শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাড়ছে অর্থের জোড়ে শিল্পী আর অশ্লীল ভিডিওর দৌড়াত্ব

SONALISOMOY.COM
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
news-image

সাকিব আল রোমান : সংগীতে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বিলাসী শিল্পীদের আধিক্য। কণ্ঠ না থাকলেও অর্থের জোরে যে কেউ বনে যাচ্ছেন শিল্পী। আবার সেই মানহীন গান ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। এর ফলে এসব বিলাসী শিল্পীর মানহীন গানের আধিক্যে চাপা পড়ে যাচ্ছেন সংগীতের মেধাবী ও যোগ্য মুখগুলো। এর পাশাপাশি এ তিনটি মাধ্যমেই রয়েছে ব্যক্তিগত স্ক্যান্ডালও। প্রেম, ভাঙন, ডিভোর্স প্রভৃতি বিষয় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে শোবিজ অঙ্গনে। এর ফলে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে পুরো শোবিজের। সব মিলিয়ে চরম অস্থিতার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে চলচ্চিত্র, টিভি ও সংগীতাঙ্গন। তবে মিডিয়াবোদ্ধারা মনে করেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আগে দরকার পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, একে অপরকে সহযোগিতা করবার মনোভাব, সচেতনতা, শৃঙ্খল জীবন প্রভৃতি বিষয়গুলো। তা না হলে শোবিজ অঙ্গনের অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে, যা কারোই কাম্য নয়।

অস্থিরতা ভর করেছে শোবিজ অঙ্গনে। চলচ্চিত্র, টিভি কিংবা সংগীত। কোথাও স্বস্তি নেই। চারদিকে ঘনঘটা। শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে এ তিনটি অঙ্গনের মান কেবল নিচের দিকেই নেমেছে। বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে শোবিজ অঙ্গনের ইমেজ। এসব কিছু সুরাহার জন্য অনেক উদ্যোগ নেয়া হলেও কাজে আসেনি কিছুই। বেশি নয়, গত কয়েক মাসের হিসাব কষলেই শোবিজের অস্থিরতা ও এর ভয়াবহতার প্রমাণ মিলবে ভূরি ভূরি। চলচ্চিত্রে যৌথ প্রযোজনার নামে প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। যারা কাফন নিয়ে যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারাই পরে যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। এর ফলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনের ইমেজও। আর আপসের এমন কাব্য রচনা করেই দেশীয় চলচ্চিত্রে যৌথ প্রযোজনার নামে আবির্ভাব ঘটেছে কলকাতার জনপ্রিয় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর। যৌথ প্রযোজনার নিয়ম ভেঙে ৭০ কিংবা ৮০ ভাগ অভিনয়শিল্পী ও গায়ক-গায়িকা নেয়া হয়েছে কলকাতা থেকে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিষয়টি কেবল সীমাবদ্ধ ছিল ফেসবুককেন্দ্রিক স্ট্যাটাসের মধ্যেই। কোনো সুরহা হয়নি।

টিভি মাধ্যমেও চলছে অস্থিরতা। একই ধরনের গল্প ও শিল্পী, বাজেট স্বল্পতা ও বিজ্ঞাপনের আধিক্য। এ তিনটি বিষয়ের কারণে দেশীয় নাটকের মান কেবল নিচের দিকেই নামছে। তার উপর নাটক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে গড়ে তুলে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। এ সংগঠন আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারকৃত বিদেশি ডাব সিরিয়াল বন্ধের। এমনকি শহীদ মিনারে গিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সংগঠনটি। তবে প্রশ্ন উঠে এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে। কারণ বিদেশি সিরিয়াল তো যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে আমাদের দেশে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেন কেন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে? এদিকে খুব দ্রুতই আবার এ আন্দোলন থেমেও যায়। পরে বেশ কয়েকটি চ্যানেল নতুন করে আরো কয়েকটি নতুন বিদেশি সিরিয়াল প্রচার শুরু করে।

এদিকে চলচ্চিত্র এবং টিভি জগতের মতো করেই সংগীতেও চলছে চরম অস্থিরতা। বিভিন্ন অডিও কোম্পানিও বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছে। ডিজিটাল এ সময়ে গানের শ্রোতাপ্রিয়তার বিচার হচ্ছে কেবল ইউটিউবের ভিউ দিয়ে। এ বিষয়টি নিয়েও দ্বিমত রয়েছে শিল্পী-শ্রোতাদের মধ্যে। আবার ইউটিউব থেকে আয়ের বিষয়টি নিয়েও শিল্পীরা এখনো ততটা জ্ঞান অর্জন করতে পারেননি। বিশেষ করে গুগুল ও ইউটিউবের অফিস বাংলাদেশে না থাকায় অনেক শিল্পীকেই তৃতীয় পার্টির মাধ্যমে নিজের গান বাজারজাত করতে হচ্ছে ইউটিউবে। যার ফলে সঠিক হিসাব অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।