বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রাজশাহীর ৪ ও ৬ সহ আ.লীগের ১০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত

SONALISOMOY.COM
মে ২৪, ২০১৮
news-image

সোনালী সময় ডেস্ক : দশম সংসদের দলীয় ২৩৪ এমপি থেকে ১০০ প্রভাবশালী, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতার নাম ফের মনোনয়নের জন্য স্থির করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রাজশাহীর দুইটি আসন রয়েছে। এ দুইটি আসনে তারা বর্তমান সংসদ সদস্য। আরও ৫০ এমপির আমলনামা যাচাই-বাছাই শেষে মনোনীতদের তালিকায় স্থান দেবেন দলের হাইকমান্ড।

বাকিদের ভাগ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন জুটছে না বলেই আভাস দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন পার্টির নীতিনির্ধারকরা। দল ও সরকারের ইমেজ ক্ষুন্নকারীরা আছেন বাদ পড়ার তালিকায়। এসব আসনে সন্ধান করা হচ্ছে নতুন মুখ।

এছাড়া অন্যান্য ও জোট বন্ধুদের ৬৬ আসনেও বরাবরের মতো দলীয় প্রার্থী দেবে শাসক দল। অক্টোবরের আগেই ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। সংসদ নির্বাচনের তফসিলের পরপরই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ‘গডফাদার’ ও ‘জনবিচ্ছিন্ন’ সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেসব এমপির বিরুদ্ধে এলাকায় খুন, দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, ঋণ খেলাপি, টেন্ডার-চাঁদাবাজিসহ দখলদারিত্বের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তারা কেউ মনোনয়ন পাবেন না।

এ ধরনের বিতর্কিত এমপি শনাক্তে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। অনেকের রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এর বাইরেও দলের সাংগঠনিক সফরে থাকা ১৫টি টিমের হালনাগাদ তথ্যও সংযোজিত হচ্ছে মূল তালিকায়। দলীয় সভাপতির নির্দেশে সাংগঠনিক সম্পাদকরা ও কয়েকটি বিশেষ টিম আসন ধরে ধরে প্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করছেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে তালিকা তৈরি হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের তালিকার কাজ শেষ হয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই আইনের আওতায় আছেন। বাকিদের বিরুদ্ধেও আইনি প্রক্রিয়া চলছে। বিতর্কিতদের অধিকাংশই আইনি জটিলতায় বাদ পড়বেন। চাইলেও তাদের মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের কমপক্ষে ১০০ এমপি বাদ পড়ার তালিকায় আছেন বলেও জানায় আওয়ামী লীগের এ নির্ভরযোগ্য সূত্রটি।

আওয়ামী লীগ সংসদীয় মনোনয়নের বোর্ডের একজন নেতা বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ১০০’র মতো আসনে এমপি প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। এসব আসনে মনোনীত প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। বাকি ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ চলছে। আগামী ঈদের পরেই এসব আসনের বিপরীতে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হবে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ৩০০ আসনের প্রার্থীর নাম প্রকাশের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আওয়ামী লীগ জরিপ টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত দেড় বছর ধরে ৩ মাস পরপর মাঠ জরিপ করছেন। সেখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আলোচিত-সমালোচিত মন্ত্রী-এমপিদের নাম ওঠে এসেছে।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- এসব আসনে ফের তাদের মনোনয়ন দেয়া হলে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অসাধ্য হবে। এসব মন্ত্রী-এমপিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কারও বিরুদ্ধে এলাকায় জনপ্রিয়তা হ্রাস, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, অনেকের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, অনৈতিকভাবে বিত্তবৈভব গড়ার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সন্ত্রাস ও দলীয় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ।

দলীয় নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এমনকি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নিয়েও নিজস্ব বলয় সৃষ্টির অভিযোগও আছে কারও বিরুদ্ধে। আর এসব কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে সময় নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, গ্রিন সিগন্যাল দেয়া ১০০ আসনের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। দল ও সমাজে কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখা এসব নেতা প্রতিপক্ষেরে যে কোনো নেতার চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। আগামী নির্বাচনে তৈরি থাকার বিষয়ে এমন নেতাদেরই গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নীতিনির্ধারকদের দেয়া তথ্য মতে- ঠাকুরগাঁও-১, দিনাজপুর-১, দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৩, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-২, লালমনিরহাট-১, লালমনিরহাট-২, রংপুর-৪, গাইবান্ধা-২, বগুড়া-১, বগুড়া-৫, নওগাঁ-১, রাজশাহী-৪, রাজশাহী-৬, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৬, পাবনা-৫, কুষ্টিয়া-৩, ঝিনাইদহ-২, ঝিনাইদহ-৪, যশোর-৫, মাগুরা-২, বাগেরহাট-১, খুলনা-১, সাতক্ষীরা-৩, সাতক্ষীরা-৪, বরগুনা-১, পটুয়াখালী-২, ভোলা-১, ভোলা-২, ভোলা-৩, ভোলা-৪, বরিশাল-১, বরিশাল-২, ঝালকাঠি-২, টাঙ্গাইল-১, টাঙ্গাইল-৫, টাঙ্গাইল-৮, জামালপুর-৩, শেরপুর-২, ময়মনসিংহ-১, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-১, কিশোরগঞ্জ-৪, কিশোরগঞ্জ-৫, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-২, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, গাজীপুর-১, গাজীপুর-২, গাজীপুর-৪, গাজীপুর-৫, নরসিংদী-১, নরসিংদী-৪, নারায়ণগঞ্জ-১, নারায়ণগঞ্জ-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-১, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, ফরিদপুর-৩, গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, শরীয়তপুর-১, শরীয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, সিলেট-৩, সিলেট-৬, হবিগঞ্জ-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, কুমিল্লা-২, কুমিল্লা-৩, কুমিল্লা-৪, কুমিল্লা-৫, কুমিল্লা-৯, কুমিল্লা-১০, কুমিল্লা-১১, চাঁদপুর-২, চাঁদপুর-৪, নোয়াখালী-৪, নোয়াখালী-৫, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-১২, চট্টগ্রাম-১৩ ও কক্সবাজার-৩ আসনের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে।

প্রার্থী বাছাইয়ে এবার কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য গণমাধ্যকে বলেন, বিভিন্ন জরিপ সংস্থার পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ ও দলের একটি টিম দিয়েও প্রার্থীদের জরিপ কাজ করছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটি মাঠপর্যায়ে গিয়ে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন নেত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেই।

তিনি আরও বলেন, দলে যারা বিতর্কিত ও বিভিন্ন সময়ে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন তারা এবার মনোনয়ন পাবেন না। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে এসব আসনে নতুনদের সন্ধান করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জয় নিশ্চিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সূত্র- যুগান্তর