শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মানবতার সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত “বাগমারা ছাত্রবন্ধন”

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
news-image

মালেক সরদার  রাবি প্রতিবেদক:  ২০১১ সালের  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাগমারার কিছু তরুন  উদ্দমী ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে পথচলা শুরু করেছিল  ‘বাগমারা ছাত্রবন্ধন’। লক্ষ্য একটাই, বাগমারার মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পথে পথ প্রদর্শন, আবাসিক সুবিধা ও অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করা। এছাড়াও বাগমারা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষদের মাঝে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুুপিং নির্ণয় ও মুমূর্ষু রোগীদের রক্তদানে সহায়তা করা।

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলা এই সংগঠনটি অাজ অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে বাগমারা ছাত্রবন্ধনে অসামান্য প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও রাজশাহী কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত একঝাঁক তরুন ছাত্র ।

বাগমারা ছাত্রবন্ধন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক একটি সংগঠন।

এ সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, গত এক বছরে  বাগমারা ছাত্রবন্ধনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান “বন্ধনের” সহায়তায় বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, তাহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ কয়েকটি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে প্রায় ২৫০০ জনের বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয় করা হয়েছে। আনুমানিক ৩০-৩৫ জন মুর্মূর্ষু রোগীকে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়াও সংগঠনটির সহায়তায় এ পর্যন্ত ২২ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষাবৃত্তি ও বিনামূল্যে আবাসন সুযোগ-সুবিধা  প্রদান করা হয়েছে।

বাগমারা ছাত্রবন্ধনের সহায়তায় বাগমারা উপজেলার অনেক ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,  মেডিকেল কলেজ,  রুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্টানে অধ্যয়নরত। মেধাবীদের মধ্যে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ” বিভাগে অধ্যয়নরত বাগমারার কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের জুয়েল রানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্ব মূর্হূর্তে বাগমারা ছাত্রবন্ধন আমাকে মাসিক বৃত্তি প্রদান করত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর ভর্তি ফি ব্যবস্থা করতে না পারলে বাগমারা ছাত্রবন্ধন আমার পাশে দাড়ায় এবং ভর্তি হতে অনেক সহায়তা প্রদান করে।

ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত বাগমারা উপজেলার মোছাঃ আশরেফা আকতার সোনালী সময়কে বলেন, আমার এ পর্যন্ত আশার পিছনে সম্পূর্ন অবদান বাগমারা ছাত্রবন্ধনের। আমার মা-বাবার পক্ষে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা এবং পড়াশুনার এত ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে “ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যান্ড প্রোডাক্টশন ইঞ্জিনিয়ারিং (IPE) বিভাগে অধ্যয়নরত মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, বাগমারা ছাত্রবন্ধন যেভাবে অামাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে তা কখনও ভুলতে পারব না। কারন, অামার এ দীর্ঘ পথচলার সঙ্গী ছিল বাগমারা ছাত্রবন্ধন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃএনামুল হক জানান, বাগমারার সকল ছাত্র তথা সকল মানুষের সার্বিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গত ২৯ জানুয়ারি ২০১১ সালে কতিপয় মেধাবী প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের দ্বারা গঠিত হয় বাগমারা ছাত্রবন্ধন। ২০১৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি সংগঠনটি বাংলাদেশ সমাজসেবা অধিদপ্তর হতে নিবন্ধনকৃত হয়। যার নিবন্ধন নং রাজশাহী ১০৪৩/১৬।

সংগঠনটিকে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য। এবং তাঁরা সবাই বাগমারা উপজেলারই অালোকিত সন্তান। জনতে চাইলে দৈনিক উপচার পত্রিকার সম্পাদক ও এভারগ্রীন মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ অাবু ইউসুফ সেলিম সোনালী সময়কে বলেন, সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বাগমারা ছাত্রবন্ধনকে এক নামে চিনবে সারা বাংলাদেশ। অার অামরা সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। রাজশাহী জেলা কালচারাল অফিসার ফারুকুর রহমান ফয়সাল জানান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবকল্যাণে যেভাবে বাগমারা ছাত্রবন্ধন কাজ করে যাচ্ছে, সকলের সহযোগিতা পেলে অবশ্যই একদিন এটা বাগমারা এলাকার সকল মানুষের আস্থায় পরিণত হবে।
এছাড়াও বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে বাগমারা ছাত্রবন্ধন তাদের নিজস্ব ওয়েসাইট www.chattrabondhan.org

এর মাধ্যমে সংগঠনের সকল তথ্য সংরক্ষণ করে।
এবং ফেসবুকে বাগমারা ছাত্রবন্ধনের অফিসিয়াল পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে জানান দেয় তাদের প্রতিটি কার্যক্রম।

উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বাগমারা ছাত্রবন্ধনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে “বন্ধন” এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্ধন বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয়  এবং মুর্মূর্ষু রোগীকে রক্ত সরবরাহ করে থাকে।