বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

খালাস পেয়ে লাপাত্তা পাকিস্তানি জঙ্গি বাংলাদেশের সমন্বয়ক ‘মুবাশ্বের’

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈয়্যবার ‘সমন্বয়ক’ সন্দেহে ঢাকায় গ্রেপ্তার দেশটির নাগরিক মুবাশ্বের শহীদ ওরফে মুবিন ওরফে ইয়াহিয়া সবকটি মামলায় খালাস পাওয়ার পর এক মাস ধরে লাপাত্তা।

২০০৯ ও ২০১০ সালের মধ্যে ঢাকায় দুই দফায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর চারটি মামলা হয়েছিল মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে জাল টাকার দুই মামলায় ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর তাকে খালাস দেন ঢাকার পাঁচ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক রুহুল আমীন।

সবশেষ গত ১০ নভেম্বর বিস্ফোরক দ্রব্য ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনের দুই মামলায় একই ট্রাইব্যুনালের বর্তমান বিচারক মো. জাহিদুল কবির পাকিস্তানি এই নাগরিককে খালাস দেন।

কিন্তু তার খালাসের রায় এবং তিনদিনের মাথায় মুক্তির বিষয়টি সংবাদকর্মীরা জানতে পারেন এক মাস পর।

মুবাশ্বেরের আইনজীবী সৈয়দা তাহমিনা হাসেমী বলেন, “গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মুবাশ্বের।”

মুক্তির পর মুবাশ্বের ঢাকায় আছেন, নাকি দেশে ফিরে গেছেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি। কারা কর্তৃপক্ষও কিছু বলতে পারেনি।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে জাল নোটসহ গ্রেপ্তারের পর মামলা হয় পাকিস্তানি নাগরিক মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে। মামলার এজাহারে তার স্থায়ী ঠিকানা ‘সি-৯ শামসি সোসাইটি, ওয়্যারলেস গেট, করাচি’ লেখা হয়।

এ মামলায় ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আইনজীবী সৈয়দা তাহমিনা হাসেমীর জিম্মায় হাই কোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।  পরদিন রাত ১১টায় রাজধানীর চানখাঁরপুল থেকে তাকে আবার গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তখন র‌্যাব-১০ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুবাশ্বের পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে জঙ্গিদের নিয়ে বৈঠক করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অল্পের জন্য তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এরপর সূত্রাপুর থানা পুলিশ মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, মুদ্রা জালিয়াতি এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তিনটি মামলা করে।

মুবাশ্বের ‘পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবার মূল সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করছেন’ বলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

তার খালাসের বিষয়টি নিয়ে অনেক পরে জানাজানি হলে আলোচনা শুরু হয়। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার বিদেশি একজন নাগরিক কীভাবে খালাস পেয়ে অন্তরালে চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবীরা।

বিদেশি নাগরিকদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও মুবাশ্বেরের ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ তা মানেনি বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনজীবী সৈয়দা তাহমিনা হাসেমী বলেন, “মুক্তির পর তিনি কোথায় আছেন কেউ তা জানে না। মুক্তি দেওয়ার বিষয় পাকিস্তান দূতাবাসও জানে না।”

পাকিস্তান দূতাবাসকে জানানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তথ্য না দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, “কাগজপত্র পেয়ে নিয়ম মেনে আমরা তাকে মুক্তি দিয়েছি। তিনি কোথায় আছেন আমাদের জানা নাই।”

বিস্ফোরক দ্রব্য ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মুবাশ্বেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতার বিষয়টি আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

বিস্ফোরক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় বলেন, “আসামি মামলার নথিপত্রে উল্লেখ করা পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়্যবার সমন্বয়ক ছিলেন কিনা, রাজধানীর কাপ্তানবাজারের হোটেল শৈবালের ৫৮ নম্বর কক্ষের বোর্ডার ছিলেন কিনা, এর আগে কোনো মামলায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কারণে কারাগারে ছিলেন কিনা, হোটেল থেকে তার ৪/৫ জন সহযোগী সন্ত্রাসী নিয়ে পালিয়েছিলেন কিনা, আসামির দেহ তল্লাশি করে অবৈধ মালামাল পাওয়া গিয়েছিল কিনা, কথিত ঘটনার তারিখ ও স্থানে কোনো ব্যক্তির জীবন বিপন্ন করা বা সম্পত্তির গুরুতর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশে বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন কিনা, তা প্রমাণ করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষে বাদী, তদন্ত কর্তা  বা অন্য সাক্ষীরা সাক্ষ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।”

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “হোটেল বোর্ডার, সহযোগী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে আসেনি। তাছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছেন যে, তিনি তদন্তে নিষ্দ্ধি সংগঠনে জড়িত কিনা বা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন কিনা, তা তিনি খুঁজে পাননি। যে কারণে আসামিকে খালাস দেওয়া হল।”

এ প্রসঙ্গে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এবিএম বশির উদ্দিন মিয়া বলেন, “খালাস দেওয়া ছাড়া বিচারকের কোনো উপায় ছিল না।”

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন এই আইনজীবী।