শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

নৌকার ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যানকে আ’লীগ নেতার সংবর্ধনা

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ৭, ২০২২
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: নৌকা বিরোধী একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ায় তাদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করেও রাজশাহীর বাগমারায় তাদের দমানো যায় নি। এ কারনে গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে উপজেলায়। এ উপজেলায় ১৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১ টিতেই পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। এর পেছনে আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী উস্কানোর অভিযোগ উঠেছে। পদধারী নেতারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় এমন পরিনতির সৃস্টি হয়েছে বাগমারায়। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করা আওয়ামী লীগ নেতাদের চিহ্নিতও করা হয়েছে এরই মধ্যে।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার বিদ্রোহী রেজাউল করিম। নির্বাচিত হওয়ার পরদিনই তাকে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছেন উপজেলার তাহেরপুর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে নৌকার প্রার্থীর বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত হওয়ার একদিন পরেই বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর দফতরে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের পদে থেকেই বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিয়ে নৌকা বিরোধীদের উৎসাহ দিয়েছেন মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তার মত অনেক নেতা বিদ্রোহীদের ভোটের মাঠে ইন্ধন দিয়েছেন। নৌকা বিরোধীকে (বহিস্কৃত) ফুল দিয়ে বরণ করে তার প্রমান দিয়েছেন পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। স্থানীয় নেতারা বলেন, বিদ্রোহী হওয়ায় দল থেকে বহিস্কার করা হয় রেজাউল করিমকে। অথচ নৌকার বিরোধীকে সংবর্ধনা দিয়েছেন পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এটিও দলের শঙ্খলাভঙ্গ বলে মনে করেন নেতারা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, তিনিও এবার নৌকার প্রতীক নিয়ে উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছেন। ভোটের মাঠে বিদ্রোহী নিয়ে তিনিও টেনশনে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনসহ উপজেলার আরও চারটি ইউনিয়নে নৌকার জয় হলেও পরাজিত হয়েছেন ১১ জন। তিনি মনে করেন, নৌকাবিরোধীদের অনেক নেতা ভোটের মাঠে ইন্ধন যুগিয়েছেন। অনেক পদধারী নেতা নৌকাবিরোধীদের পক্ষে কাজ করেছন, টাকা পয়সা খরচও করেছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ নিজেও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক । অথচ ভোটে তিনি নৌকাবিরোধী কাজ করেছেন। তার প্রমাণ ভোটের পর দিনই তিনি বিদ্রোহী চেয়ারম্যানকে ফুলের মালা পরিয়েছেন। তারমত অনেক নেতার কারসাজির কারণেই বেশীরভাগ নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে উপজেলায়।

স্থানীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায় ছাড়াও উপজেলার গুটিকয়েট নেতার অন্তর্দ্বন্দ্বে হেরে গেছে আওয়ামী লীগের ১১ প্রার্থী। স্থানীয় সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনে উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের জন্য নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন অর্ধশত নেতা। তাদের মধ্য থেকে নতুন পুরাতন মিলে ১৬ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। সেখানেও অভিযোগ তুলা হয় ২টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। পরে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবে দুই জনকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়।

দলীয় হটকারী সিদ্ধান্তের কারনে উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা ধরা খেয়েছে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীর কাছে। দলীয় প্রার্থীর এমন পরাজয়ের মূল কারণ নৌকার মনোনয়নে একাধিক প্রার্থী থাকা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে ভোট করা।

এ উপজেলায় নৌকার ভরাডুবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সাবেক সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, এই ফলাফল দলের জন্য শুভ নয়। স্থানীয় নেতারা প্রার্থী মনোনয়নে অনিয়ম করেছেন এবং দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে বসার কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন নেতা বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরাসরি নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা বিদ্রোহী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

উপজেলার হামিরকুৎসা ইউপিতে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সানোয়ারা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দলীয় কোনো নেতাকে তিনি পাশে পাননি। দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। দলীয় নেতাদের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। দলের নেতারাই তার পরাজয়ের জন্য দায়ী বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিজয়ের সংখ্যার ওপর সার্থকতা নির্ভর করে না। তবে তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়নে কিছুটা ত্রুটি হয়ত ছিল।

প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি জেলার বাগমারায় ১৬ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ১১ টি ইউনিয়নেই পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। মাত্র ৫ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীতরা নির্বাচিত হন। উপজেলা নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দলের ভেতরের বিদ্রোহীকেই দায়ি করা হচ্ছে।