বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি বৈঠকে মনোভাব জানাবে বাংলাদেশ

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ১৭, ২০১৭
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির আহ্বানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চলতি সপ্তাহে। এতে নিজেদের অবস্থান ও সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা সংকট ও রাখাইন পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত ১৩ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জরুরি বৈঠক ডাকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সবচেয়ে বড় জোট ওআইসি। আগামী বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার উদ্যোগে এই জোটের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ওআইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া ওই বিবৃতিতে ওআইসি মহাসচিবের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এরপর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির বিশেষ দূত চাও তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। সুচির বিশেষ দূতের ঢাকা সফরে আলোচনার সারসংক্ষেপ এবং বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব ওআইসির বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবে এদেশের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই ইতিবাচক এবং আন্তরিকতাপূর্ণ। বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য এমন বার্তা নিয়েই ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যাচ্ছেন ঢাকার প্রতিনিধিরা।

সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারও চাইছে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসতে। কারণে এরই মধ্যে সরকারের হাতে তথ্য এসেছে রোহিঙ্গারা দেশের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে।

গত বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অধীনে রোহিঙ্গাদের গণনা করার জন্য কয়েকটি জেলায় জরিপ চালানো হয়। কিন্তু জরিপে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গারা শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলায় নয়, বরং পুরো দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

এরপরই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে আসার পরিকল্পনা করে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশটির সঙ্গে আলোচনা চালায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। ওই আলোচনার বিষয়বস্তুও সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। ডিসেম্বর মাসে ওআইসি জরুরি বৈঠক ডাকার পর বাংলাদেশ এসব বিষয় তুলে ধরার জন্য ওই বৈঠকটিকেই ঠিক করে নেয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়, কনস্যুলার) কামরুল আহসান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা এসব নাগরিকের বিষয়ে একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত সরকারের রয়েছে। বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হবে। এরপর আলোচনাসাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।’

এদিকে ওআইসি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

শুরু থেকেই ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ এ আল-উসাইমিন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারকে তার অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে ওআইসি মহাসচিব এর আগে ডিসেম্বরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিসংঘ ও আসিয়ানের সদস্য হিসেবে, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও ঘোষণা অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় মিয়ানমার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে হিসেবে দেশটিকে অবশ্যই মানবাধিকার রক্ষার প্রাসঙ্গিক চুক্তি ও ঘোষণাসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, ঘর-বাড়ি ও প্রার্থনালয় জ্বালিয়ে দেওয়া, নারী ধর্ষণসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে- তার পুরোপুরি আন্তর্জাতিক তদন্ত জরুরি। কেননা, এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।

ওই বিবৃতিতে ওআইসি মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ হবে। তারা সমঅধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে দীর্ঘ সামরিক সরকারের পরিবর্তনের পর গণতান্ত্রিক একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করায় বর্তমান সরকার দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সীমান্ত নিয়েও বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে যৌথ টহল, অমীমাংসিত সীমান্ত চিহ্নিতকরণ, ভ্রমণের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকানো ইত্যাদি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দেশটির সঙ্গে আলাপ চলে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রবেশে অব্যাহত থাকায় এবং এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে না আসায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।