বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

স্কুলছাত্রী তাসপিয়ার মৃত্যু রহস্যের ‘কিনারা’ পেয়েছে পুলিশ

SONALISOMOY.COM
মে ৫, ২০১৮
news-image

নিজস্ব প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসপিয়া আমিনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তদন্তকারী পুলিশ সদস্যরা।

ঘটনার আরও একাধিক সিসি টিভির ফুটেজ হাতে পেয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনায় বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে এসেছে। এখন অপেক্ষা ভিসেরা রিপোর্টের। এটি পেলেই তাসপিয়া আত্মহত্যা করেছে, নাকি হত্যার শিকার তার রহস্য জানা যাবে বলে আশাবাদী পুলিশ।

পুলিশ এখন মোটামুটি নিশ্চিত, নগরীর চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে তাসপিয়া আর বাসায় ফিরে আসেনি।

মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে নতুন করে ওই রেস্টুরেন্টের সিসি টিভির একাধিক ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এছাড়া নগরের সন্দেহভাজন বেশ কিছু এলাকার সিসি টিভির ফুটেজও পুলিশের হাতে এসেছে। সংগ্রহ করা হয়েছে তাসপিয়াদের বাসার সিসি টিভির ফুটেজ।

সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাসপিয়া আমিনকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কারা নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, তারও তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট (ভিসেরা ও সিআইডি) হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।

এ বিষয়ে সিএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। ঢাকা থেকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই সব কিছু জানানো হবে।

নতুন করে তাসপিয়ার বাসার সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ১ মে বিকেল পাঁচটা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হয় তাসপিয়া। এরপর আর ফেরেনি। বাসার নিরাপত্তারক্ষী লোকমান হোসেনও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একই তথ্য দিয়েছেন।

আর নগরীর গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টের সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ওইদিন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তাসপিয়া ও তার বন্ধু আদনান মির্জা সেখানে প্রবেশ করে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টা ৩৭ মিনিটের দিকে তারা একসঙ্গে বেরিয়ে যায়।

এরপর রেস্টুরেন্টের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তাসপিয়াকে তুলে দিয়ে আদনান আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তার পিছু নেয়।

সন্ধ্যা ছয়টা ৪৮ মিনিটে ওআর নিজাম রোডে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাসফিয়ার বাসার গলির খানিক সামনে ধীরগতিতে চলছিল সিএনজি অটোরিকশাটি। বাসায় যেতে হলে ওয়েলফুড রেস্টুরেন্টের সামনের পথ পাড়ি দিয়ে মেডিকেল সেন্টারের গলি দিয়ে ঢোকার কথা। কিন্তু, সে পথে যায়নি তাসপিয়াকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি। একই সিএনজি অটোরিকশাতে রাত আটটা ১০ মিনিটে তাসপিয়াকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতপাড়ে দেখা গেছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, যতটুকু জেনেছি তাসপিয়ার কাছে কোনো টাকা ছিল না। তাহলে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া কে দিল? পুলিশের ধারণা, চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে অবস্থানকালে তাসপিয়ার আঙুলে একটি সোনার আংটি দেখা গেছে। কিন্তু, মরদেহ উদ্ধারের সময় সেটি পাওয়া যায়নি। এমনকি সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটিও এখনঅব্দি পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২ মে স্থানীয়রা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে একটি লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সৈকত এলাকার ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তর পাশে পাথরের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনেরা লাশটি তাসপিয়ার বলে সনাক্ত করেন।

সুরতহাল রিপের্টে মরদেহের এক চোখ উপড়ে ফেলা, অপর চোখ নষ্ট করে দেয়া ছাড়াও নাক-মুখ থেঁতলানো, পিঠ, বুক এবং নিতম্বে নির্যাতনের ছাপ পেয়েছে পুলিশ। তার বুকের মাঝেও নখের দাগ রয়েছে।

এর আগে গত ১ মে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিল স্কুলছাত্রী তাসপিয়া আমিন।

এ ঘটনায় ৩ মে তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন পতেঙ্গা থানায় তাসপিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদনান মির্জা মামলার আসামি ফিরোজের পরিচালিত ‘রিচ কিডস’ নামের গ্যাংস্টারের (এডমিন) প্রধান। আর বাকি চার আসামি সেই গ্যাংস্টারের সদস্য- শওকত মিরাজ, আসিফ মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম ও সোহায়েল প্রকাশ সোহেল।

তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন আসামিদের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনেছেন।