শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

বাগমারায় বৃদ্ধি পেয়েছে পাট চাষ, বাতাসে দোলছে পাটের ডোগা

SONALISOMOY.COM
মে ২৮, ২০২১
news-image

শামীম রেজা, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা জুড়ে বিস্তৃর্ণ মাঠে আপন মহিমায় বেড়ে উঠছে পাট (সোনালী আঁশ)। প্রতি বছর উপাজলায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা যে পরিমান পান বরজ তৈরি করা হয়েছে তাতে অনেক পাটখড়ি (শিনট) প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর এই পাটখড়ির চাহিদা স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পাটে পূরণ হয় না। সে জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে পাটখড়ি সংগ্রহ করতে হয় কৃষকদের। এতে অনেক অর্থেরও প্রয়োজন পড়ে। স্থানীয় ভাবে পাট উৎপাদন করলে এক দিকে যেমন অরিরিক্ত দামে পাটখড়ি বাহির থেকে ক্রয় করতে হয় না। অন্যদিকে বিপুল পরিমান অর্থের দরকার পড়ে না। সে কারনে প্রতি বছর পাটের আবাদ বেশি বেশি করে করছেন কৃষকরা। স্থানীয় ভাবে পাট উৎপাদন করতে পারলে অনেক টাকা খরচ করে দূর থেকে পাটখড়ি আমদানী করতে হবে না। একদিকে উচ্চমূল্যে পাট বিক্রয় করতে পারবেন কৃষকরা। আবার নিজের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র পাটখড়ি বিক্রয় করেও অর্থ আয় করতে পারবেন।

এদিকে উপজেলার আবাদকৃত এসব পাট গাছ কেবল দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। পাট ভালো ভাবে পরিপুক্ত হলে প্রায় আট থেকে দশ ফুট লম্বা হবে। সেই পাট কেটে বাছাই করে পানিতে পচানো জন্য রাখতে হয়। পরিমান মতো পাট পচে গেলে সেটাকে পাটখড়ি থেকে আলাদা করতে হয়। এরপর সেই পাট পানিতে পরিস্কার করে ভালোমতো রোদে শুকাতে হয়। সেই শুকানো পাট বাজারে বিক্রয় করতে হয়। পাশাপাশি যে পাটখড়ি আলাদা করা হয় সেটাও সুন্দর করে রোদে শুকাতে হয়। শুকিয়ে গেলে সেটাতে কোন স্থানে ভালো মতো রেখে উপরে আবরন দিয়ে রেখে দিতে হয়। তানা হলে বৃষ্টির পানি পড়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়তে। সেক্ষেত্রে ওই কৃষক আর সেই পাটখড়ি করো কাছে বিক্রয় করতে পারবে না।

এবার শুরুতেই শিলা বৃষ্টির কবলে পড়ে পাট চাষীরা। এতে অনেক পাটের ডোগা ভেঙ্গে গেছে। ছোট থাকতে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা রক্ষা পেয়েছে কৃষকরা। পাট বেড়ে উঠায় আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাওয়া ডোগার স্থানে আবারও ডোগা বের হয়েছে। চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা। তবে শিলা বৃষ্টি না হলে ফলন আরো ভালো হতো বলেও জানান তারা। উপজেলার কমবেশি সব ইউনিয়নেই পাটের আবাদ হয়ে থাকে। ১৬ ইউনিয়ন আর ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বাগমারা উপজেলা। তবে পূর্ব বাগমারা অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় সেখানে পাটের আবাদ কিছুটা বেশি হয় থাকে। পাটের বাজার মূল্য অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভাল একটা লাভ পাবেন বলে আশা করছেন।

পাট চাষী সূত্রে জানা গেছে, পাটের বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময় মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতিটি জমিতে পাটের গাছ প্রায় দুই-তিন হাত লম্বা হয়েছে। বর্তামনে পাট ক্ষেতে চাষীরা শেষবারের মত নিড়ানী বা বাছাই কাজ করছেন। এতে করে পাট ক্ষেত থেকে ছোট পাট এবং আগাছা তুলে ফেলা হবে। কেবল যে গুলো ভালো সেগুলো রেখে। বর্ষার মৌসুম আসার আগেই পাট গাছ অনেক বড় হয়ে ওঠবে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সময় কৃষক পাট কাটা শুরু করে এবং ওই পানিতে জাগ(পচনী) দেয়।

উপজেলার গনিপুর, শুভডাঙ্গা, কাচরী কোয়ালীপাড়া, বাসুপাড়া সহ কয়েকটি ইউনিয়নের পাটচাষী সামসুদ্দীন, আজাহার আলী, সাইদুর রহমান, মাহাবুর রহমান সহ বেশ কয়েক জন পাট চাষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ বাবদ বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা ও আনুসাঙ্গিক খরচ সহ রোদে শুকিয়ে তা ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মত খরচ হয়। এ বছর তারা দুই জাতের পাটের আবাদ করেছেন। কৃষকদের মধ্যে কয়েক জনকে উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে পাট বীজ সহ বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

এই এলাকায় পাটের হাট হিসাবে তাহেরপুর হাট, হাট-গাঙ্গোপাড়া এবং পার্শবর্তী মোহনপুর উপজেলার কেশর হাট সর্বাধিক পরিচিত। সেখানে দূরদূরান্ত থেকে বেপারীরা এসে পাট ক্রয় করেন। এলাকার পাট চাষীদের মতে, তারা ধানের মত পাটের বাজারও সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন । এ ক্ষেত্রে তারা সরকারি ভাবে পাটের দাম নির্ধারন ও পাট ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহনের দাবীও জানান। বর্তমানে পলিথিন যে ভাবে মহামারী আকার ধারন করছে এবং যত্রতত্র ভাবে পলিথিনির ব্যবহার বাড়তে থাকায় পরিবেশ ক্রমশই বিষময় হয়ে ওঠছে। এ থেকে রক্ষা পেতে পাটের বহুমূখী ব্যবহার করতে হবে সবাইকে। পাট ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুর রহমান বলেন, বাগমারা একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। এখানে সকল প্রকার ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। পাট একটি পরিবেশ বান্ধব এবং অর্থকারী ফসল। বাগামারা ও আশেপাশের এলাকায় পাটের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান পাটের যে বাজার দরে তাতে পাট চাষ করে কৃষকের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম।