শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

থামছে না তাদের কান্না

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ৫, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুড়ে গেছে সারা জীবনের সঞ্চয়। আগুনে পুড়েছে গুলশান ডিসিসি মার্কেট। সেই সঙ্গে পুড়েছে ব্যবসায়ীদের কপাল।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের সিড়ির রেলিং ধরে ধসে যাওয়া কাঁচা ও সুপার মার্কেটের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দুজন। তাদের চোখে পানি ছলছল করছে।

হায়-হুতাশ করা ওই দুইজন কাঁচা ও সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. সিয়াম ও মো. সোহেল। কাঁচা ও সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোহেলদের তিনটি দোকান ছিল। দোকানে মালামালও ছিল সাত থেকে আট কোটি টাকার। কিন্তু এখন কিছুই নেই। আগুনে তাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

সিয়ামেরও ক্ষতি হয়েছে কোটি টাকার। নিজেদের কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছেন না তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথই দেখছেন না এই দুই ব্যবসায়ী।

কাঁচা ও সুপার মার্কটের দ্বিতীয় তলায় ছিল সিয়ামের কসমেটিকসের দোকান। দোকান নম্বর ৪০-৪৩। আগুনে ভবন ধসের কারণে এখন তিনি নিঃস্ব প্রায়। শুধু সিয়াম আর সোহেল নয় এমন অবস্থা এ মার্কেটের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর। একদিনেই শেষ হয়ে গেছে তাদের সারা জীবনের সঞ্চয়।

সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করে ফায়ার সার্ভিস। তবে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত ধ্বসে পড়া কাঁচা ও সুপার মার্কেট থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।

বুধবার সন্ধ্যায় সিয়াম বলেন, ‘দোকানে প্রায় ৮০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকার কসমেটিকস পণ্য ছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন আমি পথের ফকির হয়ে গেছি।’

তিনি জানান, পাকা মার্কেটে আগুন লাগলে তা ধসে না পড়ায়, ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। কিন্তু আমাদের অংশের তো সব ধসে গেছে। দোকান মালিকেরা এখন পথে বসে যাবে।’

কাঁচা ও সুপার মার্কেটের সহসভাপতি হুমায়ুন সিদ্দিক জানান, মার্কেটে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত ৪০০ দোকান ছিল।

মো. সোহেল জানান, মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় জিন্না এন্টারপ্রাইজ নামে ৫৭, ৫৮ ও ৮২ নম্বর তিনটি দোকানে তারা বেবি ফুড ও কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে এসেই দেখেন ভবন ধসে পড়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে আমাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু কত টাকা সহায়তা দেবে। আমার তিন দোকান মিলে প্রায় সাত থেকে আট কোটি টাকার মালামাল ছিল। এত টাকা তো আর সরকার দেবে না। সর্বোচ্চ হলে সাত থেকে আট লাখ টাকাই দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন দোকানে ১১ জন কর্মচারীর পরিবারও এই দোকানের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। এখন তারাও আমার মতো পথে বসে যাবে। আমার মতো তারাও এখন শেষ।’

এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার ভেতরে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মার্কেটের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষতি কমে যেত।’

কাঁচা বাজার অংশের ২৬ নম্বর দোকানের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানে প্রায় এক কোটি টাকা মালামাল ছিল। অ্যাডভান্স দেওয়াও অনেক টাকা। সারা জীবনের সব আয় এখানে বিনিয়োগ করা। এখন বউ-বাচ্চাদের কী হবে। তাদের কী খাওয়াব-পরাব।’

কথাগুলো বলতে বলতে পরিচিত আরেক ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তি বারবার তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনা তার চোখে পানি থামাতে পারছিল না। এ সময় ধসে যাওয়া ভবনের দিকে তাকিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনদের কাঁদতে দেখা যায়।

পাকা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় পোড়া দোকান দেখছিলেন জুতার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এত বড় ক্ষতির মুখে কখনই পড়িনি। নতুন করে যে কীভাবে ব্যবসা আবার শুরু করব তা চিন্তা করে কূল পাচ্ছি না।

এতো বড় ক্ষতি থেকে ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে জানতে চাইলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, যারা এখানে ব্যবসা করতেন তাদের ব্যবসায় প্রতিনিয়তই উন্নতি হচ্ছিল। আর ব্যবসার উন্নতি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে আরো ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠান বড় করেছেন। কিন্ত ঋণ পরিশোধ করা হয়নি অনেকের। এ অবস্থায় এখন ব্যবসায়ীদের কে ঋণ দেবে? কারণ ব্যাংক আগে দেখতে চাইবে ব্যবসায়ীর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না। এখন অনেক ব্যবসায়ীদের অবস্থা এমন যে, পাঁচ টাকা পকেট থেকে বের করতে কষ্ট হবে।

এদিকে ডিসিসি মার্কেট নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে ডিসিসি পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এস এম মো. তালাল রেজভী বলেন, আমরা সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব। আমরা অন্য কাউকে এ মার্কেট দখল করতে দেব না। এ জন্য আগামী শুক্রবারই মার্কেট খোলা হবে। সামনে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে যত প্রকার সহায়তা দেওয়া দরকার সরকার তা দেবে।