শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বর্তমান সরকারের সেরা সাফল্য ছিটমহল বিনিময়

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
news-image

সোনালী সময় প্রতিবেদক: এ ইতিহাস সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর মানবতার ইতিহাস ৷ ৬৮ বছর ধরে যাদের রাষ্ট্র ছিল না, ছিল না পরিচয়, সবাই যাদের চিনতো ছটিবাসী হিসেবে – তারা তাদের জাতীয়তার পরিচয় পাবেন ৷ নাগরিকত্বের পরিচয় দেবেন গর্বে বুক ফুলিয়ে ৷

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। দীর্ঘদিনের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয় ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের ৫৫ হাজার মানুষ। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের ভূমি হিসেবে এবং ভারতের ভেতরকার বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো ভারতের অংশ হিসেবে সরকারিভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৬২টি ছিটমহল নিয়ে কোনো সরকারই সোচ্চার ছিলেন না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাসীন হলেন, তখন তিনি তিনবিঘা করিডোর এবং ১৬২টি ছিটমহল সমস্যা নিয়ে তৎপর হন। প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি তিনবিঘা করিডোরের সাময়িক ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ছিটমহল সমস্যা নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। এসব ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর ভূখণ্ড বাংলাদেশের মালিকানাভুক্ত হয়। বাংলাদেশের লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায় ছিল এসব ভূখণ্ডের অবস্থান। ২০১৫ সালের ৬ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলে দুই দেশের যৌথ জনগণনা মতে, এসব ভূখণ্ডে মোট বাসিন্দা ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ৯৭৯ জন তাদের ভারতের নাগরিকত্ব বহাল রেখে ভারত ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। এই ৯৭৯ জন ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভারত ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।

প্রায় সাড়ে একচল্লিশ হাজার ভারতীয় ছিটমহলবাসীর মধ্যে মাত্র ৯৭৯ জনের ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেখেও বাংলাদেশের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজেদের দেশ নিয়ে আনন্দ ও সুখানুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি ভারতীয় ছিটমহলবাসীদের আস্থা এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তখন অনেক মানুষ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, ছিটমহল বিনিময়ের অংশ হিসেবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মালিকানা পেয়েছে ভারত। এর ফলে এসব ছিটমহলের সাত হাজার ৭১০ দশমিক শূন্য দুই একর ভূখণ্ড পায় ভারত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার এসব ছিটমহলে ১৪ হাজার ২১৫ জন বাসিন্দা নিজেদের অভ্যস্ততার জন্য ভারতের নাগরিক হয়ে থেকে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে।

২০১৫ সালে ছিটমহলগুলোর অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের যে নতুন জীবনের সূচনা হয়েছে, এই অতি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হতে পারত বহু আগেই, যদি প্রতিবেশী ভারতের সদিচ্ছা থাকত। সেই ১৯৭৪ সালে ভূমি বিনিময় নিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যা ইতিহাসে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি নামে পরিচিত। বাংলাদেশ চুক্তিটি অনুসমর্থন করলেও ভারত তখন তা করেনি। ২০১১ সালে সীমান্ত চুক্তির সঙ্গে সই হয় প্রটোকল। অনিবার্য হয়ে পড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রটোকলসহ সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করতে ভারতের সংবিধান সংশোধন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্তমান সরকার দেশটির পার্লামেন্টে সর্বসম্মতভাবে সংবিধান সংশোধনে সমর্থ হয়। এরপরই প্রটোকলসহ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ খোলে।

‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিটমহলবাসীর দুঃখ অনুভব করে তাদের সব সংকট মোচনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এই মহান নেতাকে হত্যা করায় তিনি এর সফল বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেছেন।’

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিশাল সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর ছিটমহল বিনিময়ের ঘটনায় সরকারের সাফল্য প্রমাণ করে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।