শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

খালেদার মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতের না

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮
news-image

নিউজ ডেস্ক: বিএনপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দল জামায়াতে ইসলামী প্রায় ১৯ বছর যাবৎ জোটের আন্দোলনে বিএনপির সাথে প্রায় সকল ইস্যুতেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে থাকলেও গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর ১১ ফেব্রুয়ারি জোটের বৈঠকে জোটগত আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও রাজপথের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায়নি।

খালেদার মুক্তির দাবিতে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বে মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি এবং স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলাকালীন জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে প্রথম দিন তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে ১০/১২ জন নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের মানববন্ধনে উপস্থিত থাকলেও ২০ মিনিট পরই তারা কর্মসূচি থেকে সরে পড়ে, যা কারোই নজর এড়ায়নি। এরপর আর কোনো কর্মসূচিতেই তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

জানা যায়, বেগম জিয়ার কারাদণ্ডাদেশের কয়েকদিন পূর্বেই তারেক জিয়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজা কার্যকর হওয়া জামায়াতের তিন নেতা- গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের লন্ডনে বসবাসরত পুত্রদের দাওয়াত দিয়ে তাদের মাধ্যমে জামায়াতকে বেগম জিয়ার দণ্ড হলে রাজপথে সাথে থাকার আহ্বান জানালেও জামায়াত তাতে গুরুত্ব দেয়নি।

খালেদার কারাদণ্ডের পর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নিন্দা জানিয়ে গণমাধ্যমে গতানুগতিক ও সাদামাটা বিবৃতি দিলেও খালেদার মুক্তি ইস্যুতে জোটভুক্ত কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের নিয়মমাফিক রুটিন মন্তব্যে বলেন, জোটের সকল কর্মসূচিতে জামায়াত অতীতেও অংশ নিয়েছে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ভবিষ্যতেও অংশ নেবে। তবে সরকারের দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।

মূলত, মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ডের পর তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় বিএনপির সাথে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়, যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনসহ প্রায় সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রার্থীতা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জায়গায় তারা পৃথক প্রার্থীও দেয়। এরপর থেকেই তারা বিএনপিকে তেমন একটা ছাড় না দিয়েই চলতে শুরু করে এবং তাদের কর্মসূচিও কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডাদেশের পূর্বেই ২ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে জামায়াতের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া নেতাদের পুত্রদের মাধ্যমে দেয়া প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বসা জামায়াতের কর্মপরিষদের এক বৈঠকে প্রায় সকল নেতাই বেগম জিয়ার কারাদণ্ড ইস্যুতে নীরব থাকার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তারা যুক্তি হিসেবে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দণ্ডাদেশ নিয়ে আন্দোলনে পাশে থাকাতো দূরে থাক এটা জামায়াতের দলীয় ইস্যুর অজুহাত দেখিয়ে একটা বিবৃতিও না দেয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। এছাড়া জামায়াত নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর হতে জামায়াতের নেতাকর্মীরা সবচাইতে সংকটময় অবস্থাতেও নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সাথে থাকলেও বিএনপিকে তাদের পাশে পায়নি। দলীয় ইস্যু বলে বিএনপি জামায়াতকে এড়িয়ে চলেছিল।

তাই বর্তমানে জোটভুক্ত থাকলেও বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকেও জামায়াত জোটের সমস্যা হিসেবে নয়, দলীয় ইস্যু হিসেবেই দেখছে বলে মত প্রকাশ করে নেতারা। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার এড়িয়ে চলাকেই তারা কৌশল হিসেবে নিয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে রাজপথে সরব না থাকার সিদ্ধান্তের কারণেও জামায়াত খালেদার মুক্তি ইস্যুতেও বিএনপির পাশে আন্দোলনে থাকতে পারছে না বলে জানা যায়। কেননা খালেদার মুক্তির চাইতে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই তাদের কাছে এখন সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।