শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

এভাবেও তাহলে হারা যায়!

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
news-image

ক্রীড়া ডেস্ক:
আরও একবার টেস্ট ক্রিকেট প্রমাণ করল তার শ্রেষ্ঠত্ব। ক্রিকেটের সব রোমাঞ্চ দেখা দিল বেসিন রিজার্ভের শেষ দিনে। চার দিন প্রাধান্য বিস্তার করেও ওয়েলিংটন টেস্টে হেরে গেল বাংলাদেশ। সফরকারীদের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের জয়টা এসেছে ৭ উইকেটে।

আজ শেষ দিনে স্টেডিয়ামের গ্যালারি উন্মুক্ত করে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। স্থানীয় দর্শকেরা তাই হাজির হয়েছিলেন দলে দলে। সমর্থকেরা নিজেরাও ভাবতে পারেননি কী দুর্দান্ত উপহার অপেক্ষা করছে তাঁদের জন্য। চতুর্থ দিন শেষেও ড্র হবে বলে মনে হচ্ছিল, সে টেস্টটাই জিতে গেল স্বাগতিক দল।
হারার আগেই তো হেরে গেল বাংলাদেশ। চা-বিরতির আগেও লড়াইয়ের চেষ্টা ছিল বাংলাদেশের মাঝে। কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সে আত্মবিশ্বাস উড়ে গেল কর্পূরের মতো। বোলারদের মধ্যে দেখা গেল না কোনো তাড়না, ফিল্ডারদের কাঁধ নুইয়ে পড়ল, মাঠে কোথাও শোনা যাচ্ছে না কোনো উৎসাহ বাণী। বোলাররা ভুলে গেলেন লাইন লেংথ, ফিল্ডারদের কাছ থেকেও পাচ্ছিলেন না প্রয়োজনীয় সাহায্য। ভাবভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাচের এমন রূপ এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁদের!
উইলিয়ামসন-টেলর অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন, এটা সত্যি কিন্তু তাই বলে এভাবে হাল ছেড়ে দেওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। দুই সতীর্থের চোটাঘাত, দুর্ভাগ্য আর অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ব্যর্থতা সবকিছুই যেন ঘাড়ে চেপে বসেছিল খেলোয়াড়দের কাঁধে। দলের সেরা ফিল্ডারকে দাঁড়াতে হলো গ্লাভস হাতে, এক টেস্টেই তৃতীয় উইকেট কিপার হিসেবে দাঁড়ালেন সাব্বির রহমান। দলের ফিল্ডিংটাও কেন যেন পথ হারাল। আর সে সুযোগে কাল বিকেলেও যেটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, সেটাই করে দেখাল নিউজিল্যান্ড। অনায়াসে জিতে গেল ওয়েলিংটন টেস্ট!
ইমরুল কায়েসের (৩৬*) সাহসিকতা আর সাব্বিরের (৫০) দৃঢ়তার পরও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬০ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৫৭ ওভারে ২১৭ রানের লক্ষ্যে নেমে প্রথম বলেই চার। টম ল্যাথাম জানিয়ে দিলেন ম্যাচটা জেতার জন্যই খেলছেন তাঁরা। ৩৯ রানের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিলেও তাই ঘাবড়ে যায়নি নিউজিল্যান্ড। এমনই পাল্টা আক্রমণ করলেন নিউজিল্যান্ডের সেরা দুই ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশ দল নিজেদের সব পরিকল্পনাই ভুলে গেল!
টেস্টের পঞ্চম দিনে ২৫.২ ওভারে ১৬৩ রান! একটা বাক্যেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর কী অত্যাচারটাই না করেছেন উইলিয়ামসন-টেলর। বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়ে মিরাজের দারুণ এক ক্যাচ হয়ে টেলর না ফিরলে ম্যাচটা এ দুজনই শেষ করে আসতে পারতেন। তবে নিজের কাজটা শেষ করে এসেছেন উইলিয়ামসন। ৯০ বলে ১০৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে দলের জয়টা এনে দিয়েছেন কিউই অধিনায়ক।
টেস্টের প্রথম ইনিংসে অসংখ্য রেকর্ড নতুন করে লিখেছে বাংলাদেশ। ম্যাচটা শেষ হতে হতে আজ লেখা হলো এমন আরও কিছু রেকর্ড। সাকিব আল হাসান সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে একই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি ও শূন্য পেয়েছেন। ৯ বছর পর নিউজিল্যান্ড ২০০ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জিতল। নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ ২০০ বা এর চেয়ে রান তাড়ার ঘটনাটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে!
তবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কষ্ট দেবে প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেও হারের লজ্জা। টেস্টে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করে হারের রেকর্ডটি ১২২ বছরের পুরোনো। ১৮৯৪ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৮৬ রান করেও হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তখন ছিল ‘টাইমলেস’ টেস্টের যুগ, ৭ দিন ধরে চলেছিল সে টেস্ট। পাঁচ দিনের টেস্টে সবচেয়ে বড় প্রথম ইনিংসে হারের রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের। মেলবোর্নে ৫৭৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সে ম্যাচে পাকিস্তান হেরেছিল ৯২ রানে। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে ঘাড়ে চেপে বসা সে লজ্জা আজ কাটিয়ে ফেলল পাকিস্তান।
কিন্তু বাংলাদেশের লজ্জাটা কাটানোর দায়িত্ব কে নেবে?