সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

হারে শুরু বাংলাদেশের

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
news-image

ক্রীড়া প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ডের ৩৪১ রান টপকে জিততে হলে রেকর্ডই গড়তে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু জয়ের কাছেও যেতে পারল না মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানের হার সঙ্গী করে সিরিজ শুরু করল সফরকারীরা।

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ৩৪২ রানের রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। মারার বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে, ছাড়ার দেওয়ার পর ছেড়ে দিয়ে প্রথম ৭ ওভারে দুজন তোলেন ৩০ রান। কিন্তু অষ্টম ওভারে টিম সাউদির একটি শর্ট বল ইমরুলের ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার লুক রনকির গ্লাভসে। ২১ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ইমরুল করেন ১৬। বাংলাদেশের স্কোর তখন ১ উইকেটে ৩৪।

প্রস্তুতি ম্যাচে রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে ওয়ানডে দলে ফিরেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে হতাশই করলেন বাঁহাতি ওপেনার। জেমস নিশামের বলে মিড অফে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেওয়ার আগে সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১ রান। একই ওভারে ডাক মেরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহও। তখন ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ।

দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন তামিম। তবে সেটিও খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৮তম ওভারে নিশামের বলে তামিম মিচেল স্যান্টনারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেল ভেঙে যায় ৩৩ রানের জুটি। ৫৯ বলে ৫ চারে তামিম করেন ৩৮।

এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাকিব। ২৭তম ওভারে স্যান্টনারের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৫০ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি। পরের ওভারে লোকি ফার্গুসনকে লন অনের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেন গ্যালারির দর্শকদের মাঝে। কিন্তু পরের বলে আবার ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড উইকেটে সাউদির হাতে ধরা পড়েন সাকিব। ৫৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাকিব ৫৯ করে ফেরার সময় বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১৪৪।

ব্যাটিং পজিশন পাল্টে সাতে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন সাব্বির রহমান। ফার্গুসনের বলে বোল্টকে ক্যাচ দেওয়ার আগে এক ছক্কায় সাব্বির করেন ১৬। তবে মোসাদ্দেক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দলের স্কোর ২০০ পার করেন মুশফিক। দুজন দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ৩৮তম ওভারে স্যান্টন্যারের বলে কঠিন একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ডাইভ দিয়ে চোট পান মুশফিক। ফিজিওর সেবাশুশ্রূষা নিয়ে একটি বল খেলার পর আর মাঠে থাকতে পারেননি টেস্ট অধিনায়ক। ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ৪২।

বাংলাদেশের যে ক্ষীণ আশা ছিল, সেটিও নিভে যায় মুশফিক মাঠ ছাড়ার পরেই। পরে মোসাদ্দেকের ফিফটি কেবল বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানই যা একটু কমাতে পারে। ৪৪ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। টসের সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানান, জিতলে তিনি বোলিংই বেছে নিতেন। বোলিংয়ে শুরুটাও হয়েছিল ভালোই। শুরুটা দুর্দান্ত করেন দীর্ঘ ৯ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মুস্তাফিজ।

‘কাটার মাস্টার’ ইনিংসের ষষ্ঠ আর নিজের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন। ঝড় তোলার আগেই মার্টিন গাপটিলকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই পেসার। তার স্লোয়ার বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন গাপটিল। কিন্তু টাইমিং হয়নি, বল উঠে যায় আকাশে। মিডঅনে বলটি সহজেই তালুবন্দি করেন সৌম্য সরকার। ১৯ বলে একটি করে চার, ছক্কায় গাপটিল করেন ১৫। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ১ উইকেটে ৩১।

গাপটিলের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে ল্যাথামকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে গাপটিলের উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজকে সরিয়ে আরেক পেসার তাসকিনকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। সেই তাসকিনই নিজের তৃতীয় ওভারে উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৪৮ রানের জুটি। তাসকিনের বাউন্সার কিউই অধিনায়কের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৩৬ বলে ৫ চারে উইলিয়ামসন করেন ৩১। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৭৯।

ছয় বছর পর এদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে খেলতে নামেন নিল ব্রুম। ৩৩ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ রানেই। কিন্তু সাকিবের বলে ডিপ মিড উইকেটে ব্রুমের ক্যাচ ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। অবশ্য নিজের পরের ওভারেই ব্রুমকে (২২) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরের পথ দেখান সাকিব। নিজের এক ওভার পরে এসে নতুন ব্যাটসম্যান জেমস নিশামকেও (১২) এলবিডব্লিউ করেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৫৮।

এরপরই মানরোর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের স্কোর ২০০ পার করেন ল্যাথাম। ৪০তম ওভারে তাসকিনের বল ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে ঠিক ১০০ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিও তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আর মানরো ৪৪ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। তাতে ৪২ ওভারেই আড়াই শ’ পেরোয় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ। মাইলফলক ছোঁয়ার পর আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এই দুজন। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে মাশরাফিকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের স্কোর ৩০০ পার করেন ল্যাথাম।

ঝড় তোলা মানরোকে ফিরিয়ে ১৫৮ রানের বড় জুটি ভাঙেন সাকিব। তাসকিনকে ক্যাচ দেওয়া মানরো ৬১ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৮৭। পরের ওভারে ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ১২১ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ল্যাথাম। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ উঠে যায় চূড়ায়।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আজকের ৩৪১ রানই এখন নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ১৯৯০ সালে শারজায় দুই দলের প্রথম দেখায় কিউইরা ৪ উইকেটে করেছিল ৩৩৮। হ্যাগলি ওভালে ৩০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। পারল না বাংলাদেশও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩৪১/৭ (ল্যাথাম ১৩৭, মানরো ৮৭, উইলিয়ামসন ৩১; সাকিব ৩/৬৯, মুস্তাফিজ ২/৬২, তাসকিন ২/৭০)।