বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বাগমারায় প্রতিপক্ষকে খুন করতে গিয়ে খুন হলেন আনিছুর নিজেই

SONALISOMOY.COM
এপ্রিল ১৯, ২০১৮
news-image

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় জোঁকা বিলে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আনিছুর রহমান নিজেই এসেছিলেন প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুন করতে। তবে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হলেন তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বুধবার সকালে বিলের দ্বন্দ্ব নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাটমাধনাগর বাজরে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মতিউর রহমান টুকু সহ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিব্যর্গ হাটমাধনাগর বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এদিকে সমঝোতা বৈঠকের আগেই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে জোকা বিলের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ আনিছুর রহমান মৃধা দেড় শতাধিক লোকজন সাথে নিয়ে লাঠিসোটা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাজারে অবস্থান নেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রতিপক্ষের লোকজন পাশের একটি আম বাগানে বস্তা ভর্তি ইট ও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় । এক পর্যায়ে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে এবং সেখানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। সে সময় বাজারের লোকজন আহতদের উদ্ধার করে বাগমারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করায়। সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আনিছুর রহমান মৃধার লোকজন ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। সংঘর্ষের পর পরই উভয় পক্ষের লোকজনই দিগবিগিত চলে গেলেও আনিছুর রহমান একটি দোকানের ছালার নীচে অবস্থান নেয়। এদিকে আনিছুরকে একা পেয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তার উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে আনিছুর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে প্রতিপক্ষের লোকজন ছুটে এসে তাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পরপরই কয়েজন সালিসদাররা ঘটনাস্থলে গিয়ে আনিছুরকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মতিউর রহমান টুকু জানান, তাদের মিমাংসা বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য সেখানে গিয়ে আনিছুরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করলে তারা ঘটনাস্থলে পৌছান । বর্তমানে বিলের ধারের পাঁচটি গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। ঘটনার পর থেকে হত্যা কান্ডের সাথে ছড়িত সন্দেহে ১০ জন কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাটমাধনগর, কাষ্টনাংলা, বাসুদেবপাড়া, গোড়সার ও পানিয়া গ্রামের প্রায় ৮শ জন মৎস্য চাষী জোকাবিলে মাছ চাষ করে আসছে। জোঁকা বিলে মাছ চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ লেগে আছে দুই পক্ষের মধ্যে। এরই মধ্যে ঘটে হত্যা কান্ডের ঘটনা। ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতংকে অনেক পরিবারের লোকজন গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে নিহত আনিছুর রহমান মৃধা দীর্ঘদিন থেকে নিজের আয়ত্বে বিলের সকল হিসাব নিকাশ রেখে আসছিল। এতে করে ক্ষোভে ফুসে উঠে মৎস্যচাসীরা।

অপরদিকে এ ঘটনাটি অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল বিভিন্ন ধরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। জানাগেছে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত আনিছুরের পক্ষের লোকজন এর আগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি ভাংচুরেরর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপর পক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। পুলিশ সেই মামলা রেকর্ড না করায় পুলিশের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে তারা। পরে গত ১২ তারিখে সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ বাধে। সেই বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগটি তদন্তের আগেই তারা পুনরায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে সেই সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনতে এলাকায় মঙ্গলবার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ সেখান থেকে চলে আসার পর পরই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এদিকে ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আকটকৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আনিছুর রহমান মৃধাকে হত্যার ঘটনায় তার ছেলে মহসিন আলী বাদী হয়ে উজ্জল হোসেন, জব্বার আলী, আশরাফ হোসেন, জাবেদ আলী, নাদের আলীসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে বাগমারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

এ ব্যাপারে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিম আহম্মেদ বলেন, হত্যা কান্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।