শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বন্ধুত্বের টানে বাংলাদেশে ব্রাজিল কন্যা

SONALISOMOY.COM
এপ্রিল ৫, ২০১৭
news-image

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

এ দেশে এসেই ইলিশ মাছ পছন্দ করে ফেলেছেন সিলভা। তবে মাছের কাঁটা বাছতে পারছেন না। বেছে দিলে বেশ আনন্দ নিয়ে খাচ্ছেন। এ ছাড়া খাচ্ছেন পোলাও, মুরগি। এমনই বাঙালি আদর-আপ্যায়ন রয়েছেন ব্রাজিলের তরুণী জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা (২৯)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধু সঞ্জয় ঘোষের বাড়িতে ছুটে এসেছেন তিনি।

সঞ্জয়ের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকায়। তাঁর বাবার নাম বলাই ঘোষ। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সঞ্জয় (২৮)। তিনি শ্যামলী পরিবহনের ঢাকা-কলকাতা সার্ভিসের কর্মী। সিলভা ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা। সেখানে সরকারি চাকরি করেন। গত সোমবার রাতে তিনি সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে ওঠেন। এদিকে ব্রাজিলের এই তরুণী আসার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে একনজর দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক সাধারণ মানুষ। তাদের কৌতূহল ও আগ্রহের সীমা নেই তরুণীকে ঘিরে।

সঞ্জয়ের মা মুক্তি রানি ঘোষ বলেন, সিলভা ভারী খাবারের চেয়ে ফলমূল খেতে বেশি পছন্দ করে। সোমবার রাতে আসার পর চা ও নুডলস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গতকাল সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে ওঠে। সকালে তাঁকে রুটি, জেলি, শসা ও কলা খেতে দেওয়া হয়। দুপুরে খায় পোলাও, মুরগি ও ইলিশ। ইলিশ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মাছের কাঁটা বেছে দিতে হয়। আর তরকারিতে ঝাল একদমই খেতে পারে না। তাঁর জন্য বিশেষভাবে রান্না করতে হয়েছে। রাতেও নুডলস ও চা খাওয়ার পর গোসল করে ঘুমিয়েছে।

পরিচয় হলো কীভাবে? প্রশ্ন করা হলে হাসিমুখে সঞ্জয় ঘোষ জানান, তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন। প্রায় দেড় বছর আগে সিলভা তাঁকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। শুরুতে মাঝেমধ্যে তাঁদের চ্যাটিং হতো। সিলভা ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে পারে। তবে চ্যাটিংয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কয়েক মাস পরে চ্যাটিং বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে তরুণীটি তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য বাংলাদেশে আসতে চান। অবশেষে গত সোমবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে সিলভা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে আগে থেকেই সঞ্জয় উপস্থিত ছিলেন। এরপর একটু ঘোরাঘুরির পর রাত নয়টার দিকে তাঁরা জামালপুরের বাড়িতে আসেন।

সঞ্জয় বলেন, সিলভা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু এতটা পথ আসার পরেও বিশ্রাম নেওয়ার তেমন কোনো সুযোগ পাননি। বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোও তাঁর দেখার ইচ্ছে। সব মিলিয়ে কয়েক দিন ঘোরাঘুরি করে সিলভা ব্রাজিলে ফিরে যাবেন। ব্রাজিল যাওয়ার পর তাঁর মা-বাবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আবারও আসতে পারেন। তবে বাড়িতে এত লোকের সমাগম না হলে সিলভাকে আরও কিছুদিন রাখতে পারতেন বলে জানান তিনি।

সিলভা এ দেশে সঞ্জয়ের বাড়িতে আসার পর থেকেই এলাকাজুড়ে গুঞ্জন, তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা বিয়ে করছেন। তবে সঞ্জয়ের বাবা এ গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি দুজনকে শুধু বন্ধু বলে উল্লেখ করেছেন। অপর দিকে সঞ্জয় জানিয়েছেন, বিয়ের বিষয়টি নির্ভর করছে সিলভার ইচ্ছার ওপর।

এ বিষয়ে সঞ্জয় বলেন, ‘এটা সিলভার ওপর নির্ভর করছে। ও (সিলভা) আমাকে বিয়ে করতে চাইলে আমার দিক থেকে আপত্তি নেই। অনেকেই বিয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেছে। তবে সে দেশে ফিরে যাওয়ার পর তাঁর মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
সঞ্জয়ের বাবা বলাই ঘোষ বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বের টানে মেয়েটি এ দেশে এসেছে। তাদের মধ্যে বিয়ে-শাদির বিষয়ে কোনো কথা চূড়ান্ত হয়নি।’

বাংলাদেশে এসে দারুণ খুশি জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা। তিনি বলেন, ‘সঞ্জয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাঁকে খুব ভালো লেগে যায়। বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষ সম্পর্কে জানার পর এখানে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এ দেশটি খুব সুন্দর।’

সিলভা বলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশে আসলাম। সঞ্জয়ের বাড়ির সদস্যরা খুব ভালো ও মিশুক। তাঁদের সঙ্গে দারুণ সময়ে কাটছে। তাঁদের আচরণ মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। এই দেশ ও দেশের মানুষ সবাই খুব ভালো। সব মিলিয়ে চমৎকার এক অনুভূতি।’
আজ সঞ্জয় ও জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। বন্ধুত্বের টানে মেয়েটি বালিয়াকান্দিতে এসেছেন।