শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে আ’লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যারা

SONALISOMOY.COM
অক্টোবর ২৪, ২০১৭
news-image

সোনালী সময় প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীর ছয়টি আসনের বর্তমান এমপির পাশাপাশি প্রবীন ও তরুন নেতৃত্ব মাঠে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতাদের তৎপরতা বেশী দেখা যাচ্ছে।

এবার নির্বাচনী প্রচারনার বাতাস বইতে থাকে রমজান মাস থেকেই। শুরু হয় ইফতার রাজনীতি। দান খয়রাতও চলে। বিতরন করা হয় শাড়ি লুঙ্গি পাঞ্জাবী চিনি সেমাই। এসব বিতরন করেন বর্তমান এমপিরাই বেশী। আর ঈদ ঘিরে জমে ওঠে প্রচারনা। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজ ছবিসহ নেতাদের ব্যানার, ফেষ্টুন এমনকি পোষ্টার পর্যন্ত লাগানো হয়। বানানো হয় শুভেচ্ছা তোরন। এবার লক্ষনীয় হলো বর্তমান ও প্রবীনদের পাশাপাশি তরুন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে রয়েছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে প্রচার করছেন। তারা নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

সব মিলিয়ে তৃনমুলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বর্তমান এমপিদের বিপক্ষে নিজেদের প্রার্থী হবেন এমন ঘোষনায় অনেকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এতদিন চুপচাপ থাকলেও বেশ কিছু নেতা সরব হয়েছেন। সাবেক এমপি ও বর্তমান নেতৃত্বের বেশ কজন নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। আর এনিয়ে বর্তমানদের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি পালনও হচ্ছে।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) বর্তমান এমপি রয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এবার তার বিপক্ষে মনোনয়ন চাইবেন বলে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তারা হলেন আ:লীগের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি মতিউর রহমান, মন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আ:লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. মকবুল হোসেন।

রাজশাহী-২ (সদর) এ এমপি রয়েছেন জোট প্রার্থী ও ওয়াকার্স পাটির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি ফের মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আসনটি দাবি করা হচ্ছে। এনিয়ে আলোচনাও চলছে।

রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর) এখানে এমপি রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। তার বিপক্ষে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লা, জেলা আ:লীগের সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, আ:লীগ নেতা মোস্তাফিজুর মানজাল ও আলফোর রহমান।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) এখানে বর্তমান এমপি রয়েছেন বিশিষ্ঠ শিল্পপতি এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জি: এনামুল হক। এনামুল হক ২০০৮ সালে মনোনয়ন নিয়ে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এলাকাতে যতেষ্ঠ সুনামও রয়েছে তার। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর রক্তাক্ত বাগমারায় শান্তি ফিরিয়েছে । এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মান, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের নিজ এলাকায় এনে চমক সৃষ্টি করেছেন। এমপি এনামুল হক এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধনসহ দলের সাংগাঠনিক ভীত শক্ত করেছেন। ফলে বর্তমানেও তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আগামীতে তিনিই এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় এক সূত্র নিশ্চিত করেছে । সম্প্রতি দলের কয়েকজন নেতা তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে নানান কথা বলেছেন। এতে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অপরাধে দলীয় পদ থেকে তারা বহিস্কার হয়েছে। এমপি এনামুল হক সারা বছররে ন্যায় এবার ঈদে হাজার হাজার শাড়ি লুঙ্গি পাঞ্জাবী বিতরন ও ঈদ পরর্বতী পুন:মিলনী নামে খানাপনিা আয়োজন করেছেন। দলের হাইকমান্ডে তার খুটির জোর খুব শক্ত বলে এক সুত্রে জানাযায়। প্রবীন নেতা সরদার আমজাদ হোসেন মৃত্যুতে এখানে তার চেয়ে আওয়ামী লীগের শক্ত পার্থী নেই। দলের অন্য কেউ মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত এ আসনে এনামুল হকই আওয়ামী লীগের পার্থী হবেন বলে বাগমারা মানুষের ধারনা । আর আওয়ামী লীগের আসনে বিজয়ী হতে তার কোন বিকল্প নইে।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) এ আসনে এমপি রয়েছেন বহুল আলোচিত সমালোচিত শিল্পপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। খুটির জোরে ২০০৮ সালে আওয়ামলীগের প্রভাবশালী প্রবীন নেতা সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম ফারুককে মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে দিয়ে নির্বাচনী ও বিনা নির্বাচনের এমপি রয়েছেন। এবারো মনোনয়ন চাইবেন প্রবীন নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক। জনপ্রিয় কারা নির্যাতিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহ্সান উল হক মাসুদ। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতিমধ্যেই  গনসংযোগ করছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। বহুল ভাবে আলোচিত সমালোচিত হওয়া এবার ছিটকে পড়তে পারেন বর্তমান এমপি। সেক্ষেত্রে ফারুক কিংবা মাসুদের কপাল খুলতে পারে এমন গুঞ্জন এলাকা জুড়ে।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) এখানে এমপি রয়েছেন শিল্পপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এখানে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমনটি প্রচারনা থাকলেও তার দলের মধ্যে রয়েছে শক্ত প্রতিদদ্বি। গত নির্বাচনে নিজদলের এক প্রার্থীর প্রতিদদ্বিতার মুখে পড়েছিলেন। অন্যদের মত সহজে পার হননি নির্বাচনী বৈতরনী। সাবেক এমপি রায়হানুল হক দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের নেতা লায়ের উদ্দিন লাবলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, ছাত্রলীগের নেতা রোকনুজ্জামান রিন্টুও মনোনয়ন প্রত্যাশি। শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে এর রয়েছেন শক্ত অবস্থানে।

৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বেশীর ভাগ সময় ধরে আসনগুলো বিএনপি জামায়াত জোটের দখলে ছিল। এরশাদ শাসনামলে জাতীয় পাটির কবলে যায়। এরশাদ শাসনের অবসানের পর থেকে আসনগুলো ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল বিএনপির কবজায়। এজন্য রাজশাহী অঞ্চল পরিচিত ছিল বিএনপির দূর্গ হিসাবে। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক সিডরে সেই দূর্গ তছনছ হয়ে যায়।