শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

অভিন্ন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের সঙ্গী চীন

SONALISOMOY.COM
অক্টোবর ১, ২০২১
news-image

অভিন্ন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের সঙ্গী চীনপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ধারাবাহিক সংগ্রাম ও কমিউনিস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালে জন্ম হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের। শান্তির প্রত্যাশায় এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয় বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নজির স্থাপন করেছে সিপিসি। বর্তমানে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অসাধারণ নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে দেশটি। চলতি বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন পালন করছে প্রতিষ্ঠার ৭২তম বর্ষ। কেবল নিজের দেশ গঠনই নয়, স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে এই দীর্ঘ যাত্রায় সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে চীন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এই তালিকায় শুরুর দিকে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

হুবহু মিল না থাকলেও সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাসে যেন একই সরলরেখায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ ও চীন। অভিন্ন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের সঙ্গী চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীনের মহান জাতীয় পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন বাংলাদেশের “সোনার বাংলা” স্বপ্নের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। চলতি বছর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই দু’দেশকে আরো ঘনিষ্ঠ করেছে। দু’দেশই সব ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে মহামারীসৃষ্ট সব দুর্যোগ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশ তার ৭০তম স্বাধীনতাবার্ষিকীতে একটি পুরোপুরি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। ফলে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দুই দেশের সামনে আরো অনেক অবারিত সুযোগ এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আসুন, আমরা চীন ও বাংলাদেশ একে অপরের হাতকে শক্তভাবে ধরে রাখি। একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ এশিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং মানবজাতির একটি উজ্জ্বল অভিন্ন ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করতে এই বন্ধুত্ব জোরদার ​খুবই প্রয়োজন ।

বাংলাদেশ ও চীনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শুরুটা অনেক আগেই হয়েছে। ১৯৫২ সালে চীনের রাজধানী বেইজিং সফরের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে তা আরোও বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই চীন সফর করেন। এরপর ২০১৬ সালে ঢাকা সফর করেন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেক দফা বেইজিং সফর করেন। পরে চলতি বছরের ১৭ই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের সূচনা আমাদের আগের প্রজন্মের নেতারা করে গেছেন- তা আমরা অবশ্যই স্মরণ করব এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেপথ আরও সুগম করে যাব।

এরই মধ্যে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে চীনে নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল উপহার দিয়েছে বেইজিং। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭২তম দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও চীনা জনগণকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, চলতি বছর চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার ১০০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সব মিলিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বিশ্বস্ত মনে করে বাংলাদেশকে। এই সম্পর্ক মাইলফলক স্পর্শ করেছে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে। পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও কর্ণফুলী ট্যানেলসহ বাংলাদেশে অব্যাহত চীনা কারিগরি সহায়তা এবং চীনের অর্থায়নে চলছে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ।

এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম আপ টাইম সার্টিফাইড ডেটা সেন্টার নির্মাণ, সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি মৈত্রী সেতু। এছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে চীনের তৈরি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না এক্সিবিশন সেন্টার। এরপরও কমেনি পারস্পরিক সহযোগিতা। ২০২০ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সফর করে চীনের একদল অভিজ্ঞ চিকিৎসক। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই টিকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে হাজির হয় তারা। এসময় পাশে দাঁড়ায় আরও বিভিন্ন চীনা সংস্থা। মহামারীর সংকট কাটিয়ে উঠতে এই সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও পূর্ণতা পায় গেল আগস্টে বাংলাদেশে করোনা টিকা উৎপাদনের সমঝোতা স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। বিশ্বাস ও সহযোগিতার এই সম্পর্ক আগামীতে আরও গতি পাবে এই প্রত্যাশা দুই দেশের মানুষের।

এদিকে, ২০২১ সাল চীনের শতবর্ষী জাতীয় পুনরুজ্জীবনের সংগামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর, আর বাংলাদেশের জন্য মহামারীসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের পথে চলার তাৎপর্যপূর্ণ বছর এবং সারা বিশ্বের জন্য প্রাচ্যমুখী হওয়ার এক অপরিহার্য বছর । চীনের শতবর্ষী লক্ষ্যমাত্রা ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটির ঘুরে দাঁড়ানো, সমৃদ্ধি অর্জন এবং শক্তিশালী হওয়ার তিনটি ধাপে রূপান্তর লাভ করেছে। ২০১৭ সালে সিপিসি চীনের জাতীয় পুনরুজ্জীবনের একটি পরিকল্পনাকে তার সনদে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তা করা হয়েছে দু’টি শতবর্ষের লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে। গত ১ জুলাই সিপিসি প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রপতি ও সিপিসির সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিং আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন, চীন সঠিক সময়ে তার প্রথম শতবর্ষের লক্ষ্য অর্জন করেছে। একই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, চীনের সফলতা সিপিসির ওপর নির্ভরশীল । চীনা জাতির ১৮১ বছরের আধুনিক ইতিহাস, সিপিসির ১০০ বছরের ইতিহাস, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭২ বছরের ইতিহাস জোরালোভাবে প্রমাণ করে সিপিসি ছাড়া নয়া চীন এবং জাতীয় পুনরুজ্জীবনের কোনোটাই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। চীনের সফলতা এশিয়া মহাদেশের সফলতার প্রতীক।