শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ময়মনসিংহের বধ্যভূমিগুলো পরিচর্যা হয় না

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
news-image

ময়মনসিংহপ্রতিনিধি: ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, ছোট বাজার, সার্কিট হাউজসংলগ্ন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট চারটি স্থানে বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়েছে।

একমাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বধ্যভূমিটি বাদে বাকি তিনটির যথাযথ পরিচর্যা করা হয় না।

ছোট বাজার : ময়মনসিংহ শহরের ছোট বাজার এলাকাটি বর্তমানে মুক্ত মঞ্চ নামে পরিচিত। এলাকাটিতে থাকতেন নজর নামে এক বিহারি রাজাকার। সেখানে তার ঘরের পেছনেই ছিল একটি গভীর কুয়া। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদারদের খুন করা লাশ ফেলা হতো কুয়াটিতে।

একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর সেই কুয়াতে তিন থেকে চারশ’ কঙ্কাল দেখতে পান ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর লাশভর্তি সেই কুয়ার ওপরই গড়ে তোলা হয় ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকের নিচে চাপা পড়ে বাঙালির আত্মত্যাগের নিদর্শন। এটা মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার ওপর রাজাকারদের আঘাত বলে অভিযোগ করেন ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার আনোয়ার হোসেন। একান্ত সাক্ষাৎকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার হারুন আল রশিদ বলেন, নজর বিহারির সহায়তায় গুলি ও গলা কেটে হত্যার পর কুয়াটিতে লাশ ফেলতো পাকিরা।

তিনি বলেন, ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে আমরা এসে দেখি, ছোট বাজারের এ কুপে ৩০০ থেকে ৪০০টি কঙ্কাল পড়ে রয়েছে।

সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্ত দিবসের আগের রাতেই ওই বিহারি নিজের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ওই বিহারি আবার সশরীরে ময়মনসিংহে হাজির হন। ইসলামী ব্যাংকের কাছে জায়গা বিক্রি করে দেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ‘বধ্যভূমি’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়েছিলাম সেখানে। ইসলামী ব্যাংক সেই সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে রাতের অন্ধকারে। এর প্রতিবাদ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু তা কানেই তোলেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সর্কিট হাউস সংলগ্ন বধ্যভূমি : ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদছোঁয়া শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানের সবুজ বেষ্টনীর মধ্যে এ বধ্যভূমিটি পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। এরই মধ্যে পোস্টারের আড়ালে চলে যেতে বসেছে মুক্তিকামী বাঙালিদের ত্যাগের এই স্মৃতিচিহ্ন। এমনকি মুছে যেতে বসেছে বধ্যভূমির নামফলকটিও। ফলকটির ওপর একজনের নাম লিখে রাখা হয়েছে কালো কালিতে। তার ঠিক ওপরেই সেঁটে রাখা হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পোস্টার। বধ্যভূমি অবমাননার এমন নজির আর হয় না।

জেলা পরিষদ বধ্যভূমি  :  ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরের বধ্যভূমিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদের জলে। বহু কঙ্কাল পড়ে থাকে। হানাদারদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতীক হিসেবে ৪৫ বছর পর সেখানে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি।

এ কাজে অর্থ যোগান দেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু এ বধ্যভূমির জায়গা দখল করার জন্য অতিসম্প্রতি সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বধ্যভূমির চারপাশে জমেছে ময়লা আবর্জনার স্তুপ।

ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বধ্যভূমিকে আগে দখলমুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে নরঘাতকরা মেতে ওঠে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে। ১৪ ডিসেম্বর বরেণ্য ব্যক্তিদের রাতের অন্ধকারে বাসা ও কর্মস্থল থেকে অজ্ঞাত সব স্থানে নিয়ে যায়। এমনই এক অজ্ঞাত স্থান হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর। ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের।

শহীদদের আত্মাহুতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ফার্স্ট গেট এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করা হয় বধ্যভূমি। সে সময় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি না হওয়ায় ১৯৯৩ সালে ১৪ নভেম্বর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুকের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের সৌজন্যে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটির উদ্বোধন করেন বাকৃবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সাত্তার মন্ডল।