বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সংশোধন হয়নি পাঠ্যবইয়ের ভুল

SONALISOMOY.COM
এপ্রিল ৬, ২০১৭
news-image

অনলাইন ডেস্ক : পাঠ্যপুস্তকে ভুলের ঘটনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ঊর্ধ্বতন নয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও হলেও সেই ভুল সংশোধন হয়নি তিন মাসেও। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্কুলে প্রথম সাময়িকী পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষার্থীরা পড়ে যাচ্ছে ভুলে ভরা বই।

ভুল সংশোধনের বিষয়ে এনসিটিবি বলছে, তারা আগেই ভুল সংশোধন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠিয়েছে। মতামত দিতে দেরি হওয়ায় ব্যবস্থা নিতেও দেরি হচ্ছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমরা মাসেক খানেকেরও বেশি আগে ভুল সংশোধন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে মতামত চেয়েছিলাম। তারা আবার আমাদেরকে বুধবার চিঠি দিয়েছে- কোন প্রক্রিয়ায় আমরা ভুলগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবো তা জানতে চেয়েছে। সে বিষয়েও আমরা আমাদের মতামত প্রস্তুত করেছি। আজকেই (বৃহষ্পতিবার) আমরা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবো। এরপর হয়তো দুই/একদিনের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ভুল সংশোধনগুলো পাঠাবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভুল শিখছে না। কারণ আমাদের শিক্ষকরা আছেন। তারা সঠিকটাই পড়াচ্ছেন।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের মতামত এনসিটিবিকে জানিয়েছি। এখন তারা ব্যবস্থা নেবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুতই সাড়া দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি নেই।’

গত ১ জানুয়াই বই বিতরণের পর পর ভুল ধরা পড়ে। সে সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভুলগুলো সঠিক করে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হবে।

তিন মাস শেষে চতুর্থ মাস পড়েছে। এখনও কেন ভুল সংশোধন হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। রাতারাতি সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। শিগগিরই ভুল সংশোধনও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাবে।’

প্রকাশ না করার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বড় ভুলগুলো চিহ্নিত এবং তথ্য হালনাগাদ করে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে পরিমার্জিত পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

বিষয়বস্তু পরিবর্তনের কী হবে

এবার পাঠ্যবইয়ে ভুলের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনে নানা পরিবর্তনের সমালোচনাও হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখনি কেন বাদ দেয়া হয়েছে, সরকারের কাছে সেটি জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, পাঠ্যপুস্তকগুলোয় ভুল ও তথ্য-ইতিহাস বিকৃতির ছড়াছড়ি তিন ধরনের। এগুলো হলো, বানান ও তথ্যগত বিকৃতি, বাক্য গঠনে ভুল এবং মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির অনুপ্রবেশ ঘটানো। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুটি ভুল সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে হয়েছে। আর তৃতীয় ভুলটি পরিকল্পিত। যারা করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের জন্য করেছেন।

সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে যেসব পরিবর্তন এসেছে পাঠ্যবইয়ে, সেগুলো পরিবর্তন কঠিন বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বিষয়বস্তু বদলাতে সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দীর্ঘ সময়েরও দরকার। রাতারাতি পাঠ্যসূচি পরিবর্তন অসম্ভব। এনসিটিবির অনেকে পাঠ্যবই পুনর্বিন্যাসের পক্ষে।’

নয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

পাঠ্যবইয়ে ভুলের ঘটনায় বুধবার এনসিটিবির চার কর্মকর্তার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখার সদস্য আব্দুল মান্নানকে ঝিনাইদহের সরকারি কে সি কলেজে এবং সম্পাদক সহযোগী গৌরাঙ্গ লাল সরকারকে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজে, বিশেষজ্ঞ মোসলে উদ্দিন সরকারকে পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ ও হাননান মিঞাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে পাঠানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার এনসিটিবির সচিব ইমরুল হাসানকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে এবং গবেষণা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা লিপিকে পাঠানো হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে।

এনসিটিবির তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি আর আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদীনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়।

চলতি শিক্ষাবোর্ডে চার কোটি ৩৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর হাতে ৩৬ কোটিরও বেশি বই তুলে দেয়ার সাফল্য ম্লান হয়ে যায় বইয়ে নানা ভুল ভ্রান্তি থাকার ঘটনায়। পাঠ্যপুস্তক বিতরণের পর পর বইয়ে ভুল নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। আর কাদের জন্য এই ভুল তা তদন্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আলাদা একটি তদন্ত কমিটি করে পাঠ্যপুস্তব বোর্ড এনসিটিবিও।