শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

বাগমারার জোঁকা বিলের মাছে বিষ প্রয়োগ পুলিশের উপস্থিতিতে ভাউড়ে দুর্বৃত্তদের আগুন

SONALISOMOY.COM
মে ২৪, ২০২১
news-image

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের জোঁকা বিলে সদ্য অবমুক্তকরণকৃত মাছে বিষ প্রয়োগ করেছে দুর্বৃত্তরা। সেই সাথে মাছ পাহারা দিতে তৈরিকৃত ভাউড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলাও হয়েছে। চলতি বছরে জোঁকা বিলে মাছ চাষের লক্ষ্যে তিন দিনে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, ফলি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭০ মন মাছ বিলের একটি জলাধারে মজুদ করেন মৎস্যচাষী সহ জমির মালিকরা। এতে করে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। রবিবার দিরাগত রাতে দুর্বৃত্তরা সংগবদ্ধ হয়ে চাষের জন্য মজুদকৃত মাছে বিষ প্রয়োগ করে। বিষ প্রয়োগের পরে সেখান থেকে মাছ ধরে উপজেলার হাট-গাঙ্গোপাড়া সহ বেশ কয়েকটি মৎস্য আড়তে গিয়ে সেগুলো বিক্রয় করে।

সোমবার ভোরে বিলে মজুদকৃত মাছ ধরছিল লোকজন। বিষয়টি দেখতে মৎস্যচাষীদের মধ্যে বাবুল নামের একজন সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান সকল মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠেছে। বিষয়টি তাৎক্ষনাত অন্যদের জানায়। খবর পেয়ে অন্যরা মাছ দেখতে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয়া হয়। কতিপয় দুর্বৃত্ত দেশীয় বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র নিয়ে জোঁকা বিলের বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে থাকে। যাতে কেউ মাছ দেখতে যেতে না পারে। ঘটনাটি মুঠোফোনের মাধ্যমে বাগমারা থানা পুলিশকে অবহিত করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। পরে জোঁকা বিল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে মাছ পাহারা দেয়ার জায়গায় (ভাউড়) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মাছ সহ ভাউড় পুড়িয়ে ফেলে অনেক টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে হাট-গাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

জানাগেছে, ইতোপূর্বে জোঁকা বিলে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে ৩ বছরের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেন অন্য সদস্যরা। ওই ঘটনায় এক সময় কমিটির সদস্য এবং জমির মালিকরা মুখোমুখি অবস্থান নেই। ওই বিলের প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা সেই সময় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে জোঁকাবিল মৎস্য প্রকল্পের সভাপতি নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সহ তার পক্ষের লোকজন সঠিক ভাবে বিলের হিসাব-নিকাশ প্রদান না করে জোর পূর্বক প্রতিদিনই মাছ বিক্রয় করে। মাছ চাষ প্রকল্পের বেশ কয়েকজন সদস্য সহ জমির মালিকরা বলেন কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ আমাদেরকে কোন টাকা পরিশোধ না করে নিজেই তার অনুসারীদের নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। এটা নিয়ে অনেক অভিযোগ ও মামলাও করেন জমির তারা।

জোঁকা বিলের জমির মালিক কামরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, রহিদুল ইসলাম, কুবাদ আলী সহ অনেকে বলেন, তিন বছরে ৩০ বার বিলের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার কথা থাকলেও ৩ বছরে মাত্র ১১ বার টাকা সদস্যদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। বাকি টাকা নিজের কাছে রেখেছে সভাপতি।

উল্লেখ্য ২০১৮ সালে জোঁকা বিলের হিসাব নিকাশ ঠিক ভাবে পরিশোধ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেন সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান। সেই ঘটনায় মামলা সহ অনেক কিছুই হয়। অবশেষে একদিন সংঘর্ষ বাধে বিষয়টি নিয়ে সেই সময় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন আনিছুর রহমান। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রয় হয় এই জোঁকা বিল থেকে। সভাপতির বিরুদ্ধে কথা বললেই বাদ দেয়া হয় বিল পরিচালনা কমিটি থেকে কথা জমির মালিক সহ যাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে তাদের কাউকে ঠিক মতো অংশের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। বিলের দখল নিজের কাছে রাখতে সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিলের মেয়াদ শেষে হওয়ার পরও টাকা পরিশোধ এমনকি কোন হিসান-নিকাশ প্রদান করেননি প্রকল্পের সভাপতি।

এ ঘটনায় থানা সহ মহামান্য আদালতে মামলা মোকদ্দমাও করেন ভুক্তভোগীরা। বর্তমানে জোঁকা বিল নিয়ে যে বিরোধ চলছে তা যে কোন সময় সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে তাই অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে দ্রুত একটা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। এর আগে প্রশাসনের রহস্য জনক কারনে আনিছুর রহমানকে জীবন দিতে হয়েছিল ওই বিলে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে। একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত পূর্বক সকল সদস্যের প্রাপ্ত অংশ পরিশোধ করা জরুরী। এতে জোকা বিলের হাজারো জমির মালিক সহ অপূরনীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকার নিরীহ জনগণ। আগের কমিটির নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ায় নতুন করে জোঁকা বিলে মাছ চাষের জন্য মজুদ করে স্থানীয় মৎস্যচাষী সহ জমির মালিকরা। এর আগে নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার আব্দুর রশিদকে সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ ৪২সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে ৩বছর মেয়াদে মাছ চাষ করে। গঠিত কমিটিতে সভাপতি তার নিজস্ব লোকজনকে রেখে যারা নেতৃত্ব দিতে পারবে এমন লোকজনকে কৌশলে বাদ দেয়া। তাদেরকে নিয়েই সভাপতি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে জানান জমির মালিকরা। এতে করে ওই বিলের বেশির ভাগ জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন।

বিলের জমির মালিকরা অভিযোগ করেন কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কোন সভা আহ্বান করেননি। সকল সদস্যদের মাঝে লভ্যাংশের টাকাও ভাগ করে দেননি। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কতিপয় সদস্যকে নিয়ে মাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হাট-মাধনগর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার, বাবুল হোসেন, আতাউর রহমান, সাহেব আলীসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক ওই বিলের জমি মালিক এসব অভিযোগ করেন। কমিটির অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের বাড়িঘরে একাধিক বার হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সেই সময় বাসুদেবপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখায় ও বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে।

সাবেক চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, জোঁকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন ভাবে জমির মালিকরা মাছ চাষের লক্ষ্যে আবারও বিলের জলাধারে মাছ মজুদ শুরু করেছে। সকলের শান্তিপূর্ব অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন ভাবে মৎস্য চাষ করা হবে। এখানে আর কারো কোন আপত্তি নেই।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে ৫ গ্রামের লোকজন মিলে মাছ চাষ করকে শুরু করেছি। সেই মাছে বিষ প্রয়োগ করে সকল মাছ মেরে ফেলেলে চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের লোকজন। তার পক্ষের লোক আজাদ আলীর নেতৃত্বে শফিকুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, হাসান, সাহার আলী, মাস্টার আল-মামুন, বক্কর সহ অনেকে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে। পরে তারাই আবার সেই মাছ ধরে আড়তে বিক্রয় করে বলে অভিযোগ করেন নতুন করে মাছ মজুদকারীদের মধ্যে রহিদুল ইসলাম, জোনাব আলী, জাহাঙ্গীর আলম, আইনাল আলী, আফসার আলী সহ অনেকে।

এদিকে যে সময় মিমাংশা বৈঠক হওয়ার কথা সে সময় জোঁকা বিল মৎস্য চাষ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকার কারণে উপস্থিত হতে পারিনি। এরপর আর কোন বৈঠক দেননি সভাপতি।
এ ব্যাপারে জোঁকাবিল মৎস্য প্রকল্পের সভাপতি নরদাশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, আমার কোন লোকজন বিলের মাছে বিষ দেয়নি। বিলে আমারই মাছ রাখা আছে। সেই মাছই বিক্রয় করছে আমার লোকজন। আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়। তবে ভাউড় পোড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, আমার চাষকৃত বিলে কেউ ভাউড় তৈরি করলে কেউ রাখবে। তাই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আজকে লোকজনও মাছ ছেড়েছে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত আমার মেয়াদ আছে। মেয়াদ শেষ বললেই হবে না।