শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ওবামার আবেগঘন বিদায়ী ভাষণ, গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ১১, ২০১৭
news-image

অনলাইন ডেস্ক:

আবেগঘন বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন। দেশের মানুষকে গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

আট বছর আগে প্রত্যাশার কথা বলে শিকাগো নগর থেকে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন ওবামা। গতকাল মঙ্গলবার একই নগরেই হাজারো জনতার সমাবেশে ওবামা তাঁর বিদায়ী ভাষণটি দেন। এ সময় তিনি নিজে আবেগাপ্লুত হন। অন্যদেরও তা স্পর্শ করে।

ওবামা তাঁর ভাষণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বলেন। বলেন সাফল্য-অর্জনের কথা। নিজের দেশের বিভেদ, গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে জনগণকে সতর্ক করেন তিনি।

ওবামা বক্তব্যের শুরুতে তাঁর আট বছরের শাসনামলের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তাঁর বর্ণিত সাফল্যের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মন্দা মোকাবিলা, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যাসহ জঙ্গি দমন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ, জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সময়োপযোগী উদ্যোগ, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বাইরের শক্তির হামলা প্রতিরোধ উল্লেখ্যযোগ্য।

সাফল্যের বিবরণ দিয়ে ওবামা বলেন, আট বছর আগে এসব কথা বলা হলে বলা হতো ‘প্রত্যাশা উচ্চপর্যায়ের’। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা এ অর্জনগুলো করেছি।’

ওবামা দেশবাসীর উদ্দেশে নিজেদের ওপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখার আহ্বান জানান।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ওবামা আমলের বহু পদক্ষেপ বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এমন বাস্তবতায় ওবামা তাঁর দুই মেয়াদের সাফল্যের পক্ষেই অকাট্য যুক্তি তুলে ধরেন।

ওবামা বলেন, তাঁর প্রণীত স্বাস্থ্য বিমা বাতিল করে কেউ যদি বিকল্প স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন, যে নীতিতে স্বল্প ব্যয়ে বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে, তাহলে তিনি প্রকাশ্যে তা সমর্থন করে যাবেন।

আমেরিকার রাজনীতিতে ক্রমেই বেড়ে চলা দলপ্রীতি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।

গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিন জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেন ওবামা। বলেন, গণতন্ত্র কোনো পেয়ে যাওয়া বিষয় নয়।

গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য ক্রমাগত লড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ওবামা। তিনি বলেন, ‘এ লড়াইয়ে কখনো তুমি জিতবে, কখনো হারবে।’

ওবামা প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বিদায়ী ভাষণ দেন। তাঁর এই ভাষণ শোনার জন্য রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। ওবামার ভাষণ শুনতে লোকজনকে বিভিন্ন ক্লাবে টেলিভিশনের সামনে ভিড় করতে দেখা যায়।

তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও রক্ষণশীলদের তীব্র বিরোধিতায় বারবার ওবামার সংস্কার পদক্ষেপ হোঁচট খেয়েছে।

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ও রাজনীতি এখন সবচেয়ে বেশি বিভক্ত। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল ও উদারনৈতিক ঘরানার বিভেদটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওবামা তাঁর বক্তব্যেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো বর্ণবৈষম্য বিদ্যমান। মুসলিম আমেরিকানসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার মার্কিন সংবিধানে সমুন্নত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ওবামার বক্তব্য নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ দেখা গেছে। বিদায় মুহূর্তেও ওবামা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। কাজকর্ম ফেলে প্রবাসীদের ওবামার বিদায়ী বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।

অন্যান্য অভিবাসী গোষ্ঠীর কাছেও বেশ জনপ্রিয় ওবামা। তাঁর বিদায়ী ভাষণ আমেরিকার অভিবাসীবহুল এলাকার লোকজন দেখেছেন। অনেকেই অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছেন, ভবিষ্যতে আমেরিকা ওবামার মতো প্রেসিডেন্টের অভাব মর্মে মর্মে অনুভব করবে।

ওবামা তাঁর বিদায়ী ভাষণে সফলতার যে দিকগুলো তুলে ধরেছেন, তা যুক্তিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকার কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। তিনি বলেন, ওবামার ভাষণ আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। তাঁর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়টি আমেরিকার জনগণকে ভাবতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি রাশেদ আহমেদ বলেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট ওবামার অভাব অনুভব করবেন। তাঁর আট বছরের শাসনামলে আমেরিকা ছিল নিরাপদ। আমেরিকায় ছিল না বর্ণবৈষম্য। তাঁর বক্তব্যেও তা উঠে এসেছে।

রাজনীতিবিদ জসিম ভূঁইয়া বলেন, ওবামা আমেরিকার জনগণের কাছে অনেক বিষয়ে উদাহরণ ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন।

ওবামার বিদায়ী ভাষণ শুনে শিকাগোর অনুষ্ঠানস্থলসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকের চোখ ছিল সজল। তাঁদের একটাই কথা, ওবামা ও মিশেলকে সব সময় মনে পড়বে।

শিকাগোতে ওবামার ভাষণের সময় ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, তাঁদের এক মেয়ে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তাঁর স্ত্রীসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।