বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

এমপি এনামুল হকের উপহার
তাহেরপুরে আদি শারদীয় মন্দিরে অষ্টধাতুর তৈরি প্রতীমা উন্মোচনের অপেক্ষায়

SONALISOMOY.COM
অক্টোবর ৭, ২০১৮
news-image

বাগমারা প্রতিনিধি: আর কয়েক দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। কয়েক দিন পরে দূর্গা পূজা আরম্ভ হলেও এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। ভারত উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের উৎপত্তি হয় বাংলাদেশে।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের তৎকালীন রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর শারদীয় দুর্গা পূজার প্রচলন করেন। তখন থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দুর্গা পূজা শুরু করে। প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বছর আগে রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর তাহেরপুর রাজবাড়ীতে অবস্থিত শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা মন্দির থেকে শারদীয় দুর্গা পূজা শুরু করেন বলে জানাগেছে।

কালের পরিক্রমায় শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীন ভাবে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎযাপন করে চলেছেন। রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর পূজা অর্চনার জন্য একই স্থানে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছেন। এর একটি হলো গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, দূর্গা মাতা মন্দির এবং কালিমন্দির। এই চারটি মন্দিরে পূজা করতেন রাজা কংস নারায়ণ। রাজার নির্মিত সেই মন্দির গুলোতে এখনও পূজা করেন তাহেরপুরের হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রাজার মৃত্যুর পর থেকে মন্দিরটি সঠিক ভাবে দেখভালের অভাবে জরাজির্ণ হয়ে পড়ে মন্দিরটি। দীর্ঘদিন ধরে মাটির তৈরি প্রতীমায় পূজা করে আসছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুর যেহেতু শারদীয় দূর্গা পূজার প্রচলন করেন। তার সেই ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজার সেই শ্রী শ্রী দূর্গা মাতা মন্দিরে স্থাপন করছেন অষ্টধাতু দিয়ে ব্রোঞ্জ এর তৈরি প্রতীমা। এক টনের বেশি ওজনের এই প্রতীমাটি তৈরি করতে ২২ লাখেরও বেশি অর্থ খরচ হয়েছে বলে জানাগেছে। প্রায় ৬ মাস ধরে মন্দির এবং এর আাশপাশে সংস্কার কাজ করছে কঘ ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্কারের ফলে পুনরায় নতুন রুপে দেখা যাচ্ছে মন্দিরটিকে। মন্দিরটির ইতিহাস অনেক পুরোনো হলেও সংস্কারের ফলে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে মন্দিরটি। মন্দিরে এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে অষ্টধাতু দিয়ে ব্রোঞ্জ এর তৈরি প্রতীমা। প্রতীমাটি স্থাপন করলেও এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। সারদীয় দূর্গোৎসব উপলক্ষে সরগরম হয়ে উঠেছে তাহেরপুর সহ উপজেলার সর্বত্র। কোথাও কোথাও বাজানো হচ্ছে ঢাক। পূজার আগেই ঢাক ঠিকঠাক আছে কি না সেটা দেখে নিচ্ছেন তারা।

বাঙ্গালী হিন্দুদের দূর্গা পূজার উৎপত্তিস্থলে অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি প্রতীমার শুভ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শ্রী শ্রী দূর্গা মাতা মন্দির কমিটি। আয়োজন করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। জমকালে আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে প্রতীমাটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী শ্রী বীরেন শিকদার এমপি। এছাড়াও আরো উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন, বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সাধন মজুমদার এমপি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সস্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এ.কে.এম. হাফিজ আখতার, বিপিএম, জেলা প্রশাসক এস.এম আব্দুল কাদের, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ পিপিএম, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, কেন্দ্রীয় পূজা উৎযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমার সরকার, বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, নাটোর পৌর সভার মেয়র ঊমা চৌধুরী, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শ্রী শ্রী দূর্গা মাতা মন্দির (রাজবাড়ী) তাহেরপুরের সভাপতি নিশীথ কুমার সাহা।

মন্দির কমিটির সদস্য বিজয় চন্দ্র ভট্টাচার্জ বলেন আমার জন্মের ছয় বংসধর আগে থেকে এই পূজা করে আসছে। বাপ-দাদার সেই ধর্মকে আজও পালন করে আসছি। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, কেন্দ্রীয় পূজা উৎযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ব্যক্তিগত অর্থায়নে যে উদ্যোগে গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। দেশে এবং দেশের জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আর ভালবাসার একটা মহান দৃষ্টান্ত এটা। হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বলীদের জন্য এমন মহান কাজ করায় তাদের পক্ষ থেকে এমপি এনমুল হককে অভিনন্দন জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রাজশাহী-৪(বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেছেন, রাজা কংস নারায়ণ রায় বাহাদুরের সেই শারদীয় দূর্গা পূজার প্রকৃত ইতিহাস যুগযুগান্তর ধরে যেন মানুষ স্মরণ করে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে অষ্টধাতু দিয়ে ব্রোঞ্জের প্রতীমা তৈরি করে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস এই প্রতীমা স্থাপনের ফলে তাদের মাঝে একটা উৎসাহ কাজ করবে। সেই সাথে রাজার সেই মন্দিরের সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। সংস্কার করা হলে এটা একটা হিন্দু সনাতন ধর্মাবম্বলীদের জন্য সারা বছর ধরে তির্থস্থানে পরিণত হত পারে বলে তিনি মনে করেন।

উৎপত্তি লগ্নে এক মাস ব্যাপি শারদীয় দূর্গা পূজা করলেও বর্তমানে পাঁচদিন ব্যাপি উৎযাপন করা হচ্ছে দূর্গা পূজা। আগামী ১৫ অক্টোবর শুরু হচ্ছে শারদীয় দূর্গা পূজা। আগামী ১৯ অক্টোবর দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ শারদীয় দূর্গোৎসব।