শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দেশে একদলীয় শাসনের কোনো অস্তিত্ব নেই: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে প্রধানমন্ত্রী

SONALISOMOY.COM
অক্টোবর ১১, ২০১৯
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে একদলীয় শাসনের কোনো অস্তিত্ব নেই: ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে প্রধানমন্ত্রীদেশে একদলীয় শাসনের কোনো অস্তিত্ব নেই। আপনারা দেখবেন, গত পাঁচ বছরে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে ছিল না। দেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এভাবেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গ্রাম থেকে শহরে মানুষ আসা নিরুৎসাহিত করে বাংলাদেশ সরকার নগরায়ন প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জাতীয় দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

পত্রিকাটির উদীয়মান ও বর্ধিষ্ণু আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাতে এ কথা বলা হয়েছে।

গ্রামের মানুষকে যেন শহরে আসতে না হয়, সে কারণে গ্রামেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নগরায়নের লাগাম টেনে ধরছে বাংলাদেশ। দেশে যখন মানুষের স্রোত শহরমুখী, তখন সরকার নাগরিকদের গ্রামাঞ্চলেই থাকার জন্য উৎসাহিত করছে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইড লাইনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শহরের ওপর থেকে চাপ কমাতে তার সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

শেখ হাসিনা এই সংবাদমাধ্যমেক জানান, বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বাড়তে থাকাটা দেশের জন্য বড় একটি সমস্যা। ঢাকা এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের স্বীকৃতি পেয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ২৩ হাজার ২৩৪ জন মানুষ বাস করে। আমরা গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করলেও মানুষের মধ্যে এমন ধারণা এখনো বদ্ধমূল যে শহরেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের সুযোগ বেশি। তাই তাদের শহরে আসতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে সরকার প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, গ্রামের মানুষ যেন গ্রামে থেকেও অনলাইনে কাজ করার সুযোগ পায়, আমরা তেমন উদ্যোগও নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রান্তিক এলাকাগুলোতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা করে দিচ্ছি এবং তরুণদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এর মাধ্যমে তারা গ্রামে বসেই অনলাইনে কাজ করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেতে পারে। যার জন্য সবাইকে শহরমুখী হতে হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য লড়াইয়ের প্রভাব, দারিদ্র্য মোকাবিলা ও নগরায়ন ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রচেষ্টা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকারের কৌশল নিয়েও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য লড়াই চলছে, বাংলাদেশের ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে- ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে পোশাক অর্ডার করছেন বাংলাদেশে। ফলে এরই মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার এই বাণিজ্য লড়াই চলতে থাকলে বাংলাদেশ এ থেকে লাভবানই হবে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে, তা কমিয়ে দিলে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হবে।

কোনো কোনো বিনিয়োগকারী মনে করেন, বাংলাদেশে কার্যত একদলীয় শাসন চলছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থার অংশ। দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অত্যন্ত তৎপর একটি সুশীল সমাজও দেশে সক্রিয়। ফলে একদলীয় বিষয়টিরই কোনো অস্তিত্ব নেই দেশে। আপনারা দেখবেন, গত পাঁচ বছরে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে ছিল না। দেশে শতাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। এর মধ্যে আবার ৩৮টি রাজনৈতিক দল সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীও লড়াই করেছেন।

বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার এখনো উচ্চ উল্লেখ করে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের প্রধান শত্রুই হলো দারিদ্র্য। তাই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা চোখে পড়ার মতো অনেক উন্নতিও করেছি। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালেও ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছি আমরা।