়ি দিতে হবে। ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে নামাতে এখনো ৪৪৭ রান চাই সফরকারীদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত প্রথম ইনিংস: ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬ ডিক্লে (কোহলি ২০৪, বিজয় ১০৮, ঋদ্ধিমান ১০৬*, পূজারা ৮৩, জাদেজা ৬০*, তাইজুল ৩/১৫৬, মিরাজ ২/১৬৫, তাসকিন ১/১২৭)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪ ওভারে ৪১/১ (তামিম ১৫*, মুমিনুল ১*, সৌম্য ১৫; উমেশ ১/২)।