শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ নেই জাতিসংঘের: মাসুদ বিন মোমেন

SONALISOMOY.COM
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
news-image

কাজী শাহেদ, নিউইয়র্ক থেকে: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের কোনো উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত কোনো দেশে নির্বাচন হলে, তারা বিষয়টি সাধারণ রুটিন কাজ হিসেবে দেখে। শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী কার্যালয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত জাতিসংঘের যে রাজনৈতিক বিভাগ আছে এবং যারা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করে, তারা আমাদের কাছে কখনও কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। বিএনপি মহাসচিব ফকরুল ইসলাম আলমগীরের এই সফরটিরও তারা দেখছেন ধারাবাহিক একটি সাধারণ বিষয় হিসেবে। জাতিসংঘ তখনই একটা দেশকে নির্বাচনী সহায়তা দিতে পারে, বা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়টি আসে, যখন সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকে। এই এজেন্ডাগুলো আসবে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে। অথবা সাধারণ পরিষদ থেকে। সুতরাং জাতিসংঘ চাইলেই, কোনো দেশের নির্বাচনের বিষয়ে স্বউদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না, হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কোনো সুযোগ নেই। আর এছাড়া জাতিসংঘকে সেই দেশের সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয় সহায়তার জন্য তখখনই কেবল জাতিসংঘ যেতে পারে। তাছাড়া যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বিষয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত কোনো দেশে নির্বাচন হলে তখন জাতিসংঘ তাদের সাধারণ রুটিন মাফিক তারা তখন দেখে। সংশ্লিষ্ট দেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি যিনি থাকেন, তার মাধ্যমে বা পর্যবেক্ষক পাঠানো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সমর্থন লাগে। জাতিসংঘের সদর দফতরে যারা আছেন, আমার সাথে তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি বা আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করতে সব সময় জাতিসংঘের আহ্বান থাকে। আমাদের সরকারও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ একটি ইনক্লুসিভ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার টানা ১০ বার জাতিসংঘে ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্বের সবাই স্বীকার করেছে বাংলাদেশ উন্নয়নের একটা রোল মডেল। এবং রোল মডেল হওয়ার প্রধান কারণ যে ভিশনারী, শক্তিশালী ও ধারাবাহিক নেতৃত্ব। এটা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য এই যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তা বজায় রাখার জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে। এবং স্বপ্নচারী নেতৃত্বের প্রয়োজন আছে। সুতরাং এটা সবাই এমনিতেই স্বীকার করছে যে, দেশে গত ১০ বছরের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার যে নীতিগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল, যে ভিশন থেকে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশল থেকে। বিশেষ করে বিদ্যুৎখাতে এক সময় বাংলাদেশ প্রচুর ডেভিশিড ছিল এবং লোডসেডিং একটা নিত্যনৈমিক্তিক ব্যাপার ছিল। গত ১০ বছওে আমরা লোডশেডিংয়ের মাত্রা আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি, নেই বললেই চলে। কয়েকদিন আগে দেখলাম যে আমাদের এটা রেকর্ড স্থাপন হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটা আরও বাড়বে। বিশেষ কওে যখন রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রটা চালু হয়ে যাবে, তাছাড়া জাপানের সাথেও বড় একটা প্রকল্প আছে। আরও কয়েকটা বড় প্রকল্প নেওয়া আছে। এছাড়া এলএনজি’র ক্ষেত্রেও প্রকল্প নেওয়া আছে। প্রকল্পগুলো যখন বাস্তবায়িত হবে তখন আমাদের এনার্জিও দিক থেকে কোনো সমস্যা থাকবে না। আমরা জানি যে শিল্পায়নের জন্য ধারাবাহিক চাহিদা থাকবে এনার্জির। এই গ্যাপটা আর আগামীতে থাকবে না। তাতে করে আরও নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এ সবকিছুই সম্ভব যদি একটি ধারাবাহিক নেতৃত্ব যদি চলমান থাকে। অনেক দেশ আছে যেখানে হয়তো ৫ বছর এক ধরনের পলিসি নেওয়া হলো আবার তার পরের ৫ বছর অনেক প্রকল্প বাদ হয়ে গেল বা একটা নতুন সরকার আসলো। সুতরাং আমরা এটা দেখেছি অনেক দেশেই শক্তিশালী, দায়িত্বশীল ও ধারাবাহিক নেতৃত্ব চলমান থাকে, তাহলে সেই দেশগুলো খুব দ্রুতই এগিয়ে যায়। বাংলাদেশও আমরা সে রকম লক্ষ্য করেছি বা সবাই সেটা স্বীকারও করে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সবাই জানে যে বাংলাদেশ অতি সম্প্রতি স্বল্প উন্নত দেশের যে ক্যাটাগরি ছিল সেখান থেকে যে সমস্থ এলিজিবিলিটি কাইটিরিয়া আছে, সেই তিনটি কাইটেরিয়াতে আমরা বেশ উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে অতিক্রম করেছি। ২০২১ সালে আরেকবার একটি রিভিউ হবে। সেই রিভিউতে যদি এমন ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে আমরা স্বল্পউন্নত ক্যাটাগরি থেকে আমরা স্থায়ীভাবে বেরিয়ে আসবো। এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে কাতার আছে তাতে আমরা চলে আসবো। এখন বেশকিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে, তবে আমরা যেটা দেখছি আমাদের যে মাইক্রো ইকোনমি ইন্ডিকেটরগুলো আছে, সবই পজেটিভ আছে। এবং আমাদের যে সামাজিক অর্থনীতি অগ্রগতি আছে সেগুলো এতো ভালো করছে অতিসম্প্রতি, মানব উন্নয়নে জাতিসংঘের যে সূচক প্রকাশ হয় সেখানেও আমরা ১৩৮ থেকে ১৩৬-এ উঠে এসেছি। সুতরাং আমরা তেমন কোনো তাৎক্ষণিক সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বৈশ্বিক কিছু টেন্ড আছে, সেগুলো যদি খুব বেশি আমাদের বিপক্ষে চলে যায়, বিভিন্ন দেশ নতুন করে শুল্কারোপ করার উদ্যোগ নিচ্ছে এগুলো চিন্তার বিষয়। আমরাও সে ব্যাপারে চিন্তিত আছি। আরেকটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে স্বাভাবিক দুর্যোগ আছে, হঠাৎ করে সেগুলো আসে এবং সেগুলো অনেক বড় বড় দেশ, সম্প্রতি দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র একটি হারিকেনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তারাও কতোটা অসহায় হয়ে গেল। সুতরাং এই দিকগুলো অতিক্রম করতে পারি, তাহলে আমরা ওই রকম কোনো বড় বাধা দেখছি না। আর এলডিসি বিষয়ে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেতাম তিন বছর বা তার কিছু সময় পর সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এখন থেকেই তৈরি হচ্ছি, কীভাবে আমরা নিজেদের অর্থে আমাদের উন্নয়নের অগ্রগতি এগিয়ে নিতে যেতে পারি। এক সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বেশিরভাগ আসতো বৈদেশিক সাহায্য থেকে। এখন নেই বললেই চলে, কমে এসেছে। আমাদের আয় বেড়েছে, সক্ষমতা বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ মার্কেটটিও এখন বড়। প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের। ফলে এখন বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে আসছে। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, ১০০টি যে অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে, সেগুলো চালু হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সবকিছুই আমাদের পক্ষে আছে। আমরা আগে যেসব সুবিধা পেতাম, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি।