বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে মহাকাশ যুগে বাংলাদেশ

SONALISOMOY.COM
মে ১২, ২০১৮
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম বণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের মহাকাশ যুগের সূচনা হল।

 

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় মহাকাশের পথে। মোটামুটি আধা ঘণ্টার মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে।

 

বাংলাদেশের এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হল কেনেডি স্পেস সেন্টারের সেই ‘৩৯-এ’ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাপোলো-১১’ মহাকাশযানটি মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিল চাঁদে।

 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।

 

বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল; বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে গুণতে হয় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

 

অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তাই ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিজস্ব যোগাযোগ স্যাটেলাইট কাজ শুরু করার পর  বাংলাদেশ ভাড়া স্যাটেলাইটের নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠে অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে বলে সরকার আশা করছে।

 

মানুষের মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে এই উৎক্ষেপণ চিহ্নিত হয়ে থাকবে পুনঃব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণের প্রথম সফল উৎক্ষেপণ হিসেবেও। ব্লক ফাইভের এই সফল যাত্রার ওপর ভর করেই মঙ্গল অভিযানের স্বপ্ন দেখছে স্পেসএক্স।

 

ভূমি থেকে কক্ষপথ

 

উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যাওয়ার পর স্টেজ-২ কাজ শুরু করে।

 

পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে।

 

উৎক্ষেপণের মোটামুটি সাড়ে ৩৩ মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে গা ভাসায় বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

 

রকেট থেকে উন্মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু-১ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে স্থাপিত হবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ।

 

পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে কক্ষপথকে চিহ্নিত করা হয় তিনভাবে। এগুলো হল লো আর্থ অরবিট (এলইও), জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (জিইও) এবং মিডিয়াম আর্থ অরবিট (এমইও)। সব কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হবে ‘জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের’ একটি কৃত্রিম উপগ্রহ।

 

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট হল এমন একটি কৃত্রিম উপগ্রহ যেটি নিরক্ষ রেখা বরাবর ওই কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে ২৪ ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করবে। এই প্রদক্ষিণ হবে পৃথিবীর আবর্তনের দিকে, অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে। ফলে গ্রাউন্ড স্টেশনের সাপেক্ষে উপগ্রহটি থাকবে প্রায় স্থির। এ কারণেই ‘জিওস্টেশনারি’ শব্দটি এসেছে।

 

স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ অথবা মাইক্রোওয়েভ সংকেত আকারে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে পাঠানো তথ্য (আপ-লিংক) গ্রহণ করবে। ওই সংকেতকে কয়েকগুণ ‘অ্যামপ্লিফাই’ করে আবার তা ফেরত পাঠাবে (ডাউন-লিংক) পৃথিবীতে।