শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এই উইকেটেও মাশরাফির আগুন!

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
news-image

ক্রীড়া ডেস্ক: কলিন মানরোকে অনেক দিন মনে রাখতে হবে ডেলিভারিটা। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়েছিল বল। মানরো যেন আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন সেটাকে সামনের দিকে ঠেলে দেওয়ার। কিন্তু বল সিমের ওপর পড়েই নিখুঁত বাঁক নিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে। মিডল স্টাম্পে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। উড়ে গেল স্টাম্প।

মাশরাফি বিন মুর্তজার হাত থেকে বের হওয়া এ রকম আরও দুর্দান্ত সব ডেলিভারি দেখল আজ নেলসনের দর্শকেরা। সেগুলোর খুব কমই উইকেট নিতে পেরেছে। মানরোর বাইরে মূল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু মার্টিন গাপটিলকেই ফেরাতে পেরেছেন মাশরাফি। সেটা ইনিংসের প্রথম ওভারেই। উইকেটে গিয়ে ঠিকভাবে দাঁড়ানোরও সময় পাননি গাপটিল। চতুর্থ বলেই এলবিডব্লু।

শেষ দিকে ফার্গুসনের উইকেটটিও নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফিই সেরা হয়ে থাকলেন। তবে শুধু উইকেটসংখ্যা দিয়ে বোলিংয়ের তুল্যমূল্য নির্ধারণ করলে তাঁর প্রতি অন্যায়ই করা হবে। যে বলগুলোয় উইকেট পাননি, সেগুলোও যে বারবার নাড়িয়ে দিয়ে গেছে ব্ল্যাক ক্যাপ ব্যাটসম্যানদের!

৪-১-১৫-১—প্রথম স্পেলের এই মাশরাফিকে দেখা গেছে পরের স্পেলগুলোতেও। তিন ওভারের দ্বিতীয় স্পেলটা ছিল ৩-০-১০-১। তৃতীয় স্পেলে দুই ওভারে ১২ রান দিলেও নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ততক্ষণে মাশরাফি বিষে অনেকটাই নীল। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে এসে প্রথম ৪ বলেই দিয়ে ফেললেন ১২। সেটাকে পোষাতেই কিনা পঞ্চম বলে ফার্গুসনকে কট বিহাইন্ড করে উইকেট সংখ্যাটা আরেকটু বাড়িয়ে নিলেন।

ম্যাচের আগে সবার ধারণা ছিল, স্যাক্সটন ওভালে ভালো কিছুর স্বপ্ন শুধু ব্যাটসম্যানরাই দেখতে পারেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চোখে স্বপ্নটা আরও বেশি করে ধরা দিয়েছে। কারণ, এ মাঠের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা তাঁদের হাতেই গড়া। গত বিশ্বকাপে এই স্যাক্সটনই স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু আজ চিত্রনাট্যটা যেন বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষেই লেখা ছিল এবং তাতে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি নিজে। সকালের কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেটে বারুদ ঘষলেন মাশরাফি। শর্ট বলটা আচমকা তীব্র গতি নিয়ে লাফিয়ে উঠল। পরের বলে গাপটিলের বিপক্ষে এলবিডব্লুর কড়া আপিল এবং এর পরের বলে তো গাপটিল আউটই হয়ে গেলেন।

সকালের আকাশ দেখে যে সব সময় সারা দিনের অনুমান করা যায় না, সেটা নেলসনেই প্রমাণিত হলো আজ। সকাল ১১টায় ম্যাচ শুরুর সময়ও সূর্যের দেখা নেই। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিটা কখন আসার কথা, সেই খোঁজখবর চলছিল চারদিকে। কিন্তু ম্যাচের চার-পাঁচ ওভারের মধ্যেই ঝলমলে রোদে হেসে ওঠে নেলসন। অবশ্য উল্টোটাও আছে। মাশরাফি সকাল সকাল যে শুরুটা এনে দিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ডের পুরো ইনিংসের ভবিষ্যদ্বাণীই যেন করে দিয়েছিল সেটা।

নিজের বোলিং তো ছিলই, সঙ্গে অন্যদের কাছ থেকেও সময় মতো সেরাটা বের করে এনেছেন অধিনায়ক। দুর্দান্ত সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোলিং পরিবর্তনে। তাসকিন, সাকিব দুজনই বোলিংয়ে আসার দ্বিতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। জেমস নিশামকে ফিরিয়ে মোসাদ্দেক সাফল্য দেখেছেন প্রথম ওভারেই। নিল ব্রুমের সঙ্গে নিশামের ৫১ রানের জুটি ভেঙে নিউজিল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বাধা হয়েছেন তিনি।

৪৩তম ওভারে শুভাশিষকে তৃতীয় স্পেলে ফেরানোর মধ্যেও একটা চমক ছিল। প্রথমে নিজেই ওভারটা করতে গিয়ে কী মনে করে যেন শুভাশিষের হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক। শুভাশিষও কিনা ওই ওভারেই পেয়ে গেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের দেখা এবং সেটাও মাশরাফিরই নেওয়া ক্যাচে!

অধিনায়ক, বোলার, ফিল্ডার—সবভাবেই দলকে কিছু না কিছু দেওয়ার পর আর যেটা বাকি থাকে, সেখানেও নিশ্চুপ ছিলেন না মাশরাফি। ফিল্ডিংয়ের সময় দলকে উজ্জীবিত করতে সব সময়ই প্রচুর কথা বলেন। দূরের প্রেসবক্স থেকে সেসবের কতটুকুই–বা আর শোনা যায়! স্যাক্সটন ওভালের মাঠ–লাগোয়া প্রেসবক্স (আসলে তাঁবু) সেই সুযোগ করে দিল। কখনো চিত্কার করে সতর্ক করছেন, ‘৭ ওভারে ২০ হওয়ার কথা, হয়ে গেছে ৩৫…’, কখনোবা দলকে চাঙা করতে বলছেন, ‘আল্লাহরওয়াস্তে কেউ মইরা থাকিস না…।’

মাশরাফির ডাকে সাড়া দিয়েই কিনা বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সময় অন্তত কেউ ‘মরে’ থাকেনি। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কানে তো অধিনায়কের কথার প্রতিধ্বনিটা পৌঁছাল না।  স্যাক্সটন ওভালের উইকেটে ২৫২ রানের সহজ লক্ষ্যটাকে ‘আত্মহত্যার’ মিছিলে নেমে তাঁরা অসম্ভব বানিয়ে ফেলল!