শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

টিভি চ্যানেলগুলোর কি বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখতে বাধ্য করা উচিত

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
news-image

শাহরিয়ার খান : বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর একটি প্লাটফরম থেকে বিদেশি চ্যানেলগুলোর ডাউনলোড লিংক বর্তমান খরচ দেড় লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা ও ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এ দাবির প্রেক্ষিতে তারা আরো বলছেন, বছরে চার’শ কোটি টাকার বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলগুলোতে চলে যাচ্ছে যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তারা যেভাবে বিজ্ঞাপন খরচ প্রদান করছেন তাও বেআইনী। এসব দাবিতে শিল্পীরাও একাট্টা হয়ে বলছেন, দেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে বিদেশি সিরিয়াল ডাবিং করে সম্প্রচার করছে তাও বাতিল করতে হবে।
বিজ্ঞাপনদাতাদের অবৈধ লেনদেন, শিল্পীদের দেশি টেলিভিশনগুলোর সঙ্গে এক প্লাটফরমে অবস্থান টেলিভিশন দর্শক ও সাধারণ মানুষের মনে বেশ কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। প্রথমত কেন স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতারা বিদেশি টেলিভিশনগুলোতে বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্য হচ্ছেন যখন অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল দেশে সম্প্রচার অব্যাহত রাখছে। আর স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতারাই বা কেন অবৈধভাবে বিদেশি চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপনের খরচ পরিশোধ করছেন।
দ্বিতীয়ত, হঠাৎ করেই স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন সম্প্রচারে উদ্বেগ জানাতে শুরু করেছে যখন তারা ইতিমধ্যে এতবেশি বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করছে যাতে দর্শকরা অনুষ্ঠান দেখতে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। যদি বিদেশি চ্যানেলগুলোতে চলে যাওয়া বাংলাদেশে পণ্যে বিজ্ঞাপনগুলো ফের দেশি টেলিভিশনগুলোতে ফেরত আসে তাহলে তা দর্শকদের দেখানোর সময় ও সুযোগ কি রয়েছে?
তৃতীয়ত কেউ যদি ডাবিংকৃত অনুষ্ঠান বাতিলের দাবি জানায় তাহলে তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে। বিটিভি দীর্ঘদিন ধরে ডাবিংকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিদেশি অনুষ্ঠান স্থানীয় দর্শকদের জন্যে ডাবিং করে প্রচার করা কি দোষের? কেউ কি বিদেশি বই অনুবাদ বাতিল করতে দাবি জানিয়েছে? তা হবে খুবই ভুল।
আসলে এসব প্রশ্নের উত্তর একটি জায়গায় নিহিত রয়েছে এবং তা হচ্ছে ভাল মানের অনুষ্ঠান না করে দুর্বল মানের অনুষ্ঠান স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে যা মানসম্মত নয় বা দর্শকনন্দিত হচ্ছে না। সর্বশেষ কোন সময়ে কোনো টিভি সিরিয়াল দেখতে আমরা বাধ্য হয়ে সময় করতে হয়েছে তা মনে পড়ে না। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোও ভালমানের অনুষ্ঠান প্রচার করত তাও তা এক দশক আগে। ফলে দর্শকরা এধরনের অনুষ্ঠান দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া দেশি টেলিভিশন না দেখার আরেকটি কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে বিজ্ঞাপন প্রচার। এর পাশাপাশি ভালমানের অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতি আরো পরিস্থিতি সঙ্গীন করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী একটি টেলিভিশন চ্যানেল প্রতি ঘন্টায় ১৪ মিনিট বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করতে পারে। যাতে দর্শকরা বিরক্ত না হয় বিজ্ঞাপন প্রচারে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা হয়। কিন্তু দেশে টেলিভিশনগুলোতে ১৫ থেকে ২২ মিনিট পর্যন্ত বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। এবং বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের সময় বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় আধ ঘন্টা ছাড়িয়ে যায়।
আসল ঘটনা হচ্ছে দেশে দর্শকরদের সিংহভাগ ভারতীয় বাংলা চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রে নয়। কারণ দেশি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান তাদের টানতে পারছে না বা তাতে তারা কোনো আগ্রহ বোধ করছে না।
টেলিভিশনে ডাবিংকৃত বিদেশি অনুষ্ঠান যেমন ‘সুলতান সুলেমান’ সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি খুবই অনৈতিক হবে। এটা দর্শকদের পছন্দের ব্যাপার যে তারা কোন অনুষ্ঠান দেখবে কি দেখবে না। বরং এধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করার দাবির পরিবর্তে তারা যদি অনুসন্ধান করেন যে দর্শক কেন ‘সুলতান সুলেমান’ বা ‘কিরণমালা’ দেখে এবং ‘বহুব্রীহি’ বা ‘যদি কিছু মনে না করেন’এর মত অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্যে চেষ্টা করেন।
যদি দেশি চ্যানেলগুলো ভাল অনুষ্ঠান তৈরি করে, দর্শক তা দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে। মিডিয়া জগতের বর্তমান যে প্লাটফরটিতে শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তারা যদি এসব বিষয় খতিয়ে দেখে সঠিক বিষয় আলোকপাত করেন তাহলে একটা বড় কাজ হয়। কারণ দর্শকদের মন পাওয়ার জন্যে তাদের অনুসন্ধানে যেতে হবে। দর্শকদের আনন্দ, বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আলোকিত করে তুলতে হবে। তা না করে শুধু বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের দাবি জানালে তা হবে রীতিমত একটি কৌতুক। ডেইলি স্টার থেকে অনুবাদ