শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সিলেটে ব্রিফিংয়ে সেনা কর্মকর্তা

SONALISOMOY.COM
মার্চ ২৬, ২০১৭
news-image

সিলেট প্রতিনিধি

দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর পাঠানপাড়ার আতিয়া মহল ঘিরে অভিযানের তৃতীয় দিন রোববার বিকালে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।

ভেতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী জানিয়ে তিনি বলেছেন, অভিযানে ‘ভালো’ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন তা শেষ হবে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই ব্যক্তির মালিকানাধীন এই পাঁচ তলা ও চার তলা বাড়ি দুটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে পুলিশ।

শুক্রবারও ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। প্রথম দিনে ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে উদ্ধার করা হয় বাড়ি দুটির ভেতরে আটকে পড়া ৭৮ জনকে। তার মধ্যেই সন্ধ্যায় কাছের এলাকায় জঙ্গি হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন।

রোববার সকাল থেকে কয়েক দফা গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ মেলার পর বিকালে সাংবাদিকদের সামনে আসেন সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল।

ভেতরকার অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “দুজন নিহত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত দেখতে পেয়েছি। একজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল।

“দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করেছে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়।”

ভেতরে আর কতজন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এক বা একাধিক ভেতরে আছে। তারা খুব সতর্ক, সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে।”

নিহত দুজন পুরুষ বলে জানানো হয়েছে। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে নারী রয়েছে কি না- প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, “মহিলা আছে কি না, আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।”

যে বাসাটি জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, তাতে কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে এক দম্পতি তিন মাস আগে ওঠেন বলে জানান বাড়ির মালিক উস্তার আলী। শুক্রবার অভিযানের সময় তাদের সাড়াও দেখা যাচ্ছিল।

ভেতরে থাকা জঙ্গিরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং বেশ দক্ষ বলে মনে করছে সেনাবাহিনী।

ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, “তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে, এক্সপ্লোসিভ আছে, আআইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড।

“আমরা যে গ্রেনেড ছুড়েছি, তারা সেগুলো ধরে উল্টা আবার আমাদের দিকে নিক্ষেপ করেছে। টিয়ার শেল ছুড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে।”

ভেতরে ‘বড়’ কোনো জঙ্গি থাকতে পারেন বলে ধারণার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও জানিয়েছেন।

নানা স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে জঙ্গিরা বাড়ি দুটিতে অভিযান চালানো কঠিন করে তুলেছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার ফখরুল।

“তারা আইইডি ফিক্স করেছে, তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, জঙ্গি যারা আছে তারা ভাল জ্ঞান রাখে কীভাবে দুর্গম করে তুলতে হয়।

সুতরাং অপারেশন শেষ করাতে ভালো ঝুঁকি আছে, এজন্য সময় লাগছে।”

কখন নাগাদ অভিযান শেষ হতে পারে- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কমান্ডোরা চেষ্টা করছে। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে অপারেশন কখন শেষ হবে। অপারেশন পরিচালনা বেশ ডিফিকাল্ট হচ্ছে।”

“আজ সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে হোল তৈরি করে… সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়,” বলেন তিনি।

ভবন হেলে পড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “ভবন হেলে পড়ার খবর ঠিক নয়, ফায়ারিংয়ে সমস্যা হওয়ায় আমরা একটি দেয়াল ফেলে দিয়েছি। কোনো টিনের চালও উড়ে যায়নি।”

সেনাবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানান ব্রিগেডিয়ার ফখরুল।

আটকেপড়াদের শনিবার উদ্ধার করে আসার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বাড়ির সামনে এবং বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বসিয়েছে বলে সামনে দিয়ে ঢোকা নিরাপদ ছিল না। কমান্ডোরা কৌশলে মই ব্যবহার করে পাশের ভবন থেকে গিয়ে গ্রিল কেটে লোকজনকে বের করে আনে।

“ঝড় বৃষ্টি ছিল, জঙ্গিরা এ অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না,” বলেন ব্রিগেডিয়ার ফখরুল।

পাশের একটি ভবন থেকে রোববার এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল অন্যদের উদ্ধারের সময় তাকে আনা যায়নি। ইনি আতিয়া মহলের নন।”

গত বছর গুলশান হামলার পর এই প্রথম কোনো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়েস।

প্রথমে সোয়াট অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটে বলে সেনা কর্মকর্তারা জানান। সেনাবাহিনী অভিযানের নাম বদলে দেয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’।