শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

গায়েত্রীর সঙ্গে বাবুলের আরেক পরকীয়া ফাঁস

SONALISOMOY.COM
মার্চ ১৮, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গায়েত্রী অমরসিং নামে ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়া ছিল। চার বছর আগে বাবুল আক্তারের সঙ্গে গায়েত্রীর পরিচয় হয়। বাবুল তখন কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় গায়েত্রী জাতিসংঘের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠানের কক্সবাজার শাখায় কর্মরত ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনাইটেড নেশন্স হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর)। গায়েত্রী এ প্রতিষ্ঠানের প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েট অফিসার ছিলেন।

মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া এক আসামিকে ক্রসফায়ারে দিতে বলেছিলেন মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। তখনও বাবুল আক্তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেননি। এ অভিযোগ করেন বাবুল আক্তারের শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফ।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মিতু হত্যার ৫ দিনের মাথায় তার (বাবুল) কাছে একটি ফোন এসেছিল। চট্টগ্রাম থেকে পুলিশের এক কর্মকর্তা ফোন করে একজনকে (সম্ভবত মুসা) গ্রেফতারের কথা জানান। তখন গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে দেয়ার নির্দেশ দেয় বাবুল আক্তার। ওই সময় কোনো একটি কাজে বাবুল আক্তারের রুমে (কক্ষ) গিয়েছিল আমার ছোট মেয়ে শায়লা মোশাররফ নিনজার স্বামী ডা. সাইদুর রহমান। নিনজার স্বামী আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা বাবুল আক্তারের কাছে জানতে চাই, কাকে সে ক্রসফায়ারে দিতে বলছে? জবাবে সে (বাবুল) বলেছিল, মিতু হত্যার এক আসামি ধরা পড়েছে। যারা খুন করিয়েছে তারা খুবই প্রভাবশালী। গ্রেফতারকৃতকে বাঁচিয়ে রাখলে গডফাদাররা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তাই তাকে ক্রসফায়ারে দিতে বলেছি।’

বাবুল আক্তারের শাশুড়ি শাহেদা মোশাররফ জানান, গত জুনে চট্টগ্রামে মিতু হত্যার পর থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত বাবুল আক্তার তাদের বনশ্রী মেরাদিয়ার বাসায় ছিলেন। এ বাসায় থাকাবস্থায় বাবুল আক্তার তিনটি মোবাইল ফোন সেটে ৬টি নম্বর ব্যবহার করতেন। মিতু হত্যার পর বাবুল ওইসব নম্বর দিয়ে সারা রাত কোথায় কোথায় যেন কথা বলতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহেদা মোশাররফ বলেন, গায়েত্রী অমরসিং নামে ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়া ছিল। চার বছর আগে বাবুল আক্তারের সঙ্গে গায়েত্রীর পরিচয় হয়। বাবুল তখন কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় গায়েত্রী জাতিসংঘের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠানের কক্সবাজার শাখায় কর্মরত ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনাইটেড নেশন্স হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর)। গায়েত্রী এ প্রতিষ্ঠানের প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েট অফিসার ছিলেন।

শাহেদা মোশাররফ জানান, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও এসব বিষয়ে অবগত করা হয়েছেন। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান কাছে দাবি করেন, এ বিষয়ে তাকে কিছু অবগত করা হয়নি।

বাবুল আক্তারের শাশুড়ি বলেন, ‘মিতু নিহত হওয়ার পর চট্টগ্রামের বাসা থেকে ওই এসএমএসের কপিগুলো সংগ্রহ করি। পাশাপাশি বাবুলের পরকীয়া সংক্রান্ত আরও কিছু গোপন তথ্য ও ডায়েরি সংগ্রহ করি। ওই ডায়েরির মাধ্যমেই আমরা গায়েত্রীর নাম জানতে পারি। আইয়ুশ নামে এক পুত্রসন্তানের জননী গায়েত্রী। আইয়ুশের বয়স এখন ১০। মিতুর বাসায় আইয়ুশকে রেখে বাবুল আক্তার গায়েত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যেত। মিতু প্রথমে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ২০১৪ সালে বাবুল আক্তার যখন মিশনে দেশের বাইরে যায় তখন একটি পুরনো মোবাইল ফোন অব্যবহৃত অবস্থায় আলমারিতে রেখে যায়। গেমস খেলার জন্য মিতু একদিন ওই মোবাইল সেটটি বের করে তার ছেলে মাহিরকে দেয়। এ সময় ওই সেটে মিতু ২৩টি ইনকামিং এসএমএস দেখতে পায় । পরে মিতু ওই মেসেজগুলো নিজ হাতে সাদা কাগজে লিখে রাখে। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে টেলিফোনে বাবুল আক্তারের অনেক কথাকাটাকাটিও হয়েছিল। ওই বছরের শেষের দিকে বাবুল আক্তার ছুটি নিয়ে দেশে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে অনেক ঝগড়াঝাঁটি হয়। একপর্যায়ে মিতুর কাছ থেকে বাবুল ওই ফোন সেটটি কেড়ে নেয়। পাশাপাশি এসএমএসগুলো ডিলিট করে ফেলে। মিতুকে নানা ধরনের হুমকি দেয়।’

জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের সিকিউরিটি অফিসার মজিবুর রহমান জানান, গায়েত্রী একসময় ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার শাখায় কর্মরত থাকলেও এখন নেই। প্রায় দু’বছর আগে তিনি বদলি হয়েছেন। এখন তিনি জেনেভায় ইউএনএইচসিআর সদর দফতরে কর্মরত। কক্সবাজারে থাকার সময় তিনি (গায়েত্রী) কারও সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন কিনা তা তার জানা নেই।

এ ছাড়া বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে যে বাসায় থাকত সে বাসার পাশের ফ্ল্যাটের বাড়াটিয়া, বাবুলের বডিগার্ড, কনস্টেবল এবং কাজের মেয়েদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে মিতুকে কতটা নির্যাতন করা হতো। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন এবং আত্মহত্যাচেষ্টার প্ররোচনার অভিযোগে মামলাও করতে চেয়েছিলাম। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে তা করিনি।’

তিনি জানান, দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মিতু। হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে একবার যখন মিতু আত্মহত্যার চেষ্টা চালান, তখন বাবুল পাশের রুমে বসে ফেসবুকে চ্যাট করছিলেন। মাহির (মিতু-বাবুলের ছেলে) গিয়ে তাকে জানায়, তার মা ভেতর থেকে ঘরের দরজা আটকে দিয়েছে। এ কথা শোনার পর বাবুল আক্তার মাহিরকে ধমক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। পরে কাজের মেয়ে ফাতেমা দ্রুত বাইরে গিয়ে কলিং বেল চেপে রুমের দরজা নক করে বলে, আপা মেহমান এসেছে। দরজা খুলুন। এরপর দেখা যায়, মিতুর ওড়না ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।

বাবুল আক্তারের শ্যালিকা শায়লা মোশাররফ নিনজা বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও একদিনের জন্যও বাবুল তার স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে যাননি। এমনকি তার বাচ্চাদেরও নিয়ে যাননি। মিতু হত্যার পর আমাদের বাসায় যখন ছিলেন, তখন প্রতি শুক্রবার তিনি (বাবুল) বাসা থেকে বের হতেন। আমরা প্রথমে মনে করতাম কবর জিয়ারত করতে গেছেন। পরে কবরস্থানের দারোয়ান জানান, আপনাদের যে লোক মারা গেছে তার স্বামী তো কখনও আসেননি। এরপর আমরা বিষয়টি জানলাম।’

তিনি বলেন, ‘বাবুল আক্তার আমাদের না জানিয়েই চট্টগ্রাম থেকে বাসার মালামাল আনেন। তখন আমার বাবা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি যে নতুন বাসায় উঠছ তা আমাদের জানালেও পারতে। তখন তার জবাব ছিল, একজন মরে গেলে কি তার সঙ্গে আমাকেও মরে যেতে হবে? বাকি জীবনটা কী মরা মানুষের সঙ্গেই কাটিয়ে দিতে হবে?’

শায়লা মোশাররফ নিনজা আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর যখন বাবুল আক্তারকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ১৫ ঘণ্টা আটকে রাখেন, তখন আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তিনিই খুন করেছেন। পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজত থেকে আসার পর আমাদের জানান, তিনি চাকরি ছেড়ে দিতে স্বাক্ষর করে এসেছেন। কেন তিনি স্বাক্ষর করেছেন এর কোনো সদুত্তর দেননি। অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর তিনি জানান, পুলিশ তার বাচ্চাদের (মাহির এবং টাপুর) মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। বলেছে, অনেক এমপি-মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তা তার শত্রু ছিল। তাছাড়া তার কাছে ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিষয়ে অনেক তথ্য আছে। যেগুলো সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এসব কারণে তার চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমরা তখন তার কথা বিশ্বাস করেছি। তারপরও আমরা তার চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছি। আমরা মনে করেছিলাম, চাকরিটা ফিরে ফেলে হয়তো আমার বোনের সঠিক বিচারটা পাওয়া যাবে।’

উল্লিখিত সব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে বুধবার বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ডায়াল ও এসএমএস পাঠানো হয়। রাত রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ফিরতি কল করেননি অথবা এসএমএসের উত্তর দেননি।

এ ছাড়া দুপুরে তার বর্তমান কর্মস্থল আদ-দ্বীন হাসপাতালের অফিস এবং মগবাজারের বাসায় (নাহার ভিলা) এ প্রতিবেদক সশরীরে হাজির হলেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। বাসার অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী জানান, তিনি অফিসে আছেন। আর অফিসের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিনি আজ অফিসে আসেননি। তিনি (বাবুল) মাঝে মধ্যে অফিস করেন।