বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন’
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে আগামী ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর ‘২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন’। আইসিডিডিআর,বি-র আয়োজনে সম্মেলনটির কার্যকরী সহযোগিতায় রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; ব্র্যাক জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএইচ) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীতার ওপর আলোকপাত করে আজ মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস সম্মেলন কক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে।
এবছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে অসংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্ভাবনা”। মূল বিষয়ের আওতায় আরো যে বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে সেগুলো হলো ১) স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মসূচি, ২) কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ৩) অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী-সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি এবং ৪) ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থান। সম্মেলনটি ইতোমধ্যে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত ২৩২টি গবেষণা সারসংক্ষেপের (অ্যাবস্ট্র্যাক্ট) মধ্যে থেকে ১৪১টি মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ১১টি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০ জন নবীন গবেষক বৃত্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।
২০১৭ সালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের সাথে সমন্বয় রেখে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন বিষয়ে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পৃক্ততাকে সামনে তুলে আনা হয়েছিল। এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে দেশ ও দেশের বাইরের নানা শিক্ষাবিদ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা একটি অভিন্ন অবস্থান থেকে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে স্বাস্থ্য খাতে কাজে লাগিয়ে আগামীর সম্ভাবনাময় কৌশল পন্থা প্রণয়নে সহায়তা করবে। এটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ইতিবাচক অবস্থানে আনতে কার্যকর পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এই সম্মেলনটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৩ অর্জনের ক্ষেত্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহায়তা পাওয়ার একটি উপযুক্ত দিক নির্দেশনা দিবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “সারা বিশ্বেই কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দ্বারে দ্বারে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পেছনে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন। ১৯২০ সালের দিকে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বপ্রথম চীনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্মসূচি, টিকাদান কর্মসূচি এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাদান কর্মকা-ের সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ‘বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা কর্মী’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মতো স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে আজ সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী অনিবার্য গুরুত্ব লাভ করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্য সব দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশের মতোই বাংলাদেশের প্রশিক্ষিত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নির্মূলে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়ক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন। অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর কৌশলপত্র তৈরির প্রচেষ্টা থাকবে সম্মেলনে।
আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম খান, লাইন ডিরেক্টও, কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা (সিবিএইচসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মো: ড. ইকবাল আনোয়ার, বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক, শেয়ার প্রকল্প, হেলথ সিস্টেমস ও পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগ, আইসিডিডিআর,বি, অধ্যাপক ড. সাবিনা ফয়েজ রশীদ, ডিন, ব্র্যাক জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএইচ), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ড. ফারজানা ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক, সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ এবং ড. সমীর কান্তি সরকার, সাবেক লাইন ডিরেক্টর, এমআইএস, সাস্থ্য অধিদপ্তর।
সম্মেলনের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএসএআইডি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউকেএআইডি, এমএসএইচ, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, ব্র্যাক, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, এবং ডব্লিউএইচও।