শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

আ.লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন ও গণমুখী বাজেট

SONALISOMOY.COM
জুন ৮, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটকে প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা উল্লেখ করে রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেছেন, গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রতিশ্র“তি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল সেই ইশতেহার বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে সেই বাজেট ঘোষণা করেছেন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটের মাধ্যমে জাতির সকল প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে বৃহ¯পতিবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামূল হক তাঁর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।
মাননীয় সংসদ সদস্য তাঁকে বার বার মনোয়নয়ন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে এবং তাঁকে নির্বাচিত করায় এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন।
এনামূুল হক এই বাজেটকে নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের বাজেট উল্লেখ করে বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছিল তা পূরণের লক্ষেই এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। তার প্রতিচ্ছবি রয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে।
তিনি বলেন, এই বাজেটের ফলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশে পরিণত হবে।

জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামূল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। বক্তব্যে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বাগমারাবাসীকেও ধন্যবাদ জানান ।
তিনি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর এদেশের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যুগোপযোগী।
সাংসদ এ বাজেট কে কৃষিবান্ধব ও বিদ্যুৎবান্ধব বাজেট আখ্যায়িত করে বলেছেন এ দুই ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এসব খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা ওই দুই খাতকে আরো সমৃদ্ধশালী করবে।
সাংসদ এনামুল হক তাঁর নির্বাচনী এলাকা বাগমারার কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমান সবজি উৎপাদন হয়। এখান থেকে তাজা মাছ রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হয়। এজন্য বাগমারায় একটি কৃষি মার্কেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সংসদ

এনামুল হক তাঁর নির্বাচনী এলাকার আইন শৃংখলা বর্তমান পরিস্থিতি তোলে ধরে বলেছেন, বাগমারা এক সময় জঙ্গিবাদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসমুক্ত আধুনিক বাগমারায় রূপান্তর হয়েছে। বিগত জোট সরকার এলাকায় বাংলা ভাই বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছিল। রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শান্তির বাগমারায় পরিণত হয়েছে।

সাংসদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাগমারার আট বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, এ সময়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করা ছাড়াও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এ সময়ে দুটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি এলাকার নন এমপিওভূক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোকে দ্রুত এমপিওভূক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এনামুল হক নির্বাচনী এলাকায় একটি সরকারি কৃষি কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষণ ইন্সটিউট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
এনামুল হক বাজেট বক্তৃতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, এ সময়ে বাগমারায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বাগমারার সঙ্গে জেলা শহরের সহজে যোগাযোগের জন্য ভবানীগঞ্জ-তাহেরপুর হয়ে নাটোর ও নওগাঁর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আন্তঃউপজেলা সড়ক নির্মাণ করা জরুরী। এজন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রী রাজশাহী গিয়ে এর প্রতিশ্র“তিও দিয়েছেন।

সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক নিজ এলাকার ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এই তথ্যসেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁর নির্বাচনী এলাকার লোকজন বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল, কৃষি সমস্যাসহ বিভিন্ন ভাবে তথ্যকেন্দ্র থেকে উপকৃত হচ্ছে। তিনি এসব তথ্যকেন্দ্রগুলোকে যুগোপযোগি করার জন্য বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন সংসদে।
তিনি স্বাস্থ্য খাতের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, এ সরকারের সময়ে ৩১ শয্যার উপজেলা হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমিউিনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামীণ মানুষদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে।

সাংসদ বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন বিষয়ে বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় বিদ্যুৎখাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ৫ মেগাওয়াট থেকে ৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত করে এই অঞ্চলের ৮৫ শতাংশ লোকজনের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এ বর্তমান সরকারের সময়ে এলাকায় ফায়ারস্টেশন, কর্মসংস্থানন ব্যাংক, পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক চালূ করা হয়েছে। এছাড়াও তাহেরপুর পৌরসভা এলাকায় নতুন অডিটোরিয়াম, শহীদ মিনার ও বাসটার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
একটি শহীদ মিনার একটি পার্ক, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতিযাদুঘর কমপ্লেক্স ও একটি ফায়ার ষ্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
এনামুল হক বাজেট বক্তৃতায় এলাকার উন্নয়নের জন্য আরও বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি হযরত শাহমখমুদ বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানের বিমান বন্দরে উন্নীত এবং কার্গোসার্ভিস চালুর দাবি জানান। এর ফলে এই অঞ্চলের বিভিন্ন পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তিনি রাজশাহীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বলেছেন, বিগত অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি স্বতন্ত্র রেলসেতু নির্মাণেরও দাবি জানানো হয়েছিল। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এটা বাস্তবায়ন হলে উত্তাঞ্চলের লোকজনের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।
তিনি রাজশাহীতে ইপিজেড স্থাপনেরও দাবি জানান। তিনি এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করেন। তিনি বলেছেন, রাজশাহীতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি দ্রুত সবগুলো শিল্প-কলকারখানাকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সাংসদ বক্তৃতার শুরুতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা বীরমুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে বক্তব্য শুরু করেন। পুরো বক্তব্যে তিনি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের বাজেটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে ভূয়সি প্রশংসা করেছেন। এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।